তানজিমের আক্ষেপ, ‘যদি একজন ব্যাটসম্যানও দাঁড়িয়ে যেত’
তানজিম হাসানের কণ্ঠে আফসোস, ‘ম্যাচটা যদি শেষ করে আসতে পারতাম...’। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম ছেড়ে যাওয়ার সময় এমন একটা আক্ষেপ হয়তো বাংলাদেশের সব সমর্থকদের ভেতরেই—কোনো একজন ব্যাটসম্যান যদি ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারতেন! ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও যে শেষ দুই ওভারে জয়ের সমীকরণটা নেমে এসেছিল ৩০ রানে।
চট্টগ্রামে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে যা খুব কঠিন কাজও ছিল না। কিন্তু তখন হাতে উইকেট ছিল আর একটি। তবুও সম্ভাবনাটা ছিল শেষ পর্যন্ত। তাসকিন আহমেদের হিট আউট হওয়া বলটাও তো রশির ওপর দিয়ে চলে গিয়েছিল সীমানার ওপারে। তিনি আউট না হলে সমীকরণটা নেমে আসত ২ বলে ১১ রানে। কে জানে, তখন কী হতো!
বাংলাদেশের জন্য কাজটা আসলে কঠিন করে দিয়ে গিয়েছিলেন ওপরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। সেটি ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে বলেছেন তানজিম হাসানও, ‘আপনি যদি দেখেন, শেষের দিকে শিশির থাতায় বল অনেক সহজে ব্যাটে আসছিল। আমার কাছে মনে হয়, যদি একটা সেট ব্যাটসম্যান থাকত, তাহলে খেলাটা সহজ হয়ে যেত। কারণ, শেষ দুই ওভারে ৩০ রান লাগত, একটা ব্যাটসম্যান থাকলে সব সময় এই ম্যাচ হাতের মধ্যে থাকে।’
বাংলাদেশের জন্য ম্যাচটা এত দূর নিয়ে এসেছে আসলে তানজিম হাসানের সঙ্গে নাসুম আহমেদের জুটি। সপ্তম উইকেট জুটিতে ২৩ বলে দুজন মিলে করেছেন ৪০ রান। তবে ম্যাচটা কাছাকাছি আনার তৃপ্তি নয়, ২৭ বলে ৩৩ রান করা তানজিমের কণ্ঠে শোনা গেল না জেতাতে পারার আফসোস। কাল তিনি বলেছেন, ‘আসলে শেষ করতে পারলে খুব ভালো লাগত। কারণ, আমি পুরো সেট ছিলাম, বল অনেক ভালো ব্যাটে লাগছিল। নাসুম ভাইও আমাকে ভালো সাপোর্ট দিচ্ছিলেন, বাউন্ডারি মারছিলেন। মনে হচ্ছিল আমি একটা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে ব্যাটিং করছি।’
তানজিম–নাসুম যখন ব্যাট করছিলেন, তখনো ব্যাটিংয়েই আসেননি রিশাদ হোসেন। তাঁর আফসোসটা বেড়েছে আসলে এ কারণেই। তানজিম শেষ ওভার পর্যন্ত ম্যাচটা টেনে নিয়ে যেতে পারলে রিশাদ এসে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারতেন বলে বিশ্বাস তাঁর।
তবে এসব তো অনেক পরের কথা। এর আগে পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল অনেকটাই। তানজিমও মনে করেন তেমনই, ‘উইকেটগুলো হারিয়েছি পাওয়ারপ্লেতে। তারা যদি সেট হয়ে আউট হতো, আলাদা একটা দৃশ্য হতো। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানই সেট হওয়ার আগেই আউট হয়ে গেছে।’
এরপর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরাও খুব একটা দায়িত্ব নিতে পারেননি। তাঁরা তা পারলে কাজটা বাংলাদেশের জন্য সহজ হতো। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে সেই আফসোসের কথা বলে গেছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক লিটন দাসও। এমনকি ৪ বলে ১ রান করে জেসন হোল্ডারের বলে বোল্ড হয়ে যাওয়া শামীম হোসেনের কথা তিনি বলেছেন আলাদা করেও, ‘আমরা পাওয়ারপ্লেতে অনেক বেশি উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। আমি শামীমের ব্যাটিং নিয়ে অনেক হতাশ। তাকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সব সময় শুধু উপভোগ করে চলে গেলে হবে না। দায়িত্ব নিতে হবে।’
বাংলাদেশকে ১৬৬ রানের লক্ষ্য দিয়েও স্বস্তি ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও। বিরতিতেই রোভম্যান পাওয়েল বলেছিলেন, বাংলাদেশ পাওয়ারপ্লেতে ভালো করলে কাজটা কঠিন হয়ে যাবে তাঁদের জন্য। বাংলাদেশের যখন ৩ উইকেট হাতে রেখে ৪ ওভারে ৪৭ রান দরকার, তখন নাকি ভয় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটারদের মনেও। সেটি ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে পাওয়েলের কণ্ঠেই শুনুন, ‘যদি বাংলাদেশের একজন ব্যাটসম্যানও লম্বা সময় উইকেটে থাকতে পারত, আমরা চাপে পড়ে যেতাম। কারণ, শেষ দিকে অনেক বেশি শিশির পড়ছিল। আমাদের বোলারদের কৃতিত্ব দিতে হবে, তারা পরিকল্পনায় স্থির থেকেছে আর গুরুত্বপূর্ণ সময়ে উইকেট নিয়েছে।’
ব্যাটিংয়ের সময়ও বেশ ভালো ছক কষেই নিজেদের ইনিংসটাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। একসময় পাওয়েলই অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ৮ রানে। সেখান থেকে শেষ ৭ বলের ৪টিতেই ছক্কা মেরে নিজের রান ২৮ বলে করেন ৪৪। কী পরিকল্পনা নিয়ে ব্যাট করেছেন তা জানিয়ে পাওয়েল বলেছেন, ‘আমার জন্য কাজটা ছিল শুরুটা ভালোভাবে করা আর শেষ ৫ ওভারে তা কাজে লাগানো।’
সেই চেষ্টায় সফলও তিনি। অন্যদিকে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ব্যর্থতার গল্প লেখা হয়েছে আরও একবার। বাংলাদেশের প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের চারজনই যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে। ব্যাটসম্যানদের এই সমস্যার ব্যাখ্যা স্বাভাবিকভাবেই ছিল না সংবাদ সম্মেলনে আসা তানজিমের কাছে। তবে তাঁরা কী করতে পারতেন তা জানা আছে তাঁরও, ‘আমি মনে করি আরেকটু দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করার কোনো বিকল্প নেই।’
কাজটা জানা আছে হয়তো ব্যাটসম্যানদেরও। কিন্তু তাঁরা তা কাল করতে পারেননি। পরের দুই ম্যাচে পারবেন তো!