প্রত্যাশার চাপে থাকবে ভারত

এবারের এশিয়া কাপটা দর্শক হিসেবে খুব উপভোগ করেছি। ফাইনালে খেলছে ভারত ও শ্রীলঙ্কা। কিন্তু দুটি দলের মধ্যে কেউই চূড়ান্ত আধিপত্য দেখিয়ে ফাইনালে আসেনি। একচেটিয়া দাপট বলতে আমরা যা দেখি, সেটা দেখিনি। তাই আজকের ফাইনালে কে পরিষ্কার ফেবারিট, তা বলা একটু কঠিনই।

ভারত তুলনামূলকভাবে ভালো খেলেছে। কিন্তু একপেশে দাপট দেখাতে পারেনি। কাগুজে সম্ভাবনায় তবু ভারত এগিয়ে। অনেক বড় নাম আছে ওদের, সব ঠিক আছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা? তারাও তো দলগতভাবে খুব ভালো খেলে। জেতার ক্ষুধা ও প্রবল ইচ্ছা আছে, তাদেরও ফেলে দেওয়া যায় না। দুই ধরনের দর্শনের দুটি দলের মধ্যে এশিয়া কাপের ফাইনাল হচ্ছে, পুরো টুর্নামেন্টের মতো শেষের এই লড়াইও নিশ্চয়ই উপভোগ্য হবে।

আরও পড়ুন

স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কথাটা আলাদা করে বলতেই হয়। এই দলটা সম্প্রতি দারুণ খেলছে। কিছুদিন আগেই তাদের বাছাইপর্ব খেলে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে হয়েছে। কিন্তু সেই দল এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছে। ভারতের বিপক্ষে খুব ভালো খেলার পর বাংলাদেশকে হারিয়েছে দুবার। সেদিক থেকে শ্রীলঙ্কা তুলনামূলক কম চাপে থাকবে, ভারতের ওপর বরাবরের মতোই প্রত্যাশার চাপ বেশি থাকবে।

বাংলাদেশের বিপক্ষে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে হারের কারণে ভারত নিশ্চয়ই মানসিকভাবে আগের জায়গায় থাকবে না। শ্রীলঙ্কার কন্ডিশনে ভারতকে হারানো সম্ভব, বাংলাদেশের ম্যাচ থেকে এই বার্তা নিশ্চয়ই লঙ্কানরাও পেয়েছে। খুব সম্ভবত একই ধরনের উইকেটেই ফাইনাল খেলাটা হবে।

সুপার ফোরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে ভারত
ছবি: এএফপি

উইকেট যদি ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ না হয়, তাহলে সেটা ভারতীয়রা উপভোগ করবে না। কারণ, রোহিত-কোহলিরা বল ব্যাটে আসবে, এমন উইকেটে খেলতে পছন্দ করে। এর অর্থ এই নয় যে ওরা এই কন্ডিশনে রান করতে পারে না, কিন্তু ভালো উইকেটে ভারতকে থামানো মুশকিল, যা আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে দেখেছি। উইকেটটাই হয়তো ফাইনালে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ভারতের দূরত্বটা কমিয়ে দেবে।

আরও পড়ুন

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার জন্য এই উইকেট আদর্শ। কষ্ট করে ব্যাটিং করা, মাটি কামড়ে পড়ে থাকার খেলাটা তারা দারুণভাবে রপ্ত করেছে। এই উইকেটের চরিত্রের কারণেই যারা টসে জিতবে, তারা আগে ব্যাটিং করতে চাইবে। কারণ, প্রথম ইনিংসে একটা স্কোর হয়ে গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে তা তাড়া করা একটু কঠিন। স্পিন–দাপট তো আছেই, রাতে ফ্লাডলাইটের আলোয় পেসাররা স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি মুভমেন্ট পায়।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ-ভারতের ম্যাচের কথাই বলি, ভারত পরে ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জটা জেনেও বাংলাদেশকে আগে ব্যাটিং করতে পাঠিয়েছে। হয়তো ভারত ধরে নিয়েছিল যে ম্যাচটা ওরা জিতে যাবে। এখানে ভারতের অতি আত্মবিশ্বাসের একটা ব্যাপার ফুটে ওঠে। যত বড় দলই হোক, কোনো না কোনো সময় এটি বিরুদ্ধে যেতে পারে। শ্রীলঙ্কা নিশ্চয়ই এদিকটাও কাজে লাগাতে চাইবে। যদিও আমার ধারণা, ভারত খুব সাবধানে ব্যাটিং করবে। কারণ, এ ধরনের উইকেটের চাহিদাটা কী, তা ভারতের অভিজ্ঞদের ভালোই জানা।

নিশ্চিতভাবে ভারতীয় একাদশে তাদের মূল ক্রিকেটারদের দেখা যাবে। কোহলি, বুমরা, পান্ডিয়া, কুলদীপরা নিশ্চয়ই আজ খেলবেন। কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে একজন বাড়তি স্পিনার যোগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পান্ডিয়াকে স্বাভাবিকভাবেই তৃতীয় পেসারের ভূমিকায় দেখা যাবে।

স্পিনের কথা যেহেতু এল, দুই দলের সর্বশেষ দেখায় শ্রীলঙ্কার স্পিনের বিপক্ষে ভুগেছে ভারত। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাঁহাতি স্পিনার দুনিত ভেল্লালাগের কথা বলতে হয়। ফাইনালেও লঙ্কান এই তরুণের বোলিং কার্যকর হতে পারে। তবে লঙ্কান স্পিনে বড় ধাক্কা মহীশ তিকশানার না থাকা। খুব বেশি উইকেট না নিলেও লঙ্কান বোলিং পরিকল্পনার বড় অংশজুড়ে থাকে তিকশানার রহস্য স্পিন। তবে শ্রীলঙ্কা এবারের এশিয়া কাপের শুরু থেকেই দেখিয়েছে, কীভাবে চোটজর্জর হয়েও লড়ে যেতে হয়। ফাইনালেও নিশ্চয় সেই লঙ্কান লড়াই দেখতে পাব।

  • নাজমূল আবেদীন, ক্রিকেট বিশ্লেষক ও কোচ