উইকেট–জুজুর মধ্যেই সিরিজ জয়ের ম্যাচ

দুষ্টুমি করেই সতীর্থ সাইফ হাসানকে কাঁধে তুলে নিয়েছেন নাসুম আহমেদ। তবে একদিক দিয়ে এটাও হয়তো একটা অনুশীলন। মিরপুরের স্পিন উইকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের বাকি দুই ওয়ানডের আগে দলে এসে ম্যাচ জেতানোর দায়িত্বটাও কি কাঁধে নেবেন এই বাঁহাতি স্পিনার? গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেশামসুল হক

প্রায় সব সিরিজেই মিরপুরের উইকেট নিয়ে কৌতূহল থাকে। তবে এবার ‘উইকেট কেমন’ প্রশ্নটা যেন একটু বেশিই আলোড়ন তুলছে। প্রশ্নটা জানা থাকলেও উত্তর খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুই দলই।
তবে এটা অনায়াসেই বলে দেওয়া যায় যে আজ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে স্পিনসহায়ক উইকেটই থাকবে। যে কৌশলে অতিথি দলকে প্রথম ওয়ানডেতে হারিয়েছে বাংলাদেশ, একই কৌশলে বাকি দুটি ম্যাচও জিতে র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে যাওয়া লক্ষ্য তাদের।
সেই উদ্দেশ্যে আগে থেকেই বাংলাদেশ দলে তিন বিশেষজ্ঞ স্পিনার থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে দলে নেওয়া হয়েছে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে। প্রথম ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকেই দলে স্পিন–বিষ বাড়ানোর এমন সিদ্ধান্ত।

উইকেট বোঝার চেষ্টা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের
প্রথম আলো

ওয়েস্ট ইন্ডিজও বসে নেই। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে বাঁহাতি স্পিন অলরাউন্ডার আকিল হোসেনকে দলে নিয়ে স্পিন শক্তি বাড়িয়েছে তারাও। সঙ্গে নেওয়া হয়েছে বাঁহাতি পেসার র‌্যামন সাইমন্ডসকেও। অবশ্য পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগে থেকেই টি–টোয়েন্টি দলে থাকা আকিলের ঢাকায় আসার কথা গতকাল গভীর রাতে, সাইমন্ডস ও জেসন হোল্ডার আসবেন আজ সকালে। টি–টোয়েন্টি দলের আরেক সদস্য রোভম্যান পাওয়েলের আসার কথা ২৩ অক্টোবর রাতে। যেহেতু শেষ দুই ওয়ানডের আগে ঢাকায় চলে আসছেন, আকিল ও সাইমন্ডসকে ওয়ানডে দলেও ঢুকিয়ে দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাঁদের জায়গা দিতে চোটের কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে শামার জোসেফ ও জেডাইয়া ব্লেডসকে।
মিরপুরের উইকেট এমনই এক ধাঁধা যে সব জেনেও এখানে প্রায়ই বোকা বনে যেতে হয়। সেই ফাঁদে নিজেদের পড়ে যাওয়ার ভয় তাই তাড়া করছে বাংলাদেশ দলকেও। মাঝমাঠে উইকেট ঘিরে জটলা বেঁধে মিনিট ১৫ আলোচনা করতে দেখা গেল তাদেরও। পরে লম্বা সময় ধরে সেন্টার উইকেটে নাসুম আহমেদ, রিশাদ হোসেন আর তানভীর আহমেদদের সামলেছেন ব্যাটসম্যানরা। পরে সংবাদ সম্মেলনে দলের স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ বলেন, ‘তাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, কাল (আজ) আমরা খেলব, পরিস্থিতিটা এ রকম... খেলার মাঝের সময়গুলো এমন হতে পারে।’

আরও পড়ুন
রিশাদ কি আজও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারবেন (বল ধরতে লাফিয়ে ওঠা)!
প্রথম আলো

ইনিংসের মাঝের সময় নিয়ে দুশ্চিন্তাটা বেড়েছে প্রথম ওয়ানডেতেই। রিশাদের ৬ উইকেটের সৌজন্যে ম্যাচটা বাংলাদেশ ৭৪ রানে জিতে গেলেও ঘরের মাঠের উইকেটে ব্যাটসম্যানরা সুবিধা করতে পারেননি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই স্পিনার খারি পিয়েরে ও রোস্টন চেজের ২০ ওভারে মাত্র ৪৭ রান করেছে বাংলাদেশ, ধরে রেখেছে ওয়ানডেতে অলআউট হওয়ার ধারাবাহিকতাও। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে স্পিনারদের পছন্দমতো সাজিয়ে নেওয়া ফিল্ডিং পজেশনের মধ্যেই দৌড়ে এক–দুই রান নেওয়ার প্রস্তুতি চলেছে লম্বা সময় ধরে।
চ্যালেঞ্জটা বেশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের জন্যই। বাংলাদেশের বোলারদের সামনে দলটির ব্যাটসম্যানরা রীতিমতো অসহায়ই হয়ে পড়েছিলেন। ক্যারিবীয়রা ৮টি উইকেটই দিয়েছে বাংলাদেশের স্পিনারদের। দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে সফরকারীদের একটাই মন্ত্র, উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা পিয়েরে বলেন, ‘উইকেট স্পিনারদের জন্য সহায়ক। কিন্তু আমাদের যেকোনো উইকেটেই খেলতে হবে। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন
উইকেট নিয়ে ভাবছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজও (মাঝে)
প্রথম আলো

ওয়েস্ট ইন্ডিজ তা না পারলে বাংলাদেশের সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে আজই। ২০১১ সালের পর থেকে ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ দল। এবারের সিরিজের আগে ১২টি ওয়ানডে সিরিজে দুই দলের জয়ের সংখ্যা ছিল সমান ৬। আজ তা ছাড়িয়ে সিরিজ জয়ের পাল্লাটা নিজেদের দিকে ভারী করার সুযোগ বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশের আশাটা অবশ্য শুধু সিরিজ জয়ে সীমাবদ্ধ নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ধবলধোলাই করে তাদের র‍্যাঙ্কিংয়ে পেছনে ফেলাটাও লক্ষ্য। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে ২০২৭ সালের মার্চের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ের অন্তত সেরা নয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
বাকি দুই ম্যাচ জেতার একটা মন্ত্রও দিলেন মুশতাক, ‘বিশ্বাসই সবকিছু। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টেম্পারমেন্ট আর বিশ্বাসই আসল।’ নতুন কোনো কথা নয় এটি। অবশ্য মিরপুরের উইকেটে খেলা হলে পুরোনো অনেক মন্ত্রই নতুন করে জপতে হয়।

আরও পড়ুন