‘হে মহারাজ, এসো আমাদের সমতলে’—ক্লাব বিশ্বকাপে ‘আন্ডারডগ’দের গর্জন

ফুটবলের তথ্য–উপাত্ত ও পরিসংখ্যান বিশ্লেষণী ওয়েবসাইট ‘অপ্টা অ্যানালিস্ট’ ১১ জুন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ফুটবল লিগগুলোর একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। সেখানে শীর্ষে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, দুইয়ে ইতালিয়ান সিরি আ, তিনে স্প্যানিশ লা লিগা, চারে জার্মান বুন্দেসলিগা ও পাঁচে ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ। এই তালিকা দেখে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের তালিকায় সব সময় এই পাঁচটি দেশের লিগকেই দেখা গেছে।

অর্থাৎ কাগজে–কলমে এ পাঁচটি লিগের যেকোনো দল বিশ্বের অন্য সব লিগের দলগুলোর তুলনায় শক্তিশালী। সে তুলনায় ব্রাজিলিয়ান সিরি আ, পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগ কিংবা সৌদি প্রো লিগের দলের তাদের বিপক্ষে পাত্তা পাওয়ার কথা না। অপ্টা অ্যানালিস্টের তালিকাতে দেখা গেছে, পর্তুগিজ প্রিমেরা লিগের অবস্থান আটে (যেখানে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় বিভাগের লিগও ছয়ে), ব্রাজিলিয়ান সিরি আ নয়ে এবং সৌদি প্রো লিগ ২৯তম।

আরও পড়ুন

এবার আসল কথায় আসা যাক। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ তো দেখছেন? তা, কেমন বুঝছেন? ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের দলগুলোর কী অবস্থা?

ইন্টার মিলানকে দিয়ে শুরু করা যাক। ধারে–ভারে ইন্টারের ধারেকাছেও আসবে না মেক্সিকান ক্লাব মন্তেরেই। তিনবার ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ইন্টার এবার সিরি আ–তে দ্বিতীয় হয়ে মৌসুম শেষ করেছে, শুধু কি তাই, এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালেও উঠেছিল সিরি আ–তে ২০ বারের চ্যাম্পিয়নরা। কিন্তু এই দলটিতেই গত মঙ্গলবার ১–১ গোলে অবিশ্বাস্যভাবে রুখে দেয় মন্তেরেই। এই স্কোরকার্ডকে এমন চোখেও দেখা যায়, এবারের ইউরোপ–সেরার তালিকায় দ্বিতীয় হওয়া দলটি এমন এক দলের কাছে আটকেছে, যারা জনপ্রিয়তায় গোটা ক্লাব মিলিয়েও তাদের একজন খেলোয়াড়কে ছাপিয়ে যেতে পারবে না। সের্হিও রামোস!

মন্তেরেইয়ের সঙ্গে ড্রয়ে মাথায় হাত ইন্টার ফরোয়ার্ড লাওতারো মার্তিনেজের
এএফপি

পরশু রাতে ২৯তম লিগের দল আল হিলালে আটকেছে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফলও দল। রিয়াল মাদ্রিদ! ১৫ বারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করে আল হিলাল।

আরও পড়ুন

অপ্টা অ্যানালিস্টের সেই তালিকায় যুক্তরাস্ট্রের মেজর লিগ সকার ১২তম। গতকাল রাতে এই লিগের ইন্টার মায়ামির কাছে ২–১ গোলে হেরেছে পর্তুগালের অন্যতম সফল দল ও দুবারের ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পোর্তো। গোটা উত্তর ও মধ্য আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চল মিলিয়ে ফুটবলের যে কনফেডারেশন, সেই কনকাক্যাফ অঞ্চলের প্রথম ক্লাব হিসেবে অফিশিয়াল ফিফা টুর্নামেন্টে ইউরোপের ক্লাবকে হারাল মায়ামি।

পিএসজিকে হারিয়ে বোতাফোগোর খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন

সবচেয়ে বড় চমকটি দেখা গেল আজ বাংলাদেশ সময় সকালে পিএসজি–বোতাফোগো ম্যাচে। ফরাসি ক্লাব পিএসজি একদিকে যেমন বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন, ব্রাজিলিয়ান ক্লাব বোতাফোগোও তেমনি দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের চ্যাম্পিয়ন (কোপা লিবার্তোদোরেস)। ভাবতে পারেন, দুই দল যেহেতু দুই মহাদেশের চ্যাম্পিয়ন, তাই এ লড়াই তো অসম নয়। কাগজে–কলমে হয়তো না, কিন্তু এ দুটি মহাদেশের ক্লাব ফুটবলের অবকাঠামো জানা থাকলে এই প্রসঙ্গই হয়তো উঠবে না। চ্যাম্পিয়নস লিগের জনপ্রিয়তা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে কোপা লিবার্তোদোরেসের তুলনাই চলে না। অথচ বর্তমান ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকেই কিনা ১–০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে বোতাফোগো!

আরও পড়ুন

শেষ বাঁশি বাজার পর রোজ বোল স্টেডিয়াম থেকে পিএসজি মালিক নাসের আল খেলাইফির বিষণ্ন মুখে বেরিয়ে যাওয়ার ছবি–ভিডিও ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। খেলাইফির প্রত্যাশায় অন্তত এমন কিছু ছিল না। ক্লাব বিশ্বকাপে ইউরোপিয়ান দলের বিপক্ষে দক্ষিণ আমেরিকান দলের এটাই প্রথম জয়। শুধু তা–ই নয়, ফিফা টুর্নামেন্টে গত ১৩ বছরের মধ্যে এবারই প্রথম বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে জিতল কনমেবলের (দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ) কোনো দল।

চলতি ক্লাব বিশ্বকাপ দর্শকখরায় ভুগলেও মাঠের এসব চমক নিশ্চয়ই সবাই দেখছেন। তাতে আগ্রহ যদি একটু বাড়ে। কারণ, ক্লাব বিশ্বকাপের মাঠে তুলনামূলক কম শক্তিসম্পন্ন দলগুলো আসলে এভাবে খেলে ওয়ারফেজের সেই গানের লাইনের মতোই বার্তা দিচ্ছে, ‘হে মহারাজ, এসো আমাদের সমতলে।’