জন্মদিনে মোস্তাফিজের ক্যারিয়ারের সেরা ১০ মুহূর্ত

শুভ জন্মদিন, মোস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই পেসারের ৩০তম জন্মদিন আজ। ১০ বছর ধরে খেলছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। ক্যারিয়ারে জমেছে কত স্মরণীয় মুহূর্ত! জন্মদিনে সেই মোস্তাফিজের ক্যারিয়ারের সেরা ১০ মুহূর্ত—

আফ্রিদিকে দিয়েই শুরু

আফ্রিদিকে আউট করার পর মোস্তাফিজ।
এএফপি

২৪ এপ্রিল ২০১৫। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম দিন মোস্তাফিজের। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। তবে এই পাকিস্তান ছিল আফ্রিদির পাকিস্তান—‘বুম বুম’ তখনো ভয়ংকর। আর তাঁকেই দিয়ে শুরু! আফ্রিদির উইকেট তুলে নিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম সাফল্য মোস্তাফিজের। পরে মোহাম্মদ হাফিজকেও ফেরান। ৪ ওভারে দেন ২০ রান, নেন ২ উইকেট। ২৪ বলে ১৬টিই ছিল ডট। ১৬ বছর পর পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ।

ধোনির ধাক্কা আর মোস্তাফিজের জবাব

ধোনি–মোস্তাফিজের সেই ধাক্কার ঘটনা এখনো আলোচিত।
ভিডিও থেকে নেওয়া

টি–টোয়েন্টিতে অভিষেকের দুই মাস পর ওয়ানডে অভিষেক। তারিখ ১৮ জুন, ২০১৫। প্রথম ওয়ানডেতেই চোখ রাঙাচ্ছিলেন রোহিত শর্মা আর রাহানেকে আউট করে। কিন্তু অনভিজ্ঞতায় বারবার বল করার পর মাঝপথে দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। রোহিত আম্পায়ারের নজরে আনলেন। ধোনি কিছু না বলে সরাসরি ধাক্কা! ধাক্কা খেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো চিকিৎসার জন্য। ফিরে এসে কিন্তু ভয় দেখালেন ধোনিকেই—আউট করলেন রায়না, অশ্বিন আর জাদেজাকে। অভিষেকেই ৫০ রানে ৫ উইকেট, ম্যাচসেরা মোস্তাফিজ, জিতল বাংলাদেশ।

ভারতকে লন্ডভন্ড

মোস্তাফিজকে চুমু খাচ্ছেন সেই সময়ের বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি।
এএফপি

প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬। দুই ম্যাচে ১১ উইকেট! তৃতীয় ওয়ানডেতে নিলেন আরও ২। প্রথম সিরিজ খেলেই ১৩ উইকেট নিয়ে সিরিজ–সেরা। ভারতের তারকাদের নাকানিচুবানি খাওয়ানোয় মুহূর্তেই আলোচনার কেন্দ্র মোস্তাফিজ।

টেস্টেও চমক

ডি ককের স্টাম্প এভাবেই উড়িয়ে দেন মোস্তাফিজ।
এএফপি

টেস্ট অভিষেকের প্রথম ১৩ ওভারে কোনো উইকেট নেই। মনে হচ্ছিল, খুব তাড়াহুড়ো করে এই সংস্করণে নিয়ে আসা হলো কি না তাঁকে। কিন্তু ১৪তম ওভারেই ম্যাজিক। প্রথম বলে হাশিম আমলা, পরের বলে জেপি ডুমিনি। হ্যাটট্রিক মিস হলেও তৃতীয় বলেই বোল্ড করে দেন ডি কককে। এক ওভারে ৩ উইকেট! ম্যাচটি বৃষ্টিতে ড্র, কিন্তু ম্যাচসেরা মোস্তাফিজ।

বিশ্বমঞ্চে কাটারের জাদু

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে ৫ উইকেট নেন মোস্তাফিজ।
এএফপি

২০১৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ রানে ৫ উইকেট। উইলিয়ামসনসহ চারজন বোল্ড। তিন ম্যাচে ৯ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে সিরিজে ঝড় তোলা কাটার মাস্টার বিশ্বকাপেও আলো ছড়ালেন। সেখান থেকেই আইপিএলে সুযোগ।

আইপিএলে প্রথম শিকার: ডি ভিলিয়ার্স

আইপিএলে মোস্তাফিজের প্রথম প্রথম শিকার ডি ভিলিয়ার্স।
বিসিসিআই

প্রথম আইপিএল ম্যাচ, প্রথম শিকার এবি ডি ভিলিয়ার্স। সঙ্গে শেন ওয়াটসন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট। দলের অন্য পাঁচ বোলার দিচ্ছিলেন ওভারপ্রতি ১২-এর বেশি, মোস্তাফিজ থামালেন ৬.৫০ ইকোনমিতে।

রাসেলকে মাটিতে ফেলে দেওয়া ইয়র্কার

রাসেলকে এভাবে ফেলে দেওয়া, এটাও সম্ভব!
বিসিসিআই

সেই দৃশ্য আজও ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে ভাসে। কলকাতার হয়ে খেলছিলেন সাকিব, হায়দরাবাদের হয়ে মোস্তাফিজ। ম্যাচটা ছিল নীরস, কিন্তু উত্তেজনা দিলেন একাই। দুর্দান্ত ইয়র্কারে আন্দ্রে রাসেল শুধু বোল্ডই নন, পড়ে গেলেন উইকেটের ওপর।

হায়দরাবাদের প্রাণভোমরা

ছবিই বলে দিচ্ছে, মোস্তাফিজই হায়দরাবাদের প্রাণভোমরা।
বিসিসিআই

সেই মৌসুমে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের প্রতিটি জয়ে ছিল মোস্তাফিজের ছাপ। ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট, গড় ২৪.৭৬, ইকোনমি ৬.৯০। শুধু পরিসংখ্যানই নয়, দলের সাফল্যের টার্নিং পয়েন্টগুলোতে ছিলেন তিনি। তাই প্রথম বিদেশি ক্রিকেটার হিসেবে পেলেন আইপিএলের ‘সেরা উদীয়মান’ খেলোয়াড়ের পুরস্কার। আজও ইতিহাসে একমাত্র বিদেশি।

প্রথম বিশ্বকাপে ২০ উইকেট

প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপে মোস্তাফিজ নেন ২০ উইকেট।
এএফপি

ওয়ানডে বিশ্বকাপ অভিষেকও রঙিন। ২০১৯ বিশ্বকাপে ৮ ম্যাচে নিলেন ২০ উইকেট। ভারতের বিপক্ষে ৫, পাকিস্তানের বিপক্ষেও ৫। পুরো আসরে ছিলেন চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড

১০ রানে ৬ উইকেট নেন মোস্তাফিজ।
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট

২০২৪ সালে হিউস্টনে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে মোস্তাফিজ লিখলেন নতুন ইতিহাস। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে কোনো বাংলাদেশি বোলারের ৬ উইকেট ছিল না। তিনি নিয়েছিলেন ৪ ওভারে ১০ রান দিয়ে ৬ উইকেট।