ঢাকায় ইতালিয়ান নাগরিক খুন হয়েছিল বলে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আর খেলাই হয়নি ফেকেটের

অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু ফেকেটে।ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া

২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। দিনটা ক্যামেরন ব্যানক্রফট ও অ্যান্ড্রু ফেকেটের জন্য বিশেষই ছিল।

সে দিনই প্রথমবার অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন দুজন। তবে অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে তোলার রোমাঞ্চটা তাদের সপ্তাহ দুয়েক পরই মিইয়ে গিয়েছিল। যে সফরের দলে তারা ডাক পেয়েছিলেন, বাংলাদেশে সেই সফরটিই স্থগিত করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। আর সফর স্থগিতের সেই ঘোষণাই ফেকেটের জন্য হয়ে ওঠে আজীবনের আক্ষেপ।

বছর দুয়েক পর ব্যানক্রফটের অস্ট্রেলিয়া-অভিষেক হয়েও ফেকেটের যে আর কখনোই অস্ট্রেলিয়ার হয়ে মাঠে নামা হয়নি। ঢাকার গুলশানে এক ইতালিয়ান নাগরিক খুনের ঘটনায় হতে হতেও আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হয়ে ওঠা হয়নি ফেকেটের।

সূচি অনুসারে বাংলাদেশের মাটিতে দুটি টেস্ট খেলার জন্য অস্ট্রেলিয়া দলের ঢাকায় রওনা হওয়ার কথা ছিল ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর। এর দুই সপ্তাহ আগে স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের দল ঘোষণা করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

মিচেল জনসনকে বিশ্রাম দিয়ে তাঁর জায়গায় ডাকা হয় ফেকেটেকে, যিনি তখন বল হাতে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন। ২০১৪-১৫ মৌসুমে শেফিল্ড শিল্ডে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭ উইকেট, ভারতে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’ দলের সফরে ২ ম্যাচে ৫ উইকেট। ফেকেটেকে দলে রাখার বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নির্বাচক রড মার্শ বলেছিলেন, বাংলাদেশের কন্ডিশনে তাঁর রিভার্স সুইং দক্ষতা কাজে লাগবে।

আরও পড়ুন

কিন্তু দক্ষতা কাজে লাগানোর প্রস্তুতির মধ্যেই ফেকেটের কানে যেতে থাকে অনিশ্চয়তার খবর। ঢাকায় জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় ২৮ সেপ্টেম্বরের নির্ধারিত সফর পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ওই সময় অস্ট্রেলিয়া দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফর নিয়ে দ্বিধার মধ্যে থাকলেও ব্যানক্রফট ও ফেকেটে ঢাকায় আসতে খুব আগ্রহী ছিলেন।

প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়া দলে ডাক পাওয়া দুই ক্রিকেটার কতটা মরিয়া ছিলেন, সেটা ফুটে উঠেছে ডেইলি মেইল অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া ফেকেটের সাক্ষাৎকারে, ‘ক্যামেরন ব্যানক্রফটের কথা আমার মনে পড়ে। সে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলার জন্য বুকে বুলেটও নিতে রাজি ছিল।’ তবে পরিবারের কথাও তখন ভেবেছেন তারা, ‘যদি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে যাই, এরপর কিছু একটা ঘটে, তখন তো নিজেকে মানানো যাবে না। কারণ যা-ই হোক, এটা (সফর স্থগিত) হওয়ার ছিল না। তবে যা হয়েছে তো হয়েছেই।’

আরও পড়ুন

২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার (৫০) নিহত হলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। ১ অক্টোবর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়, নিরাপত্তা শঙ্কায় বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র এবং বাণিজ্য বিষয়ক দপ্তর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশে ‘নিরাপত্তা হুমকি’র কথা জানানোর প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফেকেটের অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায় সেখানেই।

অস্ট্রেলিয়া দলের পরের সিরিজ খেলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে সেই সিরিজে মিচেল জনসনকে ফিরিয়ে আনা হলে বাদ পড়ে যান ফেকেটে। তবে ডানহাতি এ পেসার সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি খান অন্যভাবে। জানতেন, আপাতত দলে জায়গা হচ্ছে না। এক দিন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের চ্যাট গ্রুপ থেকে একটি নোটিফিকেশন আসে, ‘মিচেল স্টার্ক রিমুভড ইউ’। ফেকেটে জানান, ওই সময় মনে হয়েছে, তার টেস্ট অভিষেকের আশা শেষ হয়ে গেছে।

ফেকেটে এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে মনোযোগ দিলেও আর কখনো অস্ট্রেলিয়া দলে ফেরার মতো পারফরম্যান্স করতে পারেননি। মাঝে চোটও তাঁকে ভুগিয়েছে ভীষণভাবে। ৩০ বছর বয়সে অস্ট্রেলিয়া দলে প্রথমবার ডাক পাওয়া ফেকেটের বয়স এখন ৩৯ বছর। পেশাদার ক্রিকেট ছেড়ে সিনিয়র ফাইনান্স বিজনেস পার্টনার হিসেবে কাজ করেন এএফএলে। ক্রিকেট অবশ্য একেবারে ছেড়ে দেননি। গত নভেম্বরেও হংকংয়ে অনুষ্ঠিত সিক্স-এ-সাইড টুর্নামেন্ট হংকং ইন্টারন্যাশনাল সিক্সেসে খেলেছেন। দলের নামও ছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ব্যাগি গ্রিন টুপিটা পরতে পরতেও যে পরা হলো না, সেই আক্ষেপ তাঁর রয়েই গেছে।

আরও পড়ুন