‘সময় পাল্টে গেছে, একটা ভিডিও ক্লিপ দিয়েও এখন জাতীয় দলে ডাক পাওয়া যায়’

ইংলিশ অফ স্পিনার শোয়েব বশির।এএফপি

সব খেলোয়াড়েরই ইচ্ছা থাকে দেশের হয়ে খেলার। বেশি খেলার সুযোগ, বেশি আয়ের সুযোগ কিংবা ব্যাপক পরিচিতি যতই ক্লাব বা লিগের খেলার মধ্য দিয়ে আসুক না কেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার গৌরব সব ক্রীড়াবিদের কাছে বিশেষ কিছু।

আর সেই গৌরবের অংশীদার হতে একজন খেলোয়াড়কে ধারাবাহিক সাফল্য, পরিশ্রম, নিবেদন ও অপেক্ষার বড় পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তবে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা এই ধারা এখন বদলে গেছে মনে করেন স্টিভেন ফিন। ইংল্যান্ডের এই সাবেক ক্রিকেটারের মতে, এখন একজন খেলোয়াড়ের একটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স বা একটি বিশেষ মুহূর্তই তাঁকে দলে ঢোকার সুযোগ এনে দিতে পারে। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটে জাতীয় দলে ঢোকার ক্ষেত্রে একটা ভিডিও ক্লিপই যথেষ্ট হয়ে ওঠে।

ইংল্যান্ডের হয়ে ২০১০ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ৩৬টি টেস্টসহ ১২৬টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ফিন। ৩৬ বছর বয়সী এই সাবেক পেসার বিবিসিতে লেখা কলামে বলেছেন ইংল্যান্ড দলে জায়গা পেতে তখন কী পরিমাণ দৃঢ় সংকল্প থাকতে হতো, ‘জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রডের জায়গা পাকা ছিল। ফলে টিম ব্রেসনান, গ্রাহাম অনিয়নস, ক্রিস ট্রেমলেট, ক্রিস ওকস, আমি এবং আরও কয়েকজন বাকি একটি জায়গার জন্য লড়ছিলাম। এই প্রতিযোগিতা তৈরি করেছিল ক্ষুধা আর সংকল্প।

কারণ, আমি জানতাম বাকি সবাইও ঠিক একই চেষ্টা করছে। একের পর এক ভালো পারফরম্যান্স করা এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে সপ্তাহের পর সপ্তাহ নিজের সামর্থ্য দেখিয়ে প্রমাণ করতে হতো যে আপনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপ সামলাতে প্রস্তুত।’

স্টিভেন ফিন
এএফপি

কিন্তু বর্তমানে ইংল্যান্ড দলের ম্যানেজার রব কি, কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকসের দলে জায়গা পাওয়ার মাধ্যম পাল্টে গেছে বলে মনে করেন ফিন, ‘ইংল্যান্ড দল গঠনের পদ্ধতি বদলে গেছে। আমি ভাবি, দলে ডাক পাওয়ার আশায় থাকা খেলোয়াড়দের সেই অনুভূতিগুলো, যেগুলো আমি খুব ভালোভাবে জানি, সেগুলোও কি বদলে গেছে? এখনো একজন খেলোয়াড়ের জন্য পুরোনো ধাঁচে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে। যদিও আমার মনে হয় এ পথটি এখন ইংল্যান্ড দলে ঢোকার ক্ষেত্রে অনেক কঠিন হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন

সামনেই ইংলিশ ক্রিকেটের নতুন মৌসুম শুরু হচ্ছে। এমন সময়ে সনি বেকার ও জন টার্নারের মতো ঘরোয়ায় ভালো খেলা ক্রিকেটারদের নাম উল্লেখ করে গত বছর টেস্ট অভিষিক্ত শোয়েব বশিরের উদাহরণ টেনেছেন ফিন, ‘বেকার, টার্নার এবং যারা ভালো ব্যাটসম্যানদের ভড়কে দিতে পারে, তারা জানে একটি পারফরম্যান্স, এমনকি একটি স্পেলও ইংল্যান্ড দলে ডাক পাওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। এমন নজিরও আছে। স্টোকস অফ স্পিনার শোয়েব বশিরকে প্রথম দেখেছিলেন একটি সোশ্যাল মিডিয়া ক্লিপে। এরপর সেটি রব কি ও ম্যাককালামের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শেয়ার করেন। এরপর বেশি দেরি হয়নি। বশির ইংল্যান্ড স্কোয়াডে ঢুকে যান।’

একটা ভিডিও ক্লিপেই খুলে গিয়েছিল শোয়েব বশিরের ইংল্যান্ড দলের দরজা।
এএফপি

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ইংল্যান্ড দলে ডাক পাওয়ার সময় বশিরের অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, নিয়েছিলেন মাত্র ১০ উইকেট। সেই বশিরই ২০২৪ সালে টেস্ট অভিষেকের বছর ১৫ টেস্ট খেলে নিয়েছেন ৪৯ উইকেট।

ফিন তাঁর কলামের শেষ দিকে লিখেছেন, এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের সম্ভাবনাসম্পন্ন একজন খেলোয়াড় হওয়াটা নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চকর। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি লিখেছেন, ‘প্রতিবার যখন আপনি মাঠে নামেন, মনে হয় আপনার সামনে সুযোগ আছে নিজেকে উপস্থাপন করার, ইংল্যান্ড ম্যানেজমেন্টের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পরবর্তী ক্লিপ হওয়ার। রব কি আর তার সঙ্গীরা ভাবছে, “আমরা কি ওকে উপেক্ষা করতে পারি?”।’

আরও পড়ুন