টাকা বাঁচাতে আজহার মেহমুদকে প্রধান কোচ বানিয়েছে পাকিস্তান

আজহারের সঙ্গে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চুক্তি আছে পিসিবির। চুক্তি অনুযায়ী, তাঁকে এর আগেই বরখাস্ত করা হলে ছয় মাসের বেতন দিতে হবে। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ১ কোটি ৯১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

পাকিস্তান টেস্ট দলের প্রধান কোচ আজহার মেহমুদছবি: এএফপি

বোলিং কোচ, সহকারী কোচ, অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচ—২০১৬ সাল থেকে এ বছরের প্রায় মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের এসব দায়িত্ব পালন করেছেন আজহার মেহমুদ। সেই আজহারকেই গত ৩০ জুন টেস্ট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।

৫০ বছর বয়সী আজহারকে পদোন্নতি দেওয়ার পর পিসিবি জানায়, ক্রিকেট সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে পাওয়া সাফল্য তাঁকে এই পদের (লাল বলের প্রধান কোচ) জন্য আলাদাভাবে উপযুক্ত করে তুলেছে।

আজহার মেহমুদের অভিজ্ঞতা পিসিবি কাজে লাগাতেই পারে। সে কারণেই হয়তো তাঁকে আরও বড় দায়িত্বে আনা। কিন্তু কাহিনি নাকি অন্য কিছু। টাকা বাঁচাতেই আজহারকে টেস্ট দলের প্রধান কোচ বানানো হয়েছে—ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআইকে পিসিবির একটি সূত্র এমনটাই জানিয়েছে।

আজহার মেহমুদ পাকিস্তান দলের কোচিংয়ে অনেক আগে থেকেই যুক্ত
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আজহারের সঙ্গে আগামী বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চুক্তি আছে পিসিবির। চুক্তি অনুযায়ী, তাঁকে এর আগেই বরখাস্ত করা হলে ছয় মাসের বেতন দিতে হবে। বর্তমানে আজহার মাসে ৭৫ লাখ পাকিস্তানি রুপি (৩১ লাখ ৯৩ হাজার টাকা) পান। অর্থাৎ তাঁকে ছাঁটাই করা হলে ৪ কোটি ৫০ লাখ পাকিস্তানি রুপি (১ কোটি ৯১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা) ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

পাকিস্তান ওয়ানডে ও টি–টোয়েন্টি দলের কোচ মাইক হেসন চাননি আজহার মেহমুদ তাঁর কোচিং স্টাফে থাকুক। আবার পিসিবিও আজহারকে এত টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে বিদায় করতে চায়নি। এ কারণে বোর্ড তাঁকে আগামী ১০ মাসের জন্য (চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত) টেস্ট দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দিয়েছে।

এ ব্যাপারে পিসিবির একটি সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছে, ‘এ কারণেই (খরচ বাঁচাতে) বোর্ড সম্প্রতি টেস্ট দলের প্রধান কোচ হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেছে, যেন চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত তাঁকে কোনোভাবে কাজে লাগানো যায়। সমস্যার শুরু হয় তখনই, যখন মাইক হেসন পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন যে তাঁর নিজস্ব কোচিং স্টাফ থাকবে এবং আজহার সেই তালিকায় নেই।’

আজহার মেহমুদের সঙ্গে ২০২৬ সালের এপ্রিল পর্যন্ত চুক্তি আছে পিসিবির
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

আজহারকে নিয়ে গত সাত মাসে তৃতীয় প্রধান কোচ পেয়েছে পাকিস্তান টেস্ট দল। পিসিবির বিরুদ্ধে ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ এনে গত ডিসেম্বরে পদত্যাগ করেন জেসন গিলেস্পি। এরপর সব সংস্করণে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচের দায়িত্ব পান ’৯২ বিশ্বকাপজয়ী পেসার আকিব জাভেদ। এই আকিবই নাকি গিলেস্পিকে সরিয়ে কোচের পদ বাগিয়ে নিতে আড়ালে কলকাঠি নেড়েছেন।

তবে আকিবের কোচিংয়ে সর্বশেষ পাঁচ সিরিজের একটিও জিততে পারেনি পাকিস্তান। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তো ভরাডুবি হয়েছে। গত মে মাসে তাঁকে সরিয়ে মাইক হেসনকে সাদা বলের প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয় পিসিবি। কিন্তু আকিবকে সরানোর পর লাল বলের কোচের পদটা ফাঁকা পড়ে ছিল। আজহার মেহমুদকে দিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করা হয়েছে।

হেসনের কোচিং স্টাফে জায়গা না হওয়ায় আজহার পাকিস্তানের বয়সভিত্তিক দলগুলোতে কোচিং করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এখানেও বাধা হয়ে দাঁড়ান আকিব জাভেদ, যাঁকে জাতীয় দলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর হাই পারফরম্যান্স ইউনিটের পরিচালক পদে বসানো হয়েছে।

আকিব পিসিবির চেয়ারম্যান মহসিন নাকভিকে জানিয়ে দেন, আজহারের কোচিং স্টাইল তাঁর খুব একটা পছন্দ নয়। আকিব নাকভির আস্থাভাজন হওয়ায় তাঁর মতামতকে গুরু দেন। তাই পিসিবির অন্য কর্মকর্তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে আজহারকে টেস্ট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেন।

পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভির খুব ঘনিষ্ঠ আকিব জাভেদ
ছবি: পিসিবি

সূত্রটি এ ব্যাপারে পিটিআইকে জানায়, ‘আজহারকে নিয়ে পিসিবি বড় ধরনের সমস্যায় পড়ে যায়। তারা ভাবতে থাকে, এত বড় বেতনের বিনিময়ে তাঁর দক্ষতাকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। চাইলেও তারা তাঁকে ছাঁটাই করতে পারেনি; কারণ, তাতে ছয় মাসের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আকিব জাভেদ, যিনি এখন নির্বাচক, জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রধান এবং বোর্ড চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ, তিনি আজহারের কোচিং স্টাইল নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই তাঁর চুক্তির যথার্থতা দেখানোর জন্য আপাতত তাঁকে টেস্ট দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।’

পাকিস্তানের টেস্ট কোচ হিসেবে আজহার মেহমুদের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০২৫-২৭ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে এটিই পাকিস্তানের প্রথম সিরিজ।

পাকিস্তান টেস্ট দল
ছবি: এএফপি

সাদা বলের প্রধান কোচ মাইক হেসন প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল হন। গত মে-জুনে নিজেদের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই করে পাকিস্তান। হেসনের অধীনেই ফিরতি টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ঢাকায় এসেছে পাকিস্তান দল।