গুরুতর অসুস্থ হয়ে ‘জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াই’য়ে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী ডেমিয়েন মার্টিন

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ডেমিয়েন মার্টিনডেমিয়েন মার্টিনের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল

মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে কুইন্সল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ব্যাটসম্যান ডেমিয়েন মার্টিন। ৫৪ বছর বয়সী মার্টিন ‘বক্সিং ডে’তে (বড়দিনের পরের দিন) অসুস্থ হয়ে পড়েন।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁর শারীরিক অবস্থার খবর প্রকাশ্যে আসে এবং ইএসপিএনক্রিকইনফোকে তাঁর অসুস্থতার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। বর্তমানে কৃত্রিমভাবে তাঁকে কোমায় (চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ওষুধের মাধ্যমে রোগীকে ইচ্ছাকৃতভাবে অচেতন রাখা) রাখা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘চ্যানেল নাইন’ জানিয়েছে, বক্সিং ডেতে বাড়িতে বিশ্রাম নিতে শুয়ে পড়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন ৫৪ বছর বয়সী মার্টিন। পরে দ্রুত তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর ধরা পড়ে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন মার্টিন।

অস্ট্রেলিয়ার সাবেক রুলস ফুটবল খেলোয়াড় ব্র্যাড হার্ডি গত মঙ্গলবার তাঁর ‘৬পিআর’ রেডিও অনুষ্ঠানে মার্টিনের অসুস্থতার খবরটি প্রকাশ করেন, ‘ডেমিয়েন মার্টিন, ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার চ্যাম্পিয়ন, অসাধারণ ব্যাটসম্যান...দুর্ভাগ্যজনকভাবে বক্সিং ডেতে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কুইন্সল্যান্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখন তিনি জীবনের সবচেয়ে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি...আশা করি তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কারণ, অবস্থা সত্যিই গুরুতর।’

খেলোয়াড়ি জীবনে অসাধারণ এক স্ট্রোকমেকার ছিলেন মার্টিন
এএফপি

মার্টিনের কাছের বন্ধু এবং একসময় অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে তাঁর সতীর্থ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ‘নিউজ কর্প’কে বলেন, ‘সে সেরা চিকিৎসা পাচ্ছে এবং (মার্টিনের সঙ্গী) আমান্ডা ও তার পরিবার জানে অনেক মানুষ প্রার্থনা করছে।’

আরও পড়ুন

ক্রিকেট–সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে জানিয়েছে, মার্টিন মেনিনজাইটিসের চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ রোগ মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা সুরক্ষামূলক ঝিল্লির প্রদাহ। সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্কে ফোলাভাব সৃষ্টি করতে পারে। কুইন্সল্যান্ডের গোল্ড কোস্ট হাসপাতালের মুখপাত্র আজ সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে বলেন, ‘ডেমিয়েন মার্টিন এখন গোল্ড কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে গুরুতর অবস্থায় আছেন।’

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৬৭ টেস্টে ৪৬.৩৭ গড়ে ১৩ সেঞ্চুরি, ২৩ ফিফটিসহ ৪৪০৬ রান করেন মার্টিন। ২০৮ ওয়ানডেতে ৪০.৮০ গড়ে ৫ সেঞ্চুরি, ৩৭ ফিফটিসহ তাঁর রান ৫৩৪৬। ৪টি টি-টোয়েন্টিতে ১৬২.১৬ স্ট্রাইক রেটে ১২০ রান করেছেন মার্টিন। অস্ট্রেলিয়ার দুই কিংবদন্তি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ ও রিকি পন্টিংয়ের দলে অপরিহার্য সদস্য হয়ে উঠেছিলেন। জিতেছেন ১৯৯৯ ও ২০০৩ বিশ্বকাপ এবং ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

আরও পড়ুন

তবে মার্টিনকে ক্রিকেটভক্তরা সম্ভবত এসব সংখ্যা ও সাফল্যের চেয়ে তাঁর নজরকাড়া ব্যাটিংয়ের জন্য বেশি মনে রেখেছেন। ক্রিজে সেট হয়ে গেলে তাঁর ব্যাটিং দেখে মনে হতো এর চেয়ে সহজ কাজ পৃথিবীতে আর নেই! ‘ক্ল্যাসিক্যাল’ টেকনিক ও ঈর্ষণীয় টাইমিংয়ের মিশেলে অসাধারণ এক স্ট্রোকমেকার। তাঁর কাভার ড্রাইভ ও স্কয়ার কাট অনেক উঠতি ব্যাটসম্যানের জন্য রেফারেন্স পয়েন্ট।

১৯৯২ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক। ১৯৯৪ সালে সিডনি টেস্টে খেলার পর ছয় বছর অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট দলের বাইরে ছিলেন। এর মধ্যে ওয়ানডে খেলেছেন। ২০০০ সালে টেস্ট দলে ফেরার পর অস্ট্রেলিয়ার সেই সর্বজয়ী দলের অন্যতম সদস্য হয়ে ওঠেন।

২০০৩ বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে অধিনায়ক পন্টিংয়ের সঙ্গে ২৩৪ রানের জুটিতে মার্টিনের ৮৮ রানের ইনিংস এখনো অনেকের কাছে স্মরণীয়। ২০০৬-০৭ অ্যাশেজ চলাকালীন সবাইকে অবাক করে দিয়ে অবসর ঘোষণা করেন মার্টিন। অবসর নেওয়ার পর কিছুদিন ধারাভাষ্যও দিয়েছেন।