ফলো অন করেও জয়ের আরও যত কীর্তি

ওয়েলিংটন টেস্টে জেমস অ্যান্ডারসনের উইকেট নিয়ে জয়ের উল্লাস নিউজিল্যান্ডের পেসার নিল ওয়াগনারেরছবি: এএফপি

অবিশ্বাস্য এক টেস্ট জিতেছে নিউজিল্যান্ড। ফলো অনে পড়ে ইংল্যান্ডকে ১ রানে হারিয়ে রোমাঞ্চের জন্ম দিয়েছে কিউইরা। ফলো অনে পড়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে ম্যাচ জেতা এটিই একমাত্র উদাহরণ নয়। এর আগে আরও তিনবার মঞ্চস্থ হয়েছে এমন মহানাটক।

যেখানে প্রথম দুবার অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়াকে হারায় ইংল্যান্ড। তৃতীয়বারও হেরে যাওয়া দলের নাম অস্ট্রেলিয়া। সেবার অবশ্য তারা হেরেছিল ভারতের কাছে। আর এবার এমন হতাশার রেকর্ডে অস্ট্রেলিয়া সঙ্গী হিসেবে পেল ইংল্যান্ডকে।

আরও পড়ুন

অস্ট্রেলিয়া–ইংল্যান্ড:

১৮৯৪ সাল, সিডনি

ইংল্যান্ড ১০ রানে জয়ী

৫ ম্যাচ অ্যাশেজ সিরিজ খেলতে সেবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। সিডনিতে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই মঞ্চস্থ হলো রোমাঞ্চকর এক উপাখ্যানের। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ২১ রানে ৩ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। সেখান থেকে জর্জ গিফেন ও ফ্রাঙ্ক ইরেডেলের দুর্দান্ত এক জুটিতে ১৯২ রানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া।

জর্জ গিফেন (১৮৫৯–১৯২৭)
ছবি: ইএসপিএনক্রিকইনফো

গিফেন করেন ১৬৬ রান এবং ইরেডেলের ব্যাট থেকে আসে ৮১ রান। তবে অস্ট্রেলিয়াকে ৫৮৬ রানের ভিত গড়ে দেন সিড গ্রেগরি। তিনি করেন ২০১ রান। আর শেষ দিকে ৭৪ রান করেন জ্যাক ব্ল্যাকহাম। দুর্দান্ত ব্যাট করা গিফেন বল হাতেও জ্বলে উঠলে ৩২৫ রানে অলআউট হয়ে ফলো অনে পড়ে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নেমে আলবার্ট ওয়ার্ডের ১১৭ রানে ভর করে ৪৩৭ রানে অলআউট হয় ইংলিশরা।

১৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ববি পিলের বিধ্বংসী বোলিংয়ে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। শেষ পর্যন্ত স্বাগতিকেরা ১৬৬ রানে গুটিয়ে গেলে ইংল্যান্ড পায় ১০ রানের জয়।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়া:

১৯৮১ সাল, লিডস

ইংল্যান্ড ১৮ রানে জয়ী

আবারও সেই অ্যাশেজের উত্তাপ। লিডসে তৃতীয় টেস্টে মুখোমুখি ইংল্যান্ড–অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪০১ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। জন ডাইসন করেন ১০২ রান এবং কিম হিউজেস করেন ৮৯ রান। জবাব দিতে নেমে ডেনিস লিলি এবং জিওফ লসনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৭৪ রানে অলআউট হয়ে ফলো অনে পড়ে ইংল্যান্ড।

দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমেও বিপর্যয়ে পড়ে ইংলিশরা। ৪১ রানে হারায় ৪ উইকেট। সেখান থেকে ইয়ান বোথামের অপরাজিত ১৪৯ রানে ভর করে ৩৫৬ রান তোলে ইংলিশরা। জয়ের জন্য অস্টেলিয়ার সামনে লক্ষ্য ছিল ১৩০ রান। তবে বব উইলসের তোপে সে রান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয় তারা। অলআউট হয় ১১১ রানে। ৪৩ রানে ৮ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডকে স্মরণীয় এক জয় এনে দেন উইলস।

ইডেন গার্ডেনসে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাকাব্যিক টেস্ট জিতেছিল ভারত
ফাইল ছবি: এএফপি

ভারত–অস্ট্রেলিয়া:

২০০১ সাল, ইডেন গার্ডেনস

ভারত ১৭১ রানে জয়ী

আজকের আগে নিকট অতীতে সর্বশেষ ফলো অনে পড়ে জয়ের ঘটনাটি ঘটেছিল ২২ বছর আগে কলকাতায়। এবার জেতা দল বদলে গেলেও, হারা দল ছিল সেই অস্ট্রেলিয়া। এই টেস্টটি মূলত ভিভিএস লক্ষ্মণ, রাহুল দ্রাবিড় এবং হরভজন সিংয়ের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে জিতেছিল ভারত। এদিন টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ ওয়াহর ১১০ এবং ম্যাথু হেইডেনের ৯৭ রানে ভর করে ৪৪৫ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে গ্লেন ম্যাগ্রা–শেন ওয়ার্নদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ১৭১ রানে গুটিয়ে যায় ভারত।

ফলো অনে পড়ে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট হাতে অবিশ্বাস্য নৈপুণ্য দেখান লক্ষ্মণ ও দ্রাবিড়। ২৩২ রান থেকে তারা দলকে নিয়ে যান ৬০৮ রানে। ২৮১ রানের ঐতিহাসিক এক ইনিংস খেলেন লক্ষ্মণ, আর দ্রাবিড় করেন ১৮০ রান। অস্ট্রেলিয়ার সামনে লক্ষ্য ছিল ৩৮৪ রানের। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে লক্ষ্যের আশপাশে পৌঁছাতে পারেনি তারা। হরভজনের ঘূর্ণিতে গুটিয়ে যায় ২১২ রানে। ভারতীয় স্পিনার একাই নেন ৬ উইকেট। আর ভারত পায় ক্রিকেট ইতিহাসের স্মরণীয় এক জয়।

আরও পড়ুন

নিউজিল্যান্ড–ইংল্যান্ড:

২০২৩ সাল, ওয়েলিংটন

নিউজিল্যান্ড ১ রানে জয়ী

প্রথম দুই দফায় ফলো অন করে জেতা ইংল্যান্ড এবার নিজেরাই হলো কুপোকাত। তবে জয়ের ব্যবধান বিবেচনা করলে আগের তিন ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচটি ছিল বেশি উত্তেজনাপূর্ণ। প্রথম ম্যাচে দাপুটে খেলে জেতা ইংল্যান্ড এবার আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ৪৩৫ রান সংগ্রহ করে। জো রুট ১৫৩ ও হ্যারি ব্রুক করেন ১৮৬ রান। জবাবে জেমস অ্যান্ডারসন–স্টুয়ার্ট ব্রডের তোপে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ২০৯ রানে। ফলো অনে পড়ে ব্যাট করতে নেমে জ্বলে ওঠেন কেন উইলিয়ামসন। তাঁর ১৩২ রানের ইনিংসে নিউজিল্যান্ড করে ৪৮৩ রান।

ওয়েলিংটন টেস্টে ফলোঅনে পড়ে জয়ের সর্বশেষ নজির গড়েছে নিউজিল্যান্ড
ছবি: এএফপি

২৫৮ রানের জবাবে চতুর্থ দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ৪৮ রান। শেষ দিন জয়ের জন্য ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ২১০ রান, হাতে ছিল ৯ উইকেট। পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নেমে ৩২ রান তুলতেই ৫ উইকেটে হারায় ইংলিশরা। তখন তাদের রান ৮০। জো রুট (৯৫) ও বেন স্টোকস (৩৩) চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। শেষ উইকেট জুটিতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৭ রান। কিন্তু সে সমীকরণ মেলাতে পারেনি ইংলিশরা। ১ রানে ম্যাচ হেরে যায় তারা।