বাংলাদেশকে ফাইনালে যেতে আবার লাগবে সাইফের ‘ফায়ার’

সাইফ হাসান ভারতের বিপক্ষেও দারুণ ব্যাট করেনএএফপি

শোয়েব মালিক উর্দু–ইংরেজি মিশিয়ে বললেন, ‘আগার বাংলাদেশ কো ফাইনালমে পৌঁছনা হ্যায়, হি হ্যাজ টু ফায়ার।’

কে? সাইফ হাসান।

পাকিস্তানের লাইভ স্ট্রিমিং শো ‘ট্যাডম্যাড’–এর ‘গেম অন হ্যায়’ অনুষ্ঠানে সাইফকে নিয়ে মালিক শুধু এই কথাতেই থামেননি। একটু মজাও করলেন, ‘বল আকাশে উঠছিল, কেউ ধরতে পারছিল না, ভাগ্যটাও ভালো ছিল। তবে সে ভালো ব্যাটসম্যান। প্রতিভা আছে। স্ট্রাইকও অদলবদল করে খেলতে পারে।’

টি–টোয়েন্টি তো আসলে বল আকাশে তোলারই খেলা। সাইফকে তাই ঝুঁকি নিতেই হয়েছিল। ভারতের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচে স্কোরবোর্ডে তাঁর নামের পাশে লেখা থাকবে ৫১ বলে ৬৯ রান। কিন্তু ম্যাচটা দেখে থাকলে  অনেকে বলতে পারেন, চারবার ক্যাচ মিসে ‘জীবন’ পাওয়া ইনিংসের প্রশংসা এতটা কেন!

আবারও মনে করিয়ে দেওয়া দরকার—খেলাটা টি–টোয়েন্টি। দ্রুত রানের জন্য তুলে মারাই ব্যাটসম্যানের ‘ধর্ম’। ক্যাচ উঠলে আর সেটা ফসকে গেলে, ব্যাটসম্যানের কী করার আছে! তবে সাইফের ছক্কা মারার চেষ্টার সময়টা খেয়াল করলে তাঁর পরিণতিবোধের প্রশংসা করতেই হয়। ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে প্রথম ‘জীবন’ পান তিনি। তখন ৫৩ বলে দরকার ৯৩ রান, হাতে ৬ উইকেট। এখান থেকেই ঝুঁকি নিতে শুরু করেন। গত চার–পাঁচ বছরে বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি ব্যাটিং দেখলে বোঝা যায়, এ এক ব্যতিক্রমী মানসিকতা। রান তাড়ায় চাপে পড়ে নিজেদের কথা ভাবার অভিযোগ আছে অনেকের বিরুদ্ধে। সাইফ সেদিক থেকে আলাদা। তাঁর ৫টি বড় ছক্কাই তার প্রমাণ।

এশিয়া কাপে দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলোকে চমকে দিয়েছেন সাইফ
এএফপি

পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা নিশ্চয়ই তা দেখেছেন। তাদের ভিডিও অ্যানালিস্টও হয়তো সাইফের ব্যাটিং কৌশলের খুঁটিনাটি তুলে ধরেছেন বোলারদের সামনে। আজ এশিয়া কাপে সুপার ফোরে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তানের অলিখিত সেমিফাইনাল।

আরও পড়ুন

সঞ্চালক যখন বলছিলেন, ‘সাইফকে দেখে মনে হয়েছে আলাদা পিচে ব্যাট করেছে’—মালিক তখন যেন সতর্কবার্তাই দিলেন পাকিস্তানি বোলারদের, ‘ডাউন দ্য উইকেটে সে শক্তিশালী। সামনে খেলে। ধারাবাহিক মনে হওয়ার কারণ ওখানকার পিচ মন্থর। সামনের পায়ে সোজা খেললে রান পাওয়া যায়। আর এই (দুবাইয়ের) কন্ডিশনে সে মানানসই। খেয়াল করবেন, যত ছক্কা মেরেছে সবই সামনে। শুধু একটি মিড উইকেটে, সেটাও শর্ট বলে।’

মালিক ভুল বলেননি। তবে ছোট্ট সংশোধন করা যায়। অক্ষর প্যাটেলের বলে মিড উইকেটে যে ছক্কাটি মেরেছেন সাইফ, সেটা টেনে নয়, সোজা ব্যাটেই সীমানা পার করেছেন। আর কন্ডিশন? বাবার কাজের সুবাদে জীবনের প্রথম ১০ বছর কেটেছে সৌদি আরবে। তারপর দেশে ফেরেন ক্রিকেটের টানে। আরবের গরম হাওয়া–জলে বেড়ে ওঠা সাইফের কাছে আমিরাতের কন্ডিশন নতুন কিছু নয়।

আরব আমিরাতের কন্ডিশনে ভালো মানিয়ে নিয়েছেন সাইফ
এএফপি

ব্যাটিং কৌশল? টেস্টের ব্যাকরণ শিখেই হাতেখড়ি তাঁর। ২০২০ সালে অভিষেক টেস্ট ওপেনার হিসেবে। তবে টিকে থাকতে পারেননি। এক বছর পর টি–টোয়েন্টি অভিষেক। এই সংস্করণে ২০২১ থেকে এখন পর্যন্ত মাঝেমধ্যে বাদ পড়ে আবার ফিরেছেন। পাঁচ বছরে ১১ টি–টোয়েন্টি আর ৬ টেস্ট খেলেছেন। এশিয়া কাপের আগে প্রতিপক্ষের পরিকল্পনায় তাঁর নাম ছিল না বললেই চলে। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪৫ বলে ৬১ রানের ইনিংসের পর ভারত ও পাকিস্তানকে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে। ভারত কাল দেখেছে, আজ পাকিস্তানের পালা।

আরও পড়ুন

মালিক সাইফের সোজা ব্যাটে খেলার কথা বলছিলেন। সেটাই তাঁর টেস্ট টেকনিক। টি–টোয়েন্টিতে সেই টেকনিকের সঙ্গে যোগ হয়েছে পাওয়ার হিটিং। গত ২৮ আগস্ট বিসিবির ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, কোচ জুলিয়ান উডের অধীনে অনুশীলন করছেন সাইফ। সেখানেই নিজের রূপান্তরের গল্প বলেছিলেন, ‘আমি আমার ঘাটতিগুলো নিয়ে কাজ করেছি। লেগ সাইডে কিছু শট আয়ত্তের চেষ্টা করেছি। স্পিন বলে রেঞ্জ হিটিংটা বাড়ানোর চেষ্টা করেছি।’

এখন প্রশ্ন, পাকিস্তানের বোলিং সাইফকে কীভাবে সামলাবে, কিংবা সাইফ কীভাবে সামলাবেন পাকিস্তানের বোলিং? ওপেনার হিসেবে তাঁকে নতুন বলে মুখোমুখি হতে হবে শাহিন আফ্রিদির। প্রথম ওভারে উইকেট নেওয়া আফ্রিদির অভ্যাস—২১ বার করেছেন এ কাজ। সাধারণত ডানহাতিদের বিপক্ষে ভেতরে ঢোকানো বল করেন, এলবিডব্লু বা বোল্ডের ফাঁদে ফেলতে। সঙ্গে ইয়র্কারও মারেন। মালিকের মতে, সাইফ যেহেতু সামনের পায়ের খেলোয়াড়, তাই আফ্রিদির বিপক্ষে তাঁকে সাবধান হতে হবে। ব্যাকফুটে খেললে বল খেলার জন্য সময় পাওয়া যায়, ঝুঁকিও কমে।

ভারতের স্পিন আক্রমণে ছিল প্রচুর বৈচিত্র্য। কুলদীপ ও বরুণকে ভালোভাবেই সামলেছেন সাইফ। পাকিস্তানের স্পিন আক্রমণ সে তুলনায় দুর্বল। লেগ স্পিনার আবরারকে চাপে ফেলতে পারলে পাকিস্তানকে হয়তো ‘খণ্ডকালীন’ বোলারদের আনতে হবে। তখন কাজটা সহজ হয়ে যাবে। অন্য দুই পেসার হারিস রউফ ও ফাহিম আশরাফ সুইং পাচ্ছেন না। মালিকও বলছিলেন, ‘আবুধাবির উইকেট পেসারদের জন্য সহায়ক, কিন্তু দুবাই মন্থর।’

মন্থর উইকেটে অবশ্য ব্যাটসম্যানেরও সমস্যা হয়। কিছু শট আগেভাগে খেলা হয়ে যায়। কাল অক্ষরের বিপক্ষে সাইফ এমন দুটি বলে পুশ করতে গিয়ে তুলে দিয়েছিলেন। এসব এড়িয়ে যেতে পারলে সাইফের কাছ থেকে ফিফটির ‘থ্রি-পিট’ (টানা তিন) আশা করাই যায়।