মাইকেল ক্লার্ক: ওপেনার স্মিথ লারার ‘৪০০’ রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারে

অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী ওপেনার হবেন স্টিভেন স্মিথ?এএফপি

স্টিভ স্মিথ যদি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে টেস্টে ওপেনিং করতে চান এবং তাঁকে সে সুযোগ করে দেওয়া হয়, তাহলে এক বছরের মধ্যে তিনি টেস্টের ১ নম্বর ওপেনার হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। এমনকি ওপেনিংয়ে এসে স্মিথ যদি ব্রায়ান লারার টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর ৪০০ রানের রেকর্ডও ভেঙে দেন, তাহলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে মনে করেন ক্লার্ক।

ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গায় অস্ট্রেলিয়ার পরবর্তী ওপেনার কে হবেন, সিডনিতে ওয়ার্নার বিদায় নেওয়ার আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের আলোচিত প্রশ্ন এটি। ওয়ার্নার থেকে শুরু করে অধিনায়ক, কোচ, সাবেক ক্রিকেটাররা, ওপেনিংয়ের জায়গার দাবিদার—সবাই নিজের মত জানাচ্ছেন। এরই মধ্যে স্মিথকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করানোর কথাও উঠে এসেছে। স্মিথ নিজেও জানিয়েছেন, তিনি সুযোগ পেলে এ ভূমিকায় আসতে প্রস্তুত।

স্মিথের ওপেনিংয়ে নামা প্রসঙ্গে ইএসপিএনের ‘অ্যারাউন্ড দ্য উইকেট’ অনুষ্ঠানে ক্লার্ক বলেন, ‘আমি বিস্মিত হইনি। স্মিথি ব্যাটিং করতে ভালোবাসে। সে কাউকে কয়েকটি বল দেওয়ার চেয়ে বরং নিজেই খেলবে। প্যাট কামিন্স কৌতুক করেছে একটু। তবে আমি শুনেছি, স্মিথি কয়েকবারই এমন করেছে—কেউ যদি তার আগে গিয়ে বেশিক্ষণ ব্যাটিং করে, তাহলে পরেরবার গিয়ে সে তাদের হারাতে চায়। স্মিথির এই ব্যাপারটি দারুণ।’

ওয়ার্নারকে বিদায় জানাচ্ছেন স্মিথ, সিডনি টেস্টে
এএফপি

ক্লার্ক এরপর যোগ করেন, ‘সে ব্যাটিং ভালোবাসে। টেকনিকের দিক দিয়েও দারুণ। সে মানিয়ে নিতে পারবে। সে ওপেন করতে পারবে, কোনো সংশয় নেই। এর আগে তিনে খেলেছে। সে নতুন বলে ভালো, স্পিনে দারুণ। সে যদি করতে চায়, তাহলে আমার মনে হয়, তারা তাকে করতে দেবে।’

তেমন কিছু হলে কী হতে পারে, সেই ভবিষ্যদ্বাণীও করেছেন অস্ট্রেলিয়াকে ৪৭টি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া ক্লার্ক, ‘স্টিভেন স্মিথ যদি ওপেন করতে চায়, এবং তারা তাকে সে সুযোগটা দেয়, তাহলে সে এক বছরের মধ্যে ১ নম্বর টেস্ট ওপেনার হয়ে যাবে। সে এমনই ভালো খেলোয়াড়। টেকনিক্যালি সে যথেষ্ট ভালো। সে বল ছাড়ে ভালো, দৃষ্টি ভালো, দারুণ হাত। হয়তো সে এই চ্যালেঞ্জই নিতে চাচ্ছে। সে কারও জন্য অপেক্ষা করে না।’

আরও পড়ুন

এরপর আরেকটি ‘সাহসী’ ভবিষ্যদ্বাণীও করেন ক্লার্ক, ‘আরেকটি ব্যাপার, সে যদি ব্রায়ান লারার ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙে, তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, সে এতটাই ভালো। কারণ, এখন সে পুরো একটা দিন, হয়তো দুদিন পাবে ব্যাটিং করতে।’

মাইকেল ক্লার্ক ও স্টিভেন স্মিথ যখন অস্ট্রেলিয়া দলে সতীর্থ ছিলেন
আইসিসি

অবশ্য ওয়ার্নার যে গতিতে খেলে গেছেন, তাঁর জায়গায় এসে ওপেনার হিসেবে তেমন কিছু করতে পারবেন কি না, সে আলোচনাও আছে। যদিও স্ট্রাইক রেটের এ আলোচনায় সেভাবে যেতে চান না ক্লার্ক, ‘আমার মনে হয় না, তারা স্ট্রাইক রেট নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। ম্যাথু হেইডেন, মাইকেল স্ল্যাটার, জাস্টিং ল্যাঙ্গারের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ভাগ এবং ডেভিড ওয়ার্নারের মতো কেউ—তারা সবাই ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে খেলেছে—যেটি আমাদের জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা এভাবেই খেলে। তবে ওপেনারদের স্ট্রাইক রেট নিয়ে মনে হয় না ভাবনার কিছু আছে। যদি স্মিথ ৪০-৫০-৬০-এ ব্যাটিং করে, রান কিন্তু আসবে। আর ইনিংস বড় হওয়ার সঙ্গে স্ট্রাইক রেট বাড়বে। এমন না যে স্মিথ রক্ষণাত্মক খেলোয়াড়। স্মিথি, গ্রিন, (ক্যামেরন) ব্যানক্রফট, ম্যাট রেনশ সবাই আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়।’

আরও পড়ুন

ক্যারিয়ারে স্মিথ কখনোই ইনিংস ওপেন করেননি, সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং করেছেন ৪ নম্বরে। এর বাইরে তিন, পাঁচ ও ছয়েও খেলেছেন উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ম্যাচে। ক্যারিয়ারে ৩ নম্বরেই তাঁর সবচেয়ে বেশি গড় (৬৭.০৭)। এমনিতে দলের বাইরে থাকা ক্যামেরন ব্যানক্রফট, ম্যাট রেনশ, মার্কাস হ্যারিসদের নাম শোনা যাচ্ছে সম্ভাব্য ওপেনার হিসেবে। তবে দলের সঙ্গে থাকা ক্যামেরন গ্রিনকে বেছে নেওয়া হতে পারে বলেও মনে করেন ক্লার্ক, ‘তবে কামিন্সের কথা শুনে মনে হয়েছে, তারা ক্যামেরন গ্রিনকে ডেভিড ওয়ার্নারের জায়গায় ওপেন করতে দেবে। যদি না স্মিথ করতে চায়। যদি চায়, তাহলে গ্রিন চার বা ছয়ে খেলবে। কামিন্স বলেছে, সে (ব্যাটিং অর্ডারে) বিশৃঙ্খলা চায় না। মারনাস (লাবুশেন) দারুণ (তিনে), স্মিথ চার, (ট্রাভিস) হেড পাঁচ, মিচ মার্শ ছয়ে। এর ফলে মনে হচ্ছে, গ্রিন দলে এসে ওপেন করবে।’

আরও পড়ুন

নতুন ওপেনার হিসেবে যাঁকেই নেওয়া হোক, আপাতত অস্ট্রেলিয়ার হাতে খুব বেশি সময় নেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৭ জানুয়ারি থেকেই শুরু দুই টেস্টের সিরিজ। তবে যিনিই আসুন না কেন, সুযোগ দুই হাতে গ্রহণ করবেন বলেই ধারণা করেন ক্লার্ক, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অসম্মান না করেই বলছি, যাকেই সুযোগ দেওয়া হবে, দুহাতে নেবে। যদি ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা বা ইংল্যান্ডের সঙ্গে খেলা হতো বা বিশ্বের অন্য কোনো জায়গায় খেলা হতো (তাহলে ভিন্ন হতো)। আমরা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কন্ডিশনে খেলতে পছন্দ করি। এখানে বেড়ে উঠেছি। বাড়তি পেস ও বাউন্স পছন্দ করি।’

এরপর ক্লার্ক যোগ করেন, ‘যে–ই সুযোগ পাক না কেন, ভালো সুযোগ। তবে সাফল্যের মূলসূত্র হলো দীর্ঘ মেয়াদে থাকা। ওয়ার্নার করতে পেরেছে। যে–ই সুযোগ পাক না কেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সুযোগ কাজে লাগিয়ে জায়গা পাকা করার ব্যাপার আছে।’