অস্ট্রেলীয় ফর্মুলায় ভারতের ‘পাইপলাইন’ তৈরি করছেন রাহুল দ্রাবিড়

রাহুল দ্রাবিড় অস্ট্রেলীয় ফর্মূলায় তৈরি করছেন ভারতের ক্রিকেটের ভিত।ছবি: এএফপি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের সাফল্য, দলে প্রতিভার গভীরতা—এসবের পেছনে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির ভূমিকাই বড় বলে মানেন অনেকে। জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার মাটি থেকে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় সে ধারণাকে আরও উসকে দিয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) সভাপতি ও ভারতের কিংবদন্তি অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী সরাসরিই ভারতের এ সাফল্যের নেপথ্য নায়ক হিসেবে উল্লেখ করেছেন তাঁর সাবেক সতীর্থ, ‘দ্য ওয়াল’ রাহুল দ্রাবিড়ের নাম। এবার অস্ট্রেলীয় গ্রেট গ্রেগ চ্যাপেল রাহুলকে প্রশংসায় ভাসালেন। তবে অস্ট্রেলীয় কায়দায় বললেন, দ্রাবিড় ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য যে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করছেন, সেগুলো করছেন অস্ট্রেলীয় পদ্ধতি অনুসরণ করেই।

ভারতীয় ক্রিকেটে তরুণেরাই এখন শক্তির উৎস।
ছবি: এএফপি

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চ্যাপেলের ভাষ্য, ‘ভারতীয় ক্রিকেট উন্নতি ও প্রতিভা অন্বেষণের সব অনুষঙ্গকে এক করতে পেরেছে। এর পেছনে বড় ভূমিকা রাহুল দ্রাবিড়ের। সে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মস্তিষ্ক গ্রহণ করেছে এবং ভারতের মতো বিপুল জনসংখ্যা ও আয়তনের একটা দেশে সেটি সাফল্যের সঙ্গে প্রয়োগ করেছে।’

গ্রেগ চ্যাপেল যখন কোচ ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের।
ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভারতের পাইপলাইন বা রিজার্ভ বেঞ্চ, যা-ই বলা হোক না কেন, সেটি সবাইকে অবাক করছে। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া সফরের শেষ টেস্ট, অর্থাৎ ইতিহাসে ঠাঁই করে নেওয়া ব্রিসবেন টেস্টে ভারত জিতেছে তৃতীয় সারির দল নিয়ে। চার টেস্টের সিরিজের শেষ তিনটিই ভারতীয় দল খেলেছে তাদের ‘মূল ভরসা’ বিরাট কোহলিকে ছাড়া। চোট সমস্যা সিরিজের প্রতিটি টেস্টে ভারতকে ভুগিয়েছে। সে কারণে কোনো টেস্টেই দল নিয়ে থিতু হতে পারেনি ভারতীয় ম্যানেজমেন্টে। ব্রিসবেনের সিরিজনির্ধারণী টেস্টে তো চোট সমস্যা এমন প্রকট আকার ধারণ করে যে একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল ভারত কীভাবে ১১ জন নিয়ে মাঠে নামবে। কিন্তু সে টেস্টে মূল স্কোয়াডের বাইরের খেলোয়াড়েরাই ছিলেন জয়ের মূল কারিগর।

জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে ভারত বুঝিয়ে দিয়েছে তাদের রিজার্ভ বেঞ্চের জোর কতটুকু।
ছবি: এএফপি

রাহুল দ্রাবিড়ের একটা বড় অবদান আছে এই জায়গায়। তিনি তরুণদের নিয়ে কাজ করছেন বরাবরই। ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ ও ‘এ’ দলের কোচ হিসেবে জাতীয় ক্রিকেট দলের রিজার্ভ বেঞ্চ পোক্ত করতে ভূমিকা আছে তাঁর। এখন সে ভূমিকাটা আরও বড় পরিসরে তিনি রাখছেন জাতীয় ক্রিকেট একাডেমির প্রধান হিসেবে। নবীন প্রতিভা সৃষ্টিতে রাহুলের মস্তিষ্ক যে অবদান রেখেছে, সে কারণেই ভারতীয় জাতীয় দলে তারকারা না থাকলেও দল বিপাকে পড়ে যায় না। দলটাকেও দুর্বল দেখায় না। অস্ট্রেলিয়া সফর এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ—শীর্ষ দুই দলের বিপক্ষে দুটি টেস্ট সিরিজই এর বড় উদাহরণ হয়ে আছে।

গ্রেগ চ্যাপেল কেবল রাহুলের পরিকল্পনার প্রশংসা করেই থামেনি। নিজের সাবেক কর্মস্থলকে (একসময় ছিলেন ভারতীয় দলের কোচ ছিলেন গ্রেগ চ্যাপেল, তখন তিনি সৌরভ গাঙ্গুলীকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে রাহুল দ্রাবিড়কে অধিনায়ক করেছিলেন) এ মুহূর্তে নিজে দেশ থেকেও এগিয়ে রাখছেন গ্রেগ চ্যাপেল, ‘প্রতিভা অন্বেষণ ও পরিচর্যার যে ব্যাপারটিতে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সুনাম ছিল, সে জায়গাটা আমরা অনেকটাই হারিয়েছি। বরং আমাদের অনুসরণ করে ভারত এটাতে আরও ভালো করছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ইংল্যান্ডও প্রতিভার পরিচর্যায় আমাদের চেয়ে সফল।’