তামিমের কাউন্সিলরশিপ নিয়ে ভুতুড়ে আপত্তি

তামিম ইকবালইনস্টাগ্রাম

বিসিবির সংশোধিত নির্বাচনী তফসিলে আজ ছিল খসড়া ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি গ্রহণের দিন। নির্বাচন কমিশনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৩০টির মতো আপত্তি জমা পড়েছে বলে বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। এসব আপত্তির ওপর আগামীকাল শুনানি হবে।

আপত্তিগুলোর মধ্যে একটি বেশ ভুতুড়ে ও রহস্যজনক। ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের হয়ে তামিম ইকবালের কাউন্সিলরশিপের বিরুদ্ধে আপত্তিটি সাবেক ক্রিকেটার হালিম শাহর স্বাক্ষরে জমা পড়লেও হালিম শাহ বলেছেন, এ রকম কোনো চিঠিই নাকি তিনি নির্বাচন কমিশনে দেননি। যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে কানাডাপ্রবাসী হালিম শাহ বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি, ৮-১০ দিন আগে ক্রিকেট বোর্ডেও গেছি। কিন্তু আজ যাইনি। কোনো চিঠিতেও সই করিনি। এটা কোত্থেকে এল, আমি জানি না।’

আরও পড়ুন

আপত্তিতে দাবি করা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর না নেওয়ায় বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তামিম কাউন্সিলর হতে পারেন না। এ ছাড়া তামিম ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কেউ নন এবং তাঁকে ক্লাবের কাউন্সিলর করার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলেও দাবি করা হয়েছে আপত্তিপত্রে।

প্রথম আলো কার্যালয়ে তামিম ইকবাল
প্রথম আলো

অথচ এ বছরের ১০ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম। সে খবর স্থানীয়-আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। সম্প্রতি তিনি এ–ও বলেছেন, বিসিবিতে এলে আর ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলবেন না। তামিম ওল্ড ডিওএইচএস ক্লাবের কেউ নন বলে যে দাবি করা হয়েছে, সেটিও সত্যি নয় বলে জানিয়েছেন ক্লাবের সভাপতি খালেদ মাহমুদ, ‘তামিম ক্লাবের সদস্যই শুধু নয়, সে আমাদের ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক। তাকে কাউন্সিলর করে পাঠানোর চিঠিতে আমি সই করেছি।’

আরও পড়ুন

বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদের কাউন্সিলর ফরম বিসিবিতে জমা পড়েছিল ২২ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা দুয়েক পর। নির্ধারিত সময়ের পর ফরম জমা পড়ায় তাঁর কাউন্সিলরশিপ নিয়েও ৮-১০টি আপত্তি জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। মোহামেডানের কাউন্সিলর মাসুদুজ্জামান স্বাক্ষরিত আপত্তিপত্রে ফারুকের ফরম বাতিলের অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই দাবি তেজগাঁও ক্রিকেট একাডেমির সৈয়দ বোরহানুল হোসেনের, ‘কাউন্সিলরদের ফরম জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল সন্ধ্যা ছয়টা, কিন্তু ফারুক আহমেদের ফরম জমা পড়েছে রাত সাড়ে আটটায়। এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

বিসিবির সাবেক সভাপতি ফারুক আহমেদ
প্রথম আলো

দুদকের পর্যবেক্ষণে গত কয়েক বছরে তৃতীয় বিভাগ বাছাই থেকে ওঠা ১৮টি ক্লাবের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আবার তৃতীয় বিভাগ বাছাইয়ে নেমে যাওয়া ৩টি ক্লাব ছাড়া বাকি ১৫টি ক্লাবকে এবার কাউন্সিলরশিপ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সেই ১৫টি ক্লাবের পক্ষেও গতকাল নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি পড়েছে।

আরও পড়ুন

ক্লাবগুলোর একটি ভাইকিংস ক্রিকেট একাডেমি থেকে কাউন্সিলর হওয়ার কথা ছিল বর্তমান বোর্ডের পরিচালক ও মিডিয়া কমিটির প্রধান ইফতেখার রহমানের। আজ বিকেলে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশনে আপত্তি জমা দিয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘দুদক একটি অভিযোগ দিয়েছেমাত্র, ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে সে অভিযোগ এখনো প্রমাণিত হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। সে জন্য বিসিবির সভায় এই ১৫টি ক্লাবকে নির্বাচনে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তাহলে নির্বাচন কমিশন তাদের বাদ দেয় কীভাবে?’

আরও পড়ুন

বাদ পড়া আরেক ক্লাব নাখালপাড়া ক্রিকেটার্স থেকে কাউন্সিলর হওয়ার কথা ছিল সাবেক বিসিবি পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার। আপত্তি জানানোর পর তিনিও একই দাবি করেছেন সাংবাদিকদের কাছে। তবে আপত্তি জানাতে গিয়ে নির্বাচন কমিশানারদের কারও সঙ্গে কথা বলতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লোকমান বলেন, ‘আমার ধারণা ছিল, এখানে নির্বাচন কমিশনাররা থাকবেন, ওনাদের হাতে জমা দেব, ওনাদের সঙ্গে কথা বলব, ওনারাই রিসিভ করবেন। কিন্তু যিনি রিসিভ করেছেন, তাঁকে আমি চিনি না। আমি বাধ্য হয়েছি ওনাকে জিজ্ঞেস করতে, আপনি কে? ওনারা তখন বলেন, “আমরা সিআইডি থেকে আসছি।”’

অবশ্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেইনকে প্রধান করে গঠিত বিসিবির তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনে আছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির অতিরিক্ত আইজিপি সিবগাত উল্লাহও। কমিটির অপর সদস্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নির্বাহী পরিচালক (যুগ্ম সচিব)।

কাউন্সিলরদের তালিকায় না থাকা সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থাসহ আরও দু-একটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে তাদের তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ এসেছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। তবে কোনো আপত্তির বিষয়েই নির্বাচন কমিশনের কেউ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি।

আরও পড়ুন