এক প্রশ্নের উত্তর দিতে ২৫০ কিলোমিটার যাতায়াত
ভাগ্যিস শুরুর ওই আনুষ্ঠানিকতাটুকু ছিল! নয়তো মনকে কীভাবে বোঝাতেন ইয়াসিম মুর্তজা! মাত্র একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে ২৫০ কিলোমিটারের বেশি আসা-যাওয়া করাটা তো বিরক্তিকরই। সেটি আবুধাবি থেকে দুবাইয়ের পথ যতই প্রশস্ত হোক আর গাড়ি যতই দ্রুতগতিতে চলুক।
কিন্তু হংকং ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুর্তজাকে আজ মুখোমুখি হতে হয়েছে এমন একটা পরিস্থিতিরই। পুরো পথ যাওয়া ও আসার এই কাজটা তিনি করেছেন কেবল একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্যই। এশিয়া কাপের পর্দা উঠছে আজ। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় উদ্বোধনী ম্যাচে মুর্তজার হংকং খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
অথচ প্রথা মানলে অধিনায়কদের সম্মিলন টুর্নামেন্ট শুরুর অন্তত এক দিন আগে হওয়ার কথা, সেই এশিয়া কাপের আট অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলন কিনা হলো আজ। যেখানে স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন ভারত-পাকিস্তানের অধিনায়ক, দুয়েকটি প্রশ্ন হলো বাকি সবার উদ্দেশেই। কিন্তু যাদের আজ ম্যাচ, সেই হংকংয়ের অধিনায়ক ইয়াসিম এক পাশে বসে থাকলেন নীরবে।
আট অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনে মুর্তজার যেটুকু ব্যস্ততা, তা ছিল শুরুতে উপস্থাপকের করা এক প্রশ্নেই। ‘সবাই শুনে একটু অবাকই হতে পারে—আপনারা পঞ্চমবার এশিয়া কাপে খেলছেন। নিশ্চয়ই এবার ভিন্ন কিছু করার তাগিদে থাকবেন?’ উপস্থাপকের প্রশ্নটা ছিল এমন।
বাছাইয়ের কঠিন এক পথ পাড়ি দিয়ে এশিয়া কাপে এসেছে হংকং। কাতার আর মালয়েশিয়াকে হারালেও এশিয়া কাপ বাছাইয়ের সেমিফাইনালে ওমানের কাছে হেরে মূল টুর্নামেন্টে খেলার স্বপ্ন ধাক্কাই খেয়েছিল। তবে তৃতীয় দল বাছাইয়ের ম্যাচে নেপালকে হারিয়ে দিয়ে এশিয়া কাপে জায়গা করে নেয় তারাও।
ওই যাত্রার কথাই মনে করিয়ে দেন হংকং অধিনায়ক, ‘আমাদের কয়েকজন ভালো খেলোয়াড় আছে, যারা অনেক পরিশ্রম করেছে এখানে আসার জন্য। এভাবেই আমরা বাছাই পেরিয়েছে।’ কিন্তু এতটুকুই। বাকি সময়টা কি এক চেয়ার পরে বসে থাকা রশিদ খানের দলের বিপক্ষে সন্ধ্যার ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করেই কাটিয়ে দিয়েছেন মুর্তজা! তাঁকে বা পুরো হংকং দলকে নিয়ে যে একটি প্রশ্নও করেননি সাংবাদিকেরা!
ম্যাচের দিন এ আয়োজনের দায়টা অবশ্য এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলেরও নয়। তাহলে কার? শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চারিত আসালাঙ্কার কথাটাই শুনে নিন আগে, ‘আমার এখনো খুব ঘুম পাচ্ছে...।’ জিম্বাবুয়েতে সিরিজ খেলে আজই দুবাইয়ে এসে পৌঁছেছে তাঁর দল। সেটির জন্যই পুরো আয়োজনকে সরিয়ে নিতে হয়েছে ম্যাচ শুরুর দিনে।
আমার মনে হয় না এটা আদর্শ, এখানে আসার আগে আমরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম এটা নিয়ে। আপনার খেলা আবুধাবিতে, আপনি থাকছেন দুবাইয়ে। দুবাই থেকে গিয়ে আবুধাবিতে তিন ম্যাচ খেলবেন।রশিদ খান, অধিনায়ক, আফগানিস্তান
তবে সেটি যে কারণেই হোক, ম্যাচের দিন সকালে এত সব আয়োজন তো আর ভালো লাগার কথা নয় কারও। তা লাগেনি আফগানিস্তানের অধিনায়ক রশিদ খানেরও, ‘আমার মনে হয় না এটা আদর্শ, এখানে আসার আগে আমরাও নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম এটা নিয়ে। আপনার খেলা আবুধাবিতে, আপনি থাকছেন দুবাইয়ে। দুবাই থেকে গিয়ে আবুধাবিতে তিন ম্যাচ খেলবেন। এটা ব্যতিক্রমী, তবে একজন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে। আপনি যখন মাঠে থাকবেন, তখন সব ভুলে যেতে হবে।’
এরপর অবশ্য পুরোনো অভিজ্ঞতা দিয়ে এখানকার বাস্তবতা সামলে নেওয়ার কথাও বলেছেন রশিদ, ‘কোনো কোনো দেশে আমরা দু-তিন ঘণ্টা বিমানভ্রমণের পরই খেলতে নেমে যাই। আমি মনে করতে পারি, বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে খেলতে নেমেছিলাম। আমাদের মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে, মানসিকভাবে শক্ত হতে হবে। এ জন্যই আমরা পেশাদার। আমরা যদি ভ্রমণ নিয়ে অভিযোগ করি, তাহলে মাঠের পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়বে। যখন খেলায় ঢুকব, শতভাগ দিতে হবে।’