বিপিএল: শুরুর আগেই রীতিমতো ‘সার্কাস’

বিপিএল শুরু হচ্ছে আজপ্রথম আলো

‘এটাই নিয়তি!’

মুখে সহজাত হাসিটা রেখেই কথাটা বললেন হাবিবুল বাশার। চট্টগ্রাম রয়্যালসের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকার প্রস্তাব পেয়েও মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব নিতে রাজি হননি। এবারের বিপিএলে টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য হিসেবে নিজের কাজটা করবেন আর অবসর সময়টা গলফ খেলে কাটাবেন—বিপিএলের সিলেট পর্ব নিয়ে হাবিবুলের পরিকল্পনা ছিল এ রকমই।

কিন্তু বিপিএল শুরুর এক দিন আগে ‘নিয়তি’ হাবিবুলকে সেই চট্টগ্রাম দলেরই টিম ডিরেক্টর বানিয়ে দিয়েছে! নাটকীয়তার শুরু আজ সকাল ১০টায়। চট্টগ্রাম রয়্যালসের স্বত্বাধিকারী আবদুল কাইয়ুম ইমেইলে বিসিবিকে জানান, প্রত্যাশিত পৃষ্ঠপোষক না পাওয়ায় দলের মালিকানা ছেড়ে দিতে চান। ঘণ্টাখানেক পর বিসিবি সিদ্ধান্ত নেয়, তারাই চট্টগ্রাম রয়্যালস পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। ক্রিকেটারদেরও আশ্বস্ত করা হয়, চুক্তির কাগজ থাকলে তাঁদের দেওয়া হবে পুরো পারিশ্রমিক।

এর আগেই বিপিএলের টেকনিক্যাল কমিটি থেকে হাবিবুল বাশারকে পদত্যাগ করিয়ে চট্টগ্রামের টিম ডিরেক্টর বানিয়েছে বিসিবি। আগে মেন্টর ও ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে থাকা তুষার ইমরান এখন শুধুই চট্টগ্রামের ব্যাটিং কোচ। আগের প্রধান কোচ মুমিনুল হক হয়ে গেছেন সহকারী কোচ। প্রধান কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মিজানুর রহমানকে আর ম্যানেজার হয়েছেন নাফিস ইকবাল।

রাগ করে সহকারী কোচকে নিয়ে হোটেলে চলে গিয়েছিলেন নোয়াখালীর কোচ খালেদ মাহমুদ
প্রথম আলো

সকালে অভূতপূর্ব এই ঘটনার রেশ থাকতে থাকতেই দুপুরে হঠাৎ সিএনজিতে চড়ে বসেন নোয়াখালী এক্সপ্রেসের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ। টিম বাসে করে মাঠে আসার আধা ঘণ্টার মধ্যে কেন তিনি সিএনজি করে চলে গেলেন? উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, অনুশীলনে আসার পর নাকি মাত্র ৩টি বল দেওয়া হয় সহকারী কোচ তালহা জুবায়েরকে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েই খালেদ মাহমুদের মাঠ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। নোয়াখালী এক্সপ্রেসের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকবেন না বলেও জানিয়ে যান তখন। কয়েক ঘণ্টা পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অবশ্য বলেন, ‘হিট অব দ্য মোমেন্টে’ ওই ঘটনা হয়ে গিয়েছিল, নোয়াখালীর সঙ্গে তিনি টুর্নামেন্টজুড়েই থাকবেন।

আরও পড়ুন

এর মধ্যেই চমকে দেওয়ার মতো কথা জানান নোয়াখালী এক্সপ্রেসের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক। খালেদ মাহমুদ নাকি এমন এক কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের পর রাগ করে মাঠ ছেড়েছেন, যাঁকে ফিক্সিংয়ের অভিযোগে বিপিএলের ‘অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা’ দেওয়ার কথা ১৭ ডিসেম্বর ফ্র্যাঞ্চাইজিটিকে জানিয়েছেন বিসিবির ইন্টেগ্রিটি ইউনিটের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল। তবে তাঁর কাছ থেকে সবকিছু বুঝে না নিতে পারায় এখনো ফ্র্যাঞ্চাইজিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ওই কর্মকর্তা।

রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন
বিসিবি

বিপিএলের গত আসরে ফিক্সিংয়ের বিস্তর অভিযোগের পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ৯০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয়। সেটির ওপর ভিত্তি করেই এবারের বিপিএলে ৯ জন ক্রিকেটার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ না করেই ‘নিষিদ্ধ’ করে বিসিবি। একটি সূত্র জানিয়েছে, সে তালিকায় দুই কর্মকর্তার নাম ওঠার পরই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানা ছাড়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম রয়্যালস। সকালে এসব ঘটনা যখন ঘটেনি, তখন সংবাদ সম্মেলনকক্ষে আসেন রাজশাহী ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। কিন্তু সেখানে এসে দেখেন, পেছনে বিজ্ঞাপনের কোনো বোর্ড নেই—সেখান থেকে বেরিয়ে তাই নাজমুল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাজশাহীর টিম বাসের সামনে দাঁড়িয়ে।

আরও পড়ুন
আমার মনে হয়, এ ধরনের টুর্নামেন্ট আর্থিক ও মাঠের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা ক্রিকেটার, এটাই আমাদের পেশা, এটাই আমাদের রুটিরুজি। এখান থেকে আমাদের পরিবার চলে।
নাজমুল হোসেন, অধিনায়ক, রাজশাহী ওয়ারিয়র্স

বিজ্ঞাপন বোর্ড থাকবেই–বা কীভাবে, তখনো যে বিপিএলের টাইটেল স্পনসরই চূড়ান্ত করতে পারেনি বিসিবি! মাঠের চারপাশ ঘিরে থাকা ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বোর্ডও দেখা যায়নি মাঠে। এ নিয়ে জানতে চাইলে গভর্নিং কাউন্সিলের এক সদস্য জানালেন, ‘ওগুলো বেনাপোলে আটকে আছে।’ এমন ঘটনাপ্রবাহে বিসিবি যে ‘চাপে’ আছে, তা স্বীকার করেছেন গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্যসচিব ইফতেখার রহমান। বিশৃঙ্খল, এলোমেলো আর ছন্নছাড়া অবস্থায় শুরু করতে পারলেও বিপিএল শেষ করতে পারবেন তো? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা কঠিন অবস্থার মধ্যে আছি। সবাই মিলে টুর্নামেন্টটা চালু রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন
সিলেট টাইটানসের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ
বিসিবি

শুরুর আাগের দিন এসব ‘সার্কাস’–এর মধ্যেই আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে বিপিএল। বেলা তিনটায় রাজশাহী ওয়ারিয়র্স ও সিলেট টাইটানসের ম্যাচের আগে হওয়ার কথা রয়েছে ১৫ মিনিটের একটা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও। রাত পৌনে আটটায় নোয়াখালী এক্সপ্রেসের মুখোমুখি হবে চট্টগ্রাম রয়্যালস। প্রথম ম্যাচের দুই দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টেস্ট অধিনায়ক। সংবাদ সম্মেলনে দুজনই বলেছেন, সমালোচনা-বিতর্ক ছাপিয়ে ক্রিকেটটাই তাঁদের কাছে মুখ্য।

নাজমুলের কথা, ‘আমার মনে হয়, এ ধরনের টুর্নামেন্ট আর্থিক ও মাঠের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যারা ক্রিকেটার, এটাই আমাদের পেশা, এটাই আমাদের রুটিরুজি। এখান থেকে আমাদের পরিবার চলে। পাশাপাশি ক্রিকেটটা খেলি, খেলাটা আমরা ভালোবাসি। খেলাটা শুরু হচ্ছে, এটা আমাদের স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য বড় সুযোগ।’
আপাতত বিতর্ক পেছনে ফেলতে পারে মাঠের ক্রিকেটই!

আরও পড়ুন