১০০০ উইকেট হারমারের, তাঁর পর কি আর কেউ পাবেন
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে গতকাল নোমান আলীকে আউট করে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৫২তম উইকেটটি পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অফ স্পিনার সাইমন হারমার। ৫২ সংখ্যাটা বিশেষ কিছু না। তবে নোমান আলীর উইকেটটা হারমারের জন্য অবশ্যই বিশেষ। কারণ, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নোমান হয়েছেন হারমারের ১০০০তম শিকার! চার্লি লুয়েলিন (১০১৩), মাইক প্রোক্টর (১৪১৭) ও অ্যালান ডোনাল্ডের (১২১৬) পর দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ ক্রিকেটার হিসেবে মাইলফলকটি ছুঁয়েছেন হারমার।
১০০০ উইকেটের এই ক্লাবে ইদানীং নতুন সদস্যের দেখা পাওয়াও একটা বিরল ঘটনা। সেই হিসাবেও হারমারের কীর্তিটা বিশেষ। কতটা বিরল, সেটা একটা উদাহরণ দিলেই আরও স্পষ্ট হবে। এখনো খেলছেন এমন ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ১০০০ উইকেটের কাছাকাছি আছেন আর মাত্র একজন। আর সেই একজন হলেন শ্রীলঙ্কার ২৮ বছর বয়সী বাঁহাতি স্পিনার মালিন্দা পুষ্পকুমারা, প্রথম শ্রেণিতে আপাতত যার উইকেট সংখ্যা ৯৮০টি।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এক হাজার উইকেট পাওয়া ১০০ সেঞ্চুরির চেয়ে কিছুটা সহজ মনে করা হয়। পরিসংখ্যানও বলছে, এই সংস্করণে এক হাজার উইকেটের দেখা পেয়েছেন ২১৭ জন বোলার। একই সংস্করণে ১০০টি সেঞ্চুরি পেয়েছেন মাত্র ২৫ ব্যাটসম্যান। সর্বশেষ ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান মার্ক রামপ্রকাশ ২০০৮ সালে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০০টি সেঞ্চুরির দেখা পান। তখন অনেকেই বলেছিলেন, রামপ্রকাশের পর আর কেউ সম্ভবত এই মাইলফলক ছুঁতে পারবেন না। কথাটা মিথ্যা হয়নি। কারণ, তারপর কোনো পুরুষ ক্রিকেটার এই সংস্করণে ৯০টি সেঞ্চুরির দেখাও পাননি। গত আগস্টে চেতেশ্বর পূজারা অবসর নেওয়ার সময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এ সময়ের খেলোয়াড়দের মধ্যে তাঁর সেঞ্চুরি–সংখ্যাই ছিল সর্বোচ্চ—৬৬।
একইভাবে হাজার উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করার বাস্তব সম্ভাবনাও দিনকে দিন কমছে। হারমারের আগে এই সংস্করণে সর্বশেষ হাজার উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি জেমস অ্যান্ডারসন (২০২১)। এ দুজনের বাইরে ২০০৭ সালের পর এই মাইলফলক ছুঁতে পেরেছেন আর মাত্র তিনজন বোলার—পাকিস্তানের দানিশ কানেরিয়া, শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ ও দীনুকা হেত্তিয়ারাচ্চি।
হাজার উইকেট নেওয়ার ক্লাবের সদস্যপদ কতটা বিরল হয়ে উঠছে, তা বুঝতে তাকাতে হবে আরেকটু গভীরে। ইংল্যান্ডে অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিকেট স্ট্যাটিসটিকশিয়ান অ্যান্ড হিস্টোরিয়ানসের (এসিএস) সদস্য কেভিন জোনস জানিয়েছেন, ষাটের দশকে সবচেয়ে বেশি বোলার এ সংস্করণে এক হাজার উইকেটের দেখা পান। সেই সংখ্যাটা ২৫ জন। পঞ্চাশ এবং সত্তরের দশকে একই মাইলফলক ছুঁয়েছেন ন্যূনতম ২০ জন করে বোলার। তারপর এই মাইলফলকে পৌঁছানো বোলারের সংখ্যা কমেছে।
১৮৬০–এর দশক থেকে হিসাব করলে ২০১০–এর দশকেই সবচেয়ে কমসংখ্যক বোলার এই মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন, মাত্র তিনজন। ২০২০–এর দশকে হারমারসহ এই সংখ্যা দুই—অন্যজন অ্যান্ডারসন। তবে ২০২০–এর দশক শেষ হওয়ার আগেই এ সংখ্যাটা তিনে উন্নীত হতে পারে, শ্রীলঙ্কার মালিন্দা পুষ্পকুমারার আর মাত্র দরকার ২০ উইকেট।
কিন্তু পুষ্পকুমারার পর বর্তমান বোলারদের মধ্যে যাঁরা আছেন, তাঁরা বেশ পিছিয়ে—আগামী মাসে ৩৮ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার নাথান লায়নের এই সংস্করণে উইকেটের সংখ্যা ৮৪৭। লায়নের পর অবস্থান করছেন পাকিস্তানের ৩৫ বছর বয়সী পেসার মোহাম্মদ আব্বাস। তাঁর উইকেটের সংখ্যা ৭৫০।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন বিশাল ব্যস্ত সূচি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে দেশে দেশে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগ। দেশের হয়ে খেলার বাইরে ক্রিকেটারদের মূল ব্যস্ততা এখন সেই লিগগুলোতে। এতে সব ক্রিকেটারেরই প্রথম শ্রেণিতে খেলার হার কমেছে। আর তিন সংস্করণেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা বোলারদের জন্য প্রথম শ্রেণিতে এক হাজার উইকেট নেওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপারই এখন।
৩৬ বছর বয়সী হারমার একটু ব্যতিক্রম। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে তিনি টি–টোয়েন্টি খেলেননি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটেও তাঁকে কেউ খোঁজে না। ইংল্যান্ডে গ্রীষ্মকালে এসেক্স ও শীতে দক্ষিণ আফ্রিকান দলের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেন হারমার। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এ পর্যন্ত খেলেছেন মাত্র ১২টি টেস্ট। পুরো ক্যারিয়ারে তাঁর মূল ব্যস্ততা ছিল প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটেই।
কিন্তু এখনকার যুগের ক্রিকেটারদের আসলে হারমার হয়ে ওঠা একটু কঠিনই।