ভারত কি ভুলে গিয়েছিল এটা আইপিএল নয়, আন্তর্জাতিক ম্যাচ—প্রশ্ন অশ্বিনের
এক ম্যাচ হাতে রেখেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে ভারত। মুম্বাইয়ে আজ শেষ ম্যাচটা তাই নিছক আনুষ্ঠানিকতার। সিরিজ নিয়ে উত্তেজনা মিইয়ে গেলেও একটা বিতর্কের রেশ এখনো কাটেনি। কোন বিতর্কের কথা বলা হচ্ছে, নিশ্চয়ই বুঝেছেন!
পরশু রাতে পুনেতে যে ম্যাচ জিতে সিরিজ মুঠোয় পুরেছে ভারত, সেই ম্যাচে তারা ১২ জন নিয়ে খেলেছে বলে দাবি করেছে ইংল্যান্ড। সফরকারী দলের এমন দাবিকে রবিচন্দ্রন অশ্বিনও সঠিক মনে করছেন। ভারতের সাবেক স্পিনার বলেছেন, ভারতীয় দল ভুলেই গিয়েছিল এটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, আইপিএল নয় যে চাইলেই ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার খেলাতে পারবে। এ ঘটনায় ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রেফারি ও আম্পায়ারদেরও দুষেছেন অশ্বিন।
আইসিসির কনকাশন বদলির নিয়ম অনুযায়ী, মাথায় আঘাত পাওয়া কারও পরিবর্তে যাঁকে নেওয়া হবে, সেই খেলোয়াড়ের ভূমিকাও আঘাত পাওয়া খেলোয়াড়ের মতো হতে হবে। এই বদলিতে দল যেন অতিরিক্ত সুবিধা না পায়, সেই বিষয়ের কথাও নিয়মে উল্লেখ আছে।
কিন্তু সেদিনের ম্যাচে ভারতের ইনিংসের শেষ দিকে ব্যাটিং অলরাউন্ডার শিবম দুবের হেলমেটে বল লাগলে সতকর্তা হিসেবে তাঁকে বিশ্রামে রাখা হয়। দুবের পরিবর্তে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় হর্ষিত রানার, যিনি একজন ফাস্ট বোলার।
দুবে মাঠ ছাড়ার আগে ব্যাট হাতে ৫৩ রান করেন। পরে তাঁর জায়গায় বোলিং করতে নেমে হর্ষিত নেন ৩ উইকেট, যা ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিতে বড় ভূমিকা রাখে। দুজন ভিন্ন ধরনের ক্রিকেটার হলেও ম্যাচ রেফারি জাভাগাল শ্রীনাথ দুবের বদলি হিসেবে হর্ষিতকে খেলানোর অনুমতি দেন।
এ ঘটনায় ইংল্যান্ডের তিন সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন, অ্যালিস্টার কুক ও কেভিন পিটারসেন বেজায় চটেছেন।
অশ্বিনও তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে বিতর্কিত এই ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ম্যাচ শেষ। ভারত ঘরের মাঠে আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতেছে। কিন্তু এই ম্যাচটি যেন আইপিএলের প্রতিরূপ। সেখানে সুপারসাব ছিল এবং একজন ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার খেলানো হয়েছিল।’
অশ্বিন আরও বলেন, ‘মূল আলোচনাটা হলো হর্ষিত রানা কীভাবে শিবম দুবের কনকাশন বদলি হিসেবে খেলতে নামল। আমরা কি ভুলে গিয়েছিলাম এটা একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল, আইপিএল ম্যাচ নয়? আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি। অতীতেও এমন হয়েছে। ক্যানবেরায় রবীন্দ্র জাদেজা মাথায় আঘাত পেয়েছিল। তার জায়গায় যুজবেন্দ্র চাহাল খেলেছিল। সেই বার অন্তত একজন স্পিনারের পরিবর্তে স্পিনার খেলতে নেমেছিল।’
দুবের বদলি হিসেবে রমনদীপ সিংকে নামালে কোনো বিতর্ক তৈরি হতো না বলে মত ৩৮ বছর বয়সী অশ্বিনের, ‘স্কোয়াডে যদি একই ভূমিকার দুজন খেলোয়াড় না থাকত, তাহলে না হয় বলা যেত হর্ষিত রানা কিছুটা ব্যাট পারে এবং শিবম দুবে কিছুটা বল পারে, তাই একজনের পরিবর্তে আরেকজনকে খেলানো হলো। কিন্তু স্কোয়াডে রমনদীপ সিং ছিল। তার ভূমিকা ও দুবের ভূমিকা এক। অথচ রমনদীপ বাইরে (ডাগআউটে) বসে ছিল।’
পুনেতে ভারত-ইংল্যান্ড চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মাঠের আম্পায়ার ছিলেন জয়রমন মদনগোপাল ও নিতিন মেনন। টিভি আম্পায়ার ছিলেন বীরেন্দর শর্মা। আর ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেছেন জাভাগাল শ্রীনাথ। এই চারজনই ভারতীয়। দুবের বদলি হিসেবে হর্ষিতকে খেলতে দেওয়ার অনুমতি তাঁরাই দিয়েছেন, যেটিকে পুরোপুরি ক্রিকেটীয় ভুল মনে করছেন অশ্বিন, ‘এটা পুরোপুরি ক্রিকেটীয় ভুল। ভুলটা আংশিকভাবে আম্পায়ার ও আংশিকভাবে ম্যাচ রেফারির। আমি মনে করি দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বিষয়টির দিকে নজর দেওয়া উচিত।’
ভারতের ‘১২ খেলোয়াড়’ খেলানো নিয়ে আজও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছেন কেভিন পিটারসেন। ম্যাচ রেফারি শ্রীনাথকে উদ্দেশ্য করে এক্সে তিনি লিখেছেন, ‘এটা কোনোভাবেই একই ধরনের (লাইক ফর লাইক) বদলি ছিল না। ম্যাচ রেফারির স্বীকার করা উচিত যে তিনি ভুল করেছেন। এটা ক্রিকেটের ভালোর জন্যই বলছি। আজ সন্ধ্যায় আমরা আরেকটি দুর্দান্ত লড়াই দেখতে চলেছি।’