জাতীয় ক্রিকেট লিগকে দুই স্তর থেকে আবার এক স্তরে ফিরিয়ে নেওয়ার চিন্তা

বদলে যাচ্ছে জাতীয় লিগের কাঠামোছবি: প্রথম আলো

আট বছর আগে অনেক নতুনত্ব ও আশা জাগিয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগের কাঠামো বদলানো হয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে জাতীয় লিগে আনা হয় দ্বিস্তর পদ্ধতি। আগামী ১০ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া জাতীয় লিগের ২০২৩-২৪ মৌসুম হতে যাচ্ছে ২০১৫-১৬ মৌসুমে শুরু সেই দ্বিস্তর পদ্ধতির জাতীয় লিগের শেষ মৌসুম। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর পুরোনো স্লোগানে আগামী মৌসুম থেকে আরও একবার জাতীয় লিগের কাঠামো বদলের পরিকল্পনা করছে বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটি।

আরও পড়ুন

দ্বিস্তর পদ্ধতি ভেঙে রাউন্ড রবিন লিগে ফিরে যাচ্ছে জাতীয় লিগ। তবে নতুন করে যোগ হচ্ছে ক্রিকেটার ধরে রাখা ও প্লেয়ার্স ড্রাফটের মাধ্যমে দল সাজানোর নিয়ম। বিসিবির টুর্নামেন্ট কমিটি মনে করে, এতে দলগুলোর মধ্যে শক্তির পার্থক্য কমে আসবে, বাড়বে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সঙ্গে যোগ করা হবে আর্থিক অনুপ্রেরণা। বরাবরের মতো টুর্নামেন্টের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা দলের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি থাকবে সবচেয়ে বেশি। পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকা দলের ক্রিকেটারদের ম্যাচ ফি হবে সবচেয়ে কম। কাজেই স্বাভাবিকভাবেই ক্রিকেটাররা পয়েন্ট তালিকার ওপরের দিকে থাকতে ভালো খেলতে চাইবেন।

জাতীয় লিগের নতুন কাঠামো বোর্ডে উপস্থাপন করবে বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটি
ছবি: প্রথম আলো

নতুন এই কাঠামো বিসিবির টেকনিক্যাল কমিটির ক্রিকেট বোর্ডে পেশ করার কথা। অনুমোদন পেলেই আগামী মৌসুম থেকে জাতীয় লিগ হবে রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুই দল নিজেদের মধ্যে ফাইনাল খেলছে। টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীন নতুন কাঠামোয় সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎই দেখছেন, ‘ভালো হবে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ ক্রিকেট হবে। কেউ দল নিয়ে অভিযোগ করতে পারবে না। কারণ, সবাই ড্রাফটের মাধ্যমে দল সাজাবে।’

প্রতিটি দল আগের বছর থেকে আটজন ক্রিকেটার ধরে রাখতে পারবে। সেই আটজনকে বাছাই করা হবে পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে। সেখানে জাতীয় নির্বাচকদেরও একটা মতামত থাকবে। জাতীয় লিগের দলগুলোর নির্বাচন নিয়ে আস্থার অভাবও একটা কারণ। মিনহাজুল যেমন বললেন, ‘বিভাগের কিছু ঝামেলা তো আছেই। তাই ড্রাফটের বাইরে যে আটজন ক্রিকেটার বিভাগ রিটেইন করবে, সেটা আমাদের সামনেই হবে।’

আরও পড়ুন

দ্বিস্তর পদ্ধতি বাদ দেওয়ার আরও একটা কারণ জানালেন নির্বাচক হাবিবুল বাশার। সিলেট বিভাগ ও খুলনা বিভাগের উদাহরণ টেনে তিনি বললেন, ‘সিলেটে দেখা যায় ছয়-সাতজন পেসার আছে। খুলনায় চার-পাঁচজন উইকেটকিপার। আমরা তখন সব পেসারকে খেলার সুযোগ করে দিতে সিলেটের কোনো এক পেসারকে বরিশালে দিয়ে দিই। কিন্তু এতে তো সত্যিকারের ভারসাম্য আসে না। ড্রাফট হলে তা হবে। এটা অনেকটা বিসিএলের মতো হবে।’

জাতীয় লিগ থেকে উঠে যাচ্ছে দ্বিস্তর পদ্ধতি
ছবি: প্রথম আলো

২০১২-১৩ মৌসুমে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) চারটি দল সাজানো হয় ড্রাফটের মাধ্যমে। জাতীয় লিগেও সে আমেজ আনার চেষ্টা টুর্নামেন্ট কমিটির। তবে তাতে জাতীয় লিগ হারাবে আঞ্চলিকতা। হাবিবুল নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে একটু দুঃখ করেই বললেন, ‘তা কিছুটা কমবে। আমাদের সময় আমরা খুলনার হয়ে খেলাটার মধ্যে একটা অন্য রকম আনন্দ পেতাম। ড্রাফট হলে সে আমেজটা কমবে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য এটা বিসর্জন দিতে হচ্ছে।’ আবার এটাও বললেন, ‘আটজন ক্রিকেটার যেহেতু রিটেইন হবে, তাহলে কিছুটা হলেও সেই আঞ্চলিকতা থাকবে।’

টুর্নামেন্ট কমিটির নতুন এই পদ্ধতিতে অবনমন বলে কিছু থাকছে না। দ্বিস্তর পদ্ধতিতে প্রতি মৌসুমে প্রথম স্তরের তলানিতে থাকা দল অবনমিত হয়ে নেমে যায় দ্বিতীয় স্তরে। আর দ্বিতীয় স্তরের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দল উঠে আসে প্রথম স্তরে। জাতীয় লিগের শিরোপাটাও ওঠে প্রথম স্তরের চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে। প্রস্তাবিত রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে তা আর থাকছে না। থাকছে না দ্বিতীয় স্তর থেকে প্রথম স্তরে উঠে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা অর্জনের তাড়নাও। এতে বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ভালো হবে না ক্ষতি, তা সময়ই বলে দেবে।

আরও পড়ুন