লারার ফুটওয়ার্ক ছিল মাইকেল জ্যাকসনের মতো, বললেন টেন্ডুলকার

শচীন টেন্ডুলকার ও ব্রায়ান লারাএএফপি

ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস কিংবদন্তি মাইকেল হোল্ডিং বলেছিলেন কথাটা, ‘লারার চেয়ে ভালো স্পিন ও মিডিয়াম পেস খেলা ব্যাটসম্যান আমি দেখিনি।’ শুধু হোল্ডিং নন, আরও অনেকেই স্বীকার করবেন লারার ব্যাটিংয়ে যে শৈল্পিক ছোঁয়া, সেটা সবচেয়ে বেশি ফুটে ওঠে তাঁর পায়ের কাজে। শুধু স্পিনার কিংবা মিডিয়াম পেসার নন, ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষেও তাঁর ব্যাক ফুট ড্রাইভ, কাভার ড্রাইভ কিংবা পুল এবং হুক শটে পায়ের কাজটা যেকোনো ব্যাটসম্যানের কাছে স্বপ্নের মতো।

ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তির পায়ের কাজের ব্যাখ্যায় অনেকেই অনেক রকম উপমা ব্যবহার করেছেন, সামনেও করবেন। শচীন টেন্ডুলকারও তেমনই এক উদাহরণ দিয়েছেন, তবে সেই উদাহরণের মাধুর্যটা একটু অন্য রকম। ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া লারার ব্যাটিং যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মানবেন সেই ‘হাই ব্যাকলিফট’ এবং পায়ের কাজ দেখে কখনো কখনো পপ গানের ‘ড্যান্সার’দেরও কারও কারও মনে পড়েছে। সেই তো একই ছোট ছোট পায়ের কাজ, ছোট ছোট দ্রুতলয়ের মুভমেন্ট। টেন্ডুলকারের কাছে লারার পায়ের কাজ তাই পপ কিংবদন্তি মাইকেল জ্যাকসনের মতো, ‘মাইকেল জ্যাকসন তাঁর ফুটওয়ার্কের বেশ কাছাকাছি থাকবেন।’

মজার বিষয়, টেন্ডুলকার কথাটা বলেছেন প্রয়াত পপ কিংবদন্তির দেশে বসেই। যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক অনুষ্ঠানে কথাটি লারার সামনেই বলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির মালিক। এই অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার স্পিন কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনেরও থাকার কথা ছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি যেতে পারেননি। হলভর্তি দর্শকের অবশ্য মঞ্চে টেন্ডুলকার ও লারার খোলামেলা আড্ডাতেই মন ভরে যাওয়ার কথা।

আরও পড়ুন

সঞ্চালক টেন্ডুলকারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, লারার ব্যাটিংয়ের যে স্টাইল, শরীরের বিভিন্ন অংশ যেভাবে মুভ করে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যে জমাট টেকনিক—এসব মিলিয়ে কোন বিষয়টি তাঁর সবচেয়ে ভালো লাগে? উত্তর শুনুন টেন্ডুলকারের মুখেই, ‘সে ছিল ক্যারিবিয়ান ক্যালিপসো। দারুণ ফুটওয়ার্কে সে ক্যালিপসোকে (নাচের ছন্দ) মাঠেও নিয়ে গেছে। তার ফুটওয়ার্ক নিয়ে একবার কেউ একজন আমার কাছে জানতে চেয়েছিলেন। বলেছিলাম, মাইকেল জ্যাকসনের ফুটওয়ার্কই হয়তো তার সবচেয়ে কাছাকাছি। অবিশ্বাস্য।’

লারার ব্যাটিংয়ের কথা বলতে গিয়ে টেন্ডুলকার নিজেরটাও বললেন, ‘আমার খেলাটা (ব্যাটিং) ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের মতো। আমরা একে অপরের মুখোমুখি হলে নিজেদের সেরাটা বের করে আনতাম। কারণ, যখনই ভারত ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হতো, লড়াইটা হয়ে পড়ত লারা বনাম টেন্ডুলকার। কে বেশি রান করবে, কে দলকে ম্যাচ জেতাবে।’

টেন্ডুলকার মুখোমুখি হওয়ার যে সময়ের কথা বলেছেন, সেটা অনেকের বিচারেই ক্রিকেটের সেরা সময়—আশির দশকের শেষ থেকে পুরো নব্বইয়ের দশক এবং ২০০০–এর পরে কিছু সময়। লারাও মনে করেন এটাই ক্রিকেটের সেরা সময়, ‘শচীন টেন্ডুলকার, মুত্তিয়া মুরালিধরন ও প্রয়াত শেন ওয়ার্নের সময়ে বেড়ে ওঠা—আমার মনে এটাই ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা দুই দশক।’ লারা যখন বলছিলেন, ‘ম্যাকগ্রা, অ্যামব্রোস ও ওয়াসিম আকরামকেও রাখতে হবে’ তখন টেন্ডুলকার তাঁর ভুলটা ধরিয়ে দেন, ‘ব্রায়ান লারার নামটা ভুলে যাচ্ছ!’

আরও পড়ুন

টেস্ট ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডের মালিক লারা তাঁর সময়ের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে বর্তমান সময়ের ব্যাটসম্যানদের কিছু পার্থক্যও তুলে ধরলেন। লারার ভাষায়, ‘টি-টেন ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটা দেখা যায় না—বোলার হাত থেকে কেমন ডেলিভারি ছাড়ছে সেটা এখন অনেক ব্যাটসম্যানই দেখে না। রান তোলার চাপটা এত বেশি যে শর্ট বল কিংবা হাফ ভলির অপেক্ষায় থেকে সবাই সীমানার বাইরে পাঠাতে চায়।’

টেন্ডুলকার এ সময় তরুণ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের একটি পরামর্শও দেন, ‘আজকের প্রজন্ম সবকিছু এখনই চায়। আমার বিশ্বাস, তুমি হয় এটা “ঠিকভাবে পেতে পারো” কিংবা ‘‘এখনই’’ পেতে পারো। “এখনই চাই” বলতে (ক্রিকেটে) কিছু হয় না। মুরালি এর উদাহরণ। ১৮ মাস ধরে সে নেটে দুসরা অনুশীলন করেছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচে চেষ্টা করেনি। একটাই কারণ—কোনো কিছু বেশি বেশি করতে গিয়ে সে নিজের প্রধান অস্ত্রটা হারাতে চায়নি—অফ স্পিন।’

দুই সংস্করণেই অন্তত ১০ হাজার করে রান করা লারা ও টেন্ডুলকারের এই খোলামেলা আড্ডায় একটি উত্তর জানার বাকি ছিল। টেন্ডুলকার তো লারার ব্যাটিং নিয়ে বললেন, কিন্তু লারা টেন্ডুলকারের ব্যাটিং নিয়ে কী ভাবেন?

শুনুন লারার মুখেই, ‘একবার আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আমি শচীনের ব্যাটিং সম্পর্কে কী ভাবি। বলেছিলাম, আমার যদি কোনো ছেলে থাকত, আমি চাইতাম সে যেন শচীন টেন্ডুলকারের মতো ব্যাট করে।’