পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া খাজার সঙ্গে ‘বিদ্বেষমূলক’ আচরণ করেছে ভারত
অস্ট্রেলিয়া-ভারতের সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজ নানাভাবেই বিতর্ক ছড়িয়েছে। সেই বিতর্ক ছিল মাঠে, মাঠের বাইরেও। সিরিজের শুরু থেকেই ভারতের উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটারদের মনে সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। সফরের শুরুতেই মাঠের বাইরের একটি ঘটনাও নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করেছিল। অস্ট্রেলিয়া দল কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে ভারতে পৌঁছেছিল। সেখানে অস্ট্রেলিয়া দলের প্রথম বহরের অংশ হতে পারেননি উসমান খাজা। কারণ ভিসা!
অস্ট্রেলীয় দলে উসমান খাজাই একমাত্র ক্রিকেটার, যাঁকে দেরি করে ভিসা দিয়েছিল ভারত। সফরে রওনা হওয়ার প্রায় এক মাস আগেই ভিসার আবেদন করা হয়েছিল। গোটা অস্ট্রেলিয়া দলকে সময়মতো ভিসা দিলেও খাজাকে কেন দেরিতে দেওয়া হলো, সেটির তীব্র সমালোচনা করেছেন ক্রিকেট ইতিহাসবিদ ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সাবেক সদস্য রামচন্দ্র গুহ। তিনি ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খাজাকে দেরিতে ভিসা দেওয়ার ব্যাপারটিকে বলছেন ‘অশুভ ও বিদ্বেষমূলক’। রামচন্দ্র গুহের মতে, খাজার প্রতি এই আচরণের মূল কারণ, তাঁর জন্ম পাকিস্তানে।
মজার ব্যাপার, সেই খাজাই এবারের ভারত সফরে অস্ট্রেলীয় দলের সেরা পারফরমার। রামচন্দ্র গুহ এটিকে ‘প্রকৃতির বিচার’ বলছেন। তিনি মনে করেন, ‘খাজাকে দেরি করে ভিসা দেওয়ার ব্যাপারটি ভারতের সম্মান ক্ষুণ্ন করেছে। সরকারি দল বিজেপি নয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নন, আপনার আর আমার মতো ভারতীয়রা দেখল যে রাষ্ট্র হিসেবে ভারত যেকোনো বিদেশি নাগরিকের ভিসা ইচ্ছা করেই আটকে দিতে পারে। ব্যাপারটিই আমার কাছে অশুভ ও বিদ্বেষমূলক মনে হয়েছে। অথচ এ সফরে খাজা সেঞ্চুরি করেছে, ভালো করেছে, এটাকে আমি প্রকৃতির বিচারই মনে করি।’
উসমান খাজা অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের দ্বৈত নাগরিক। তাঁর জন্ম পাকিস্তানের ইসলামাবাদে। ১৯৯০ সালের দিকে তাঁর পরিবার অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমায়। তবে খাজার পরিবার অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট গ্রহণ করলেও পাকিস্তানি পাসপোর্ট বর্জন করেনি। ভারতের ভিসার জন্য যেকোনো বিদেশি নাগরিককেই পাকিস্তান-সংযোগসংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয়। এমনকি কারও দাদা-দাদি, নানা-নানি পাকিস্তানি নাগরিক হলেও সেটি উল্লেখ করতে হয়। উসমান খাজাকে স্বাভাবিকভাবেই এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। রামচন্দ্র গুহের মতে, ‘উসমান খাজার বিষয়টি মন খারাপ করে দেওয়ার মতোই।’
ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক সব সময়ই বৈরী। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ দুই দেশ চারটি বড় আকারের যুদ্ধে জড়িয়েছে। এরপরও দুই দেশের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্কটা বজায় ছিল। দুই দেশই পরস্পরের মাটিতে টেস্ট সিরিজে অংশ নিয়েছে অনেকবারই। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক কখনোই ভালো জায়গায় পৌঁছায়নি। ২০১২ সালের পর থেকে দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় কোনো সিরিজে অংশ নেয়নি।
রামচন্দ্র গুহ মনে করেন, ‘ক্রিকেটাররা কোনো দেশের সরকারের অধীনস্থ কেউ নন। তাঁরা কোনো দেশের সরকারকেও প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাই পাকিস্তান ক্রিকেট দল যদি ভারতে যায়, সেটি কোনো সমস্যা নয়, ক্রিকেটাররা সন্ত্রাসী নন, পাকিস্তানের উচিত আগামী বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে আসা।’
উসমান খাজা অবশ্য এবারই প্রথম ভিসাসংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হলেন না; এর আগেও দুবার তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। ২০২০ সালে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের ভারত সফরের সময় তাঁর পাসপোর্ট আটকে দেওয়া হয়েছিল। ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগের সময়ই একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন পাকিস্তানে জন্ম নেওয়া এ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান।