ম্যান সিটিতে প্রথম ম্যাচেই আলো ছড়ানো এই দুই তারকাকে কতটা চেনেন
ম্যানচেস্টার সিটির গত মৌসুমটা ছিল পুরোপুরি ব্যর্থতায় মোড়ানো। শিরোপাহীন থাকা ছাড়াও পারফরম্যান্সের মান ক্রমেই নিচের দিকে গিয়েছিল। পেপ গার্দিওলার পরিচিত ছন্দও যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে ২০২৫-২৬ মৌসুমকেই নতুন শুরুর মৌসুম হিসেবে দেখছে সিটি। এরই মধ্যে দলে এসেছে বড় পরিবর্তনও।
সিটি ছেড়ে গেছেন বহুদিনের পরীক্ষিত যোদ্ধা ও কিংবদন্তি কেভিন ডি ব্রুইনা। ব্যর্থতার দায়ে ধারে এভারটনে গেছেন ক্লাবের সবচেয়ে দামি ফুটবলার জ্যাক গ্রিলিশ। বিপরীতে ক্লাবটিতে যোগ দিয়েছে বেশ কয়েকটি তরুণ মুখ। যাঁদের দুজনের গতকাল রাতে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেকও হয়ে গেছে। অভিষিক্ত সেই দুই ফুটবলার হলেন তিজানি রেইন্ডার্স ও রায়ান শেরকি।
২৭ বছর বয়সী রেইন্ডার্স গতকাল রাতে উলভসের বিপক্ষে মূল একাদশেই জায়গা পান। সুযোগ পেয়ে গার্দিওলার আস্থার প্রতিদানও তিনি দিয়েছেন দারুণভাবে। শুরু থেকে দুর্দান্ত খেলা রেইন্ডার্স নিজের আসল জাদু দেখান ম্যাচের ৩৪ মিনিটে। নিজেদের অর্ধ থেকে বল পেয়ে আক্রমণে ওঠেন তিনি। এরপর ট্যাকল করতে আসা দুজনকে কাটিয়ে ফ্লিক করে বল বাড়ান রিকো লুইসের উদ্দেশে।
লুইসের পাস থেকে গোল করে সিটিকে এগিয়ে দেন হলান্ড। ৩ মিনিট পরের গোলটা অবশ্য রেইন্ডার্স নিজেই করেছেন। অস্কার ববের পাসে রানিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন এই ডাচ মিডফিল্ডার। এরপর হলান্ডের করা তৃতীয় গোলটিরও নেপথ্য নায়ক ছিলেন তিনি। আক্রমণ তৈরিতে সহায়তার পাশাপাশি চমৎকার এক ব্যাকপাসে হলান্ডকে অ্যাসিস্টও করেছেন রেইন্ডার্স।
সিটিতে অভিষেকেই আলো ছড়ালেও, রেইন্ডার্সের মুগ্ধতার গল্প নতুন নয়। এর আগে এসি মিলানের হয়েও নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। গত মৌসুমে সিরি আ’র বর্ষসেরা দলে জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি নির্বাচিত হয়েছিলেন লিগের বর্ষসেরা মিডফিল্ডারও। সতীর্থদের গোল বানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি নিজেও লক্ষ্যভেদে সিদ্ধহস্ত।
সেই প্রতিভার জোরেই মূলত গার্দিওলার নজর কেড়েছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে রেইন্ডার্সের পারফরম্যান্স দেখে গার্দিওলা বলেছেন, ‘খুব ভালো পারফরম্যান্স। সে দারুণ একজন মানুষ। প্রথম দিন থেকেই সে তার ছাপ রেখেছে। তার গতি দারুণ, সে হোল্ডিং মিডফিল্ডেও সাহায্য করতে পারে। সে ডিফেন্ডাররা যে জায়গা তৈরি করে, সেই ফাঁকা জায়গাগুলোকে দারুণভাবে ব্যবহার করতে পারে। মিলানে সে ছিল অসাধারণ, আর জাতীয় দলেও। আমরা জানতাম, আগামী কয়েক বছরের জন্য সে সিটির দারুণ এক সাইনিং হবে।’
১৯৯৮ সালে নেদারল্যান্ডসে জন্ম নেওয়া রেইন্ডার্স খেলা শুরু করেন মাত্র ৫ বছর বয়সে। তাঁর বাবা মার্টিন রেইন্ডার্স এবং ভাই এলিয়ানি রেইন্ডার্স দুজনই ছিলেন ফুটবলার। বয়সভিত্তিক পর্যায়ে তিনটি আলাদা ক্লাবে খেলে প্রস্তুত হন পেশাদার ফুটবলের জন্য। ২০১৭ সালে পিএইসি জভলার হয়ে প্রথম পেশাদার ম্যাচ খেলা রেইন্ডার্স খেলেছেন ইয়ং এজেড, এজেড ও এআরসি ভালভাইকে।
২০২৩ সালে মিলানে যোগ দেওয়ার পরই সত্যিকারের ঝলক দেখাতে শুরু করেন। মিলানের পারফরম্যান্সই মূলত তাঁকে জায়গা করে দিয়েছে সিটিতে। এ ছাড়া জাতীয় দল নেদারল্যান্ডসের হয়েও এরই মধ্যে ২৩ ম্যাচ খেলে ৪ গোল করেছেন রেইন্ডার্স।
নিজের গতি, নিয়ন্ত্রণ আর কৌশল কাজে লাগিয়ে সব সময় সক্রিয় রাখেন মিডফিল্ড। সুযোগ পেলে আক্রমণ গড়ে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সে ভাঙন ধরাতে পারেন। গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদেরও খেলার মধ্যে আনতে সিদ্ধহস্ত। দলের প্রয়োজনে প্রেসিংয়েও সমান কার্যকর।
তাঁর প্রতিভা নিয়ে সাবেক ইংলিশ ফরোয়ার্ড অ্যালেন শিয়ারার বলেছেন, ‘সে ছিল দুর্দান্ত, প্রায় নিখুঁত এক মিডফিল্ড পারফরম্যান্স ছিল এটা। অবিশ্বাস্য। সে নিজের গতিতেই পুরো খেলাটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। তার বিপক্ষে খেলা ভীষণ কঠিন, কারণ সে সব সময় সক্রিয়। যেভাবে সে দৌড়েছে, সেটাই ম্যান সিটির জন্য ছিল মূল চাবিকাঠি। সে বারবার দৌড়েছে আর দৌড়েই গেছে। উলভসের কাছে এর কোনো উত্তর ছিল না।’
তবে শুধু রেইন্ডার্স নয়, আলো কেড়েছেন আরেক নবাগত রায়ান শেরকিও। ২২ বছর বয়সী শেরকি গতকাল সিটির হয়ে ম্যাচের শেষ গোলটি করেছেন। গতকাল বদলি নামা শেরকির ওপর সিটির আস্থা কতটা প্রবল, সেটা একটা তথ্য দিয়েই বোঝা যাবে। গ্রিলিশ ধারে এভারটনে যাওয়ার পর তাঁর ১০ নম্বর জার্সিটা এই শেরকিই পেয়েছেন।
শেরকির জন্ম ২০০৩ সালে ফ্রান্সের লিওঁতে। সেন্ট প্রিস্টের হয়ে তাঁর ফুটবলের হাতেখড়ি। কিন্তু তাঁর মাঝে ফুটবলের ভিত গড়ে দেয় লিওঁ। ৯ বছর এই ক্লাবের বয়সভিত্তিক দলে কাটানোর পর ২০১৯ ক্লাবটির মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর। ৬ বছর লিওঁতে কাটিয়ে এ মৌসুমে শেরকি এসেছেন সিটিতে।
লিগে গতকাল রাতে অভিষেক হলেও, সিটির জার্সিতে আগেই খেলা হয়েছে শেরকির। ক্লাব বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচ খেলে ১ গোল এবং ১টি অ্যাসিস্টও করেছেন তিনি। আর এবার লিগের অভিষেকেও পেলেন দারুণ এক গোল। এখন পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সিটির হয়ে বড় শিরোপা জিততে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।