সিলেটে প্রথম টেস্টে ১৭১ রান করেছেন বাংলাদেশের ওপেনার মাহমুদুল হাসান। তবে এই ইনিংসটি তাঁকে টেস্টে বাংলাদেশের শীর্ষ ১০ ইনিংসে জায়গা করে দিতে পারেনি। মাহমুদুল আছেন ১১ নম্বরে। বাংলাদেশের ২৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসের শীর্ষ ১০ ইনিংস খেলেছেন কারা—
২০২২ সালের ২৩ মে। মিরপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনের ষষ্ঠ ওভারে মুশফিক যখন ব্যাটিংয়ে নামলেন, ১৬ রানে বাংলাদেশের নেই ৩ উইকেট। পরের ওভারেই স্কোরটা হয়ে যায় ২৪/৫।
সেই ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে লিটন দাসকে নিয়ে গৌরবের সৌধ গড়লেন মুশফিক। সেদিন আর উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। পরের দিন লিটনের (১৪১) বিদায়ে যখন ভাঙল জুটি, বাংলাদেশের রান ২৯৬। ৩৫৫ বলে ১৭৫ রান করা মুশফিককে আউট করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসে ৩৬৫ রান করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হারে ১০ উইকেটে।
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২১৪ বলে ১৭৬ রান করেন মুমিনুল। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যোগ করেন ২৩৬ রান।
পরে দ্বিতীয় ইনিংসেও ১০৫ রান করে ইতিহাস গড়েন মুমিনুল। বাংলাদেশ পেয়ে যায় প্রথম জোড়া সেঞ্চুরিয়ানকে। পরে দুবার যে কীর্তি গড়েছেন নাজমুল হোসেন।
২০১৩ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মুমিনুল হক যখন ক্রিজে এলেন, ৮ রানে ২ উইকেট নেই বাংলাদেশের। সেই মুমিনুল ১৮১ রান করে যখন ফিরলেন, বাংলাদেশের স্কোর তখন ৫ উইকেটে ৩০১।
বাংলাদেশ এরপর আরও ২০০ রান যোগ করে। ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ড্র হয়। টেস্টে মুমিনুলের এটিই ছিল প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর আরও ১২টি সেঞ্চুরি করেছেন, বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি তাঁরই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে আক্ষেপের গল্পই হয়ে আছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। টেস্ট ক্রিকেটে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হতে পারেননি অল্পের জন্যই।
২০১৩ সালে গল টেস্টের চতুর্থ দিনটা আশরাফুল শুরু করেন ১৮৯ রানে। ১ রান যোগ করেই দিনের শুরুতে বুনো এক শট খেলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে সুযোগ নষ্ট করেন আশরাফুল। ওই দিনই বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান হয়ে যান মুশফিকুর রহিম।
২০২৪, রাওয়ালপিন্ডি, প্রথম টেস্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেললেন মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে করল ৫৬৫ রান। ১১৭ রানের লিড নেওয়া বাংলাদেশ ম্যাচটি জেতে ১০ উইকেট। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে বাংলাদেশের এটিই ছিল প্রথম জয়।
২০১৩ সালের ১১ মার্চ। গল টেস্টের চতুর্থ দিনটা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান পাওয়ার আবাহন নিয়ে। কিন্তু ১৮৯ রান নিয়ে দিন শুরু করা মোহাম্মদ আশরাফুল ফিরে গেলেন ১ রান যোগ করেই। আর প্রথম হয়ে গেলেন ১৫২ রান নিয়ে দিন শুরু করা মুশফিকুর রহিম।
বাংলাদেশের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিয়ান ৪৩৭ বলে ঠিক ২০০ রানই করেছিলেন। টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ও শেষবার ৬০০ রানের দেখাও বাংলাদেশ পায় সেই ইনিংসে। ম্যাচটি ড্র হয়।
২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের রেকর্ড ২১৯ রান করেছিলেন মুশফিক। দেড় বছর পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশে পরের টেস্টেই ২০৩ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। সে ম্যাচটিও ছিল মিরপুরে।
মুশফিক মুমিনুলকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেছিলেন ২২২ রান। ৫৬০ রানে ইনিংস ঘোষণা করা বাংলাদেশ ম্যাচটি জেতে ইনিংস ব্যবধানে।
খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ দিনে ইনিংস হারের শঙ্কা নিয়েই দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকে ইনিংস শুরু করা দলটি দিনটি শেষ করে বিনা উইকেটে ২৭৩ রান তুলে। পরের দিন ইমরুল কায়েসের বিদায়ে ভাঙে তামিম-ইমরুলের ৩১২ রানের জুটি। টেস্টে দলের দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে যা সর্বোচ্চ রান।
তামিম ফেরেন দলকে ৩৯৯ রানে রেখে ২০৬ রান করে। ২৭৮ বলের ইনিংসে ৭টি ছক্কা মেরেছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। যা এখনো বাংলাদেশের রেকর্ড এই সংস্করণে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৫৫৫ রান তুলে ম্যাচটি বাঁচিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
২০১৭ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম দিনে সাকিব আল হাসান যখন ব্যাটিংয়ে নামেন, তখন বাংলাদেশের স্কোর ১৪৫/৩। ১৫ রান পর মুমিনুল হক আউট হয়ে গেলে এরপর মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে ৩৫৯ রান যোগ করেন সাকিব। যা এখনো টেস্টে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশর সর্বোচ্চ জুটি।
২৭৬ বলে ৩১ চারে সে সময়ের বাংলাদেশের রেকর্ড ২১৭ রান করেন সাকিব। রেকর্ডটা টিকে ছিল ২২ মাস। প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ তুলে ইনিংস ঘোষণা করা ম্যাচটি বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত হেরে যায় ৭ উইকেটে।
২০১৮, মিরপুর। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ শুরু হতে না হতেই বাংলাদেশ ২৬/৩। পরিস্থিতি যখন এমন, ১২তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিকুর রহিম।
এরপর আরও ১৪৮ ওভার ব্যাট করে মুশফিক যখন অপরাজিত থেকে ড্রেসিংরুমে ফিরলেন, তাঁর নামের পাশে ২১৯ রান, টেস্টে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ।
৯ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ব্যাটিং করা মুশফিক মুমিনুল হককে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ২৬৬ রান। ৫২২ রানে ইনিংস ঘোষণা করা বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২১৮ রানে জিতে সিরিজে ড্র করে।