আলোনসো কি আসলেই ভিনিসিয়ুসকে পছন্দ করেন না, কী সমস্যা দুজনের

এল ক্লাসিকোকে বদলি হয়ে যাওয়ার পর কোচের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভিনিসিয়ুসএএফপি

ভিনিসিয়ুস জুনিয়র কি তাহলে সত্যিই রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়ার কথা ভাবছেন? জাবি আলোনসো কি আসলেই তাঁকে পছন্দ করেন না?
দুই দিন ধরে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যার সারমর্ম হচ্ছে, ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সত্যি সত্যি রিয়াল ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন। তিনি নাকি বুঝে গেছেন, আলোনসোর মন জয় করা তাঁর পক্ষে হয়তো আর সম্ভব নয়। আর এই আশঙ্কাই তাঁকে এমন সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আসলে আলোনসো রিয়াল মাদ্রিদের কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে ভিনিসিয়ুসের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে, তবে সেটা প্রথমবার প্রকাশ্যে এসেছে গত রোববার রাতে লা লিগায় সর্বশেষ এল ক্লাসিকোতে। দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হওয়ার পর ভিনির ক্ষোভ যেন বিস্ফোরিত হয়!

ভিনিসিয়ুস–আলোনসোর সম্পর্কে ফাটলের গুঞ্জন
রয়টার্স

বার্সেলোনার বিপক্ষে সেই ম্যাচটা শেষ হওয়ার ২০ মিনিট আগে ভিনিকে তুলে নেন আলোনসো, বদলি নামান রদ্রিগোকে। ভিনি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি কোচের সিদ্ধান্ত। মাঠ ছাড়ার সময় টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাঁর বিস্মিত মুখ, মুখে প্রশ্ন, ‘আমি? আমি? কোচ, আমি?’
তারপরই সোজা টানেলে চলে যান। হেঁটে যেতে যেতে যেন নিজেকেই বলছিলেন, ‘সব সময়ই আমি! আমি দল ছেড়ে দিচ্ছি, হ্যাঁ, আমি চলে যাচ্ছি।’ কিছুক্ষণ পর অবশ্য আবার ফিরে এসে বেঞ্চে বসেন ম্যাচের শেষ সময়টা দেখার জন্য।

আরও পড়ুন

স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক স্পোর্তকে ভিনির ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, আলোনসোর সঙ্গে ভিনির সম্পর্কটা এখন ভাঙনের শেষ সীমায়। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মনে করছেন, এই সম্পর্ক আর জোড়া লাগার নয়।
ম্যাচের পর রিয়াল মাদ্রিদ টিভিতে দেওয়া ভিনির সাক্ষাৎকার আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ২-১ গোলে ম্যাচ জয়ের উচ্ছ্বসিত পোস্ট দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, সব কিছু ঠিক আছে। কিন্তু আরেক স্প্যানিশ ক্রীড়া দৈনিক এএসের প্রতিবেদন বলছে, বাস্তবতা মোটেই তেমন নয়।

আলোনসোর অধীন নিজের ভূমিকা নিয়ে ভিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তিনি মনে করেন, বিষয়টা আর এভাবে চলতে পারে না। পরিবর্তন না এলে রিয়ালে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেই হবে তাঁকে। তাঁর বিশ্বাস, আলোনসো তাঁকে পছন্দ করেন না।

মৌসুম শুরুর আগে আলোনসোর অনুরোধে নিজের রক্ষণ দক্ষতা বাড়াতে বাড়তি কাজ করছেন ভিনি, কিন্তু প্রত্যাশিত ফল মেলেনি। বরং বিশ্বসেরা ফরোয়ার্ডদের একজন হয়েও দল তাঁকে সে মর্যাদা দিচ্ছে না, এটাই তাঁর অভিমান। রিয়ালের জার্সিতে ৩১৬ ম্যাচে ভিনির গোল ১১১টি। ব্রাজিলের হয়ে ৪৩ ম্যাচে ৮ গোল। ২০২২ সালের চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে লিভারপুলের বিপক্ষে একমাত্র গোলটি তাঁর। ২০২৪ সালের ওয়েম্বলির ফাইনালেও ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে জালে বল জড়ান।
মৌসুমের শুরুতেই দুই ম্যাচে বেঞ্চে নাম থাকায় ক্ষোভ জমেছিল। এল ক্লাসিকোতে বদলির সিদ্ধান্তে সেটি বিস্ফোরিত হয়েছে মাত্র। আলোনসো অবশ্য ম্যাচ শেষে জানিয়েছেন, ভিনির সঙ্গে বিষয়টা নিয়ে তিনি আলাপ করবেন।

মাঠ ছাড়ার সময় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভিনিসিয়ুস
রয়টার্স

‘ইএসপিএন’ জানিয়েছে, এল ক্লাসিকোর পর থেকে তাঁদের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। শিগগিরই সতীর্থদের সঙ্গে আলোচনা করে কোচের সঙ্গে মুখোমুখি বসে সমাধান খুঁজতে চান ভিনি। কেন তিনি আলোনসোর দলে ‘উপেক্ষিত’, সেটা বুঝতে চান।
পরিসংখ্যান দেখলে অবশ্য তাঁকে উপেক্ষিত মনে হবে না। লা লিগায় রিয়ালের ১০টি ম্যাচেই শুরুর একাদশে ছিলেন ভিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগেও তিন ম্যাচের দুটিতে খেলেছেন। করেছেন ৫ গোল, করিয়েছেন ৪টি। মাঠের পারফরম্যান্স বলছে, ভিনির ছন্দ এখনো অটুট।

আরও পড়ুন

তবে এটা পুরো গল্প নয়। ‘স্পোর্ত’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিসংখ্যানই তাঁর ক্ষোভের কিছুটা যৌক্তিকতা দিচ্ছে। আলোনসোর অধীন রিয়ালের ১৮ ম্যাচের মধ্যে মাত্র ৪টিতে ভিনি পুরো ৯০ মিনিট খেলেছেন—ক্লাব বিশ্বকাপে জুভেন্টাসের বিপক্ষে আর লা লিগায় লেভান্তে, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে।
তিন ম্যাচে বেঞ্চ থেকে নেমেছেন বিরতির পর। বাকি ১১ ম্যাচে শুরু করলেও শেষ করার আগেই উঠে যেতে হয়েছে। অর্থাৎ আলোনসোর অধীন এখন পর্যন্ত রিয়ালের মোট ম্যাচের মাত্র ২২ শতাংশে ভিনি পূর্ণ সময় খেলেছেন। ২০২০-২১ মৌসুমের পর এত কম সুযোগ আর পাননি।

ভিনিসিয়ুসের ঘনিষ্ঠরা মনে করেন আলোনসো আসলে এই ফরোয়ার্ডকে পছন্দ করেন না।
এএফপি

গত মৌসুমে কার্লো আনচেলত্তির অধীন ২৩ ম্যাচে পুরো সময় খেলেছিলেন, যা মোট ম্যাচের ৪৫ শতাংশ। তার আগের মৌসুমেও চোটের পরও এই হার ৩৬ শতাংশ ছিল। আরও একটা বিষয় ভিনিকে ক্ষুব্ধ করে—আলোনসো প্রায়ই তাঁকে ৭৫ মিনিটের আগেই তুলে নেন। ১১ বার বদলি হওয়া ম্যাচের মধ্যে ৭ বারই এমন হয়েছে।

এটা তাঁর অহংবোধে আঘাত করছে। কারণ, অন্যদিকে কিলিয়ান এমবাপ্পে প্রায় কখনোই বদলি হন না। এই বৈষম্য ভিনিকে পোড়াচ্ছে। রিয়ালে সপ্তাহে ৪ লাখ ইউরোর মতো বেতন পান ভিনিসিয়ুস, এমবাপ্পে পান ৬ লাখ ইউরোর মতো। তাঁর চেয়ে বোনাসও এমবাপ্পের ঢের বেশি।

আরও পড়ুন

এই টানাপোড়েনে আরেকটি বিষয় ভিনির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে—চুক্তি নবায়ন। রিয়ালের সঙ্গে ভিনির বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে আর মাত্র ১৮ মাস বাকি। নবায়ন নিয়ে আলোচনা চলছে কিন্তু অগ্রগতি নেই। শোনা যাচ্ছে, নতুন চুক্তিতে ভিনি বাড়তি বেতন দাবি করেছেন ক্লাবের কাছে। রিয়াল তাতে খুব একটা সাড়া দেয়নি। ফলে এত দিন যে শোনা যাচ্ছিল ভিনির চুক্তি স্রেফ কাগজে সই করাটাই বাকি, এখন মনে হচ্ছে, দিল্লি বহুদূর!
সব মিলিয়ে স্পষ্ট, বার্নাব্যুতে ভিনি সুখে নেই। আর মানুষ যেখানে সুখে থাকে না, সেখানে দীর্ঘদিন থাকেও না।