গাভাস্কারের ‘প্রথম রান করতে লাগত ৪০ বল, ম্যাক্সওয়েল সেখানে শতক তুলে নিয়েছে’

শতকের পর সুর পাল্টে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সুনীল গাভাস্কারছবি : টুইটার

১৯, ২, ২৫, ১৪, ৮, ৫, ১৫, ৩, ৩১*,০—নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গতকাল ম্যাচের আগে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সর্বশেষ ১০ ওয়ানডে ইনিংস। ছিল না কোনো ফিফটি, পাঁচবার তো দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। ব্যাট হাতে ম্যাক্সওয়েলের এমন খরা দেখে যে কারোই সমালোচনায় মুখর হওয়ার কথা।

সুনীল গাভাস্কারও সেটাই করেছিলেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ম্যাক্সওয়েলের ‘গোল্ডেন ডাক’ মারার প্রসঙ্গ টেনে ভারতীয় কিংবদন্তি বলেছিলেন, ‘বিশ্বকাপে ম্যাক্সওয়েলের মধ্যে উদাসীন মনোভাব দেখা যাচ্ছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সে যে প্রথম বলেই আউট হলো, ওটা কী ধরনের শট ছিল? নিশ্চিতভাবেই সে উদাসীন, উদ্বেগহীন নয়।’

ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে গাভাস্কার কথাটা বলেছিলেন দিল্লিতে গতকাল অস্ট্রেলিয়া-নেদারল্যান্ডস ম্যাচ শুরুর আগে। এই সমালোচনা ম্যাক্সওয়েলের কানে গেছে কি না, জানা নেই। তবে ‘বিগ শো’–খ্যাত অস্ট্রেলিয়ার এই অলরাউন্ডার গতকাল যেন ব্যাটেই সবকিছুর জবাব দিতে নেমেছিলেন।

ব্যাট হাতেই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ম্যাক্সওয়েল
ছবি : এএফপি

৩৫ বছর বয়সী তারকা কাল ডাচ বোলারদের ‘কচুকাটা’ করে ৪০ বলে তুলে নিয়েছেন শতক; যা অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান হিসেবে তো বটেই, বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই দ্রুততম। শেষ পর্যন্ত ৯ চার ও ৮ ছক্কায় ৪৪ বলে ১০৬ রান করে থামেন। ম্যাক্সওয়েলকে এমন বিধ্বংসী হতে দেখে গাভাস্কারও ‘ইউ টার্ন’ নিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ান তারকাকে সমালোচনার তিরে বিদ্ধ করার বেশ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় কিংবদন্তি সুর পাল্টে ফেলেছেন।

বিশ্বকাপে ধারাভাষ্যকারের দায়িত্বে আছেন গাভাস্কার। এ ছাড়া বিশ্বকাপের প্রধান সম্প্রচার চ্যানেল স্টার স্পোর্টসের সঙ্গেও কাজ করছেন। গতকাল শতক পূরণের পথে বাস ডি লিডির ৫ বল থেকে ম্যাক্সওয়েল একাই নিয়েছেন ২৭ রান। প্রথম দুই বলে চারের পর টানা তিন ছক্কা। সর্বশেষ যে ছক্কায় শতক পূর্ণ করেন, সেটা আবার ছিল ‘নো’ বল।

ওয়ানডে ইতিহাসে সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের বিব্রতকর রেকর্ড করেছেন বাস ডি লিডি
ছবি : এএফপি

ম্যাচ শেষে স্টার স্পোর্টসকে গাভাস্কার বলেছেন, ‘ওর শটকে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা বলতেই হবে। শটটা চমৎকার ছিল। ছক্কা হয়েছিল। কিন্তু আমি বলব, অবিশ্বাস্য এই শটে ওকে ১২ রান দেওয়া উচিত ছিল। এটা ঠিক যে দুটি ছক্কা খাওয়ার পর (ডি লিডির) বোলিং এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। কোথায় বল ফেলতে হবে, বুঝে উঠতে পারছিল না। ওরা (ডাচ বোলাররা) স্লোয়ার দেওয়ার চেষ্টা করেছে, পেট ও বুকের মাঝ বরাবর জায়গায় বোলিং করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু (ম্যাক্সওয়েল) অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করেছে। প্রথম রান করতে আমার যেখানে ৪০ বল লাগত, আর সেখানে সে শতক তুলে নিয়েছে।’

শেষ কথাটির মধ্য দিয়ে গাভাস্কার হয়তো নিজের একটি ইনিংসের কথাই মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। সেই সঙ্গে বোঝাতে চেয়েছেন, তাঁর সময়কার ক্রিকেটের সঙ্গে এখনকার ক্রিকেটের আকাশ–পাতাল তফাত।

আরও পড়ুন

১৯৭৫ সালে বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড–ভারত। সে সময় বিশ্বকাপের ম্যাচ হতো ৬০ ওভারের। আগে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ৩৩৪ রান। লক্ষ্য তাড়ায় ভারত জয়ের কোনো চেষ্টাই করেনি। পুরো ৬০ ওভার খেলে ৩ উইকেট হারিয়ে মাত্র ১৩২ রান তুলেছিল। আর গাভাস্কার ওপেনিংয়ে নেমে ১৭৪ বলে ৩৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। শম্বুকগতিকেও হার মানানো তাঁর সেই ইনিংস নিয়ে আজও তীব্র সমালোচনা হয়।

আরও পড়ুন