লড়াইটা ফ্রান্সের আক্রমণের সঙ্গে মরক্কোর রক্ষণের

বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একটা আত্মঘাতী গোল ছাড়া আর কোনো গোল খায়নি মরক্কো। ফ্রান্সের আক্রমণভাগ ৫ ম্যাচে করেছে ১১ গোল।

ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি ফ্রান্স–মরক্কোরয়টার্স

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে জয়ের পাশাপাশি ফ্রান্স আরও একটা স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল। ওই ম্যাচে ফ্রান্সের কাউকে চোট পেতে হয়নি, কার্ডের খড়্গেও পড়তে হয়নি। তার মানে কোচ দিদিয়ের দেশম আজ মরক্কোর বিপক্ষে সেমিফাইনালে তাঁর পুরো স্কোয়াডই পাচ্ছেন একাদশ বেছে নেওয়ার জন্য। বলা যায়, টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত ফ্রান্স ওদের সবচেয়ে কঠিন ম্যাচটা খেলেছে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে জয়ী একাদশে তাই মনে হয় না পরিবর্তন আনতে চাইবেন দেশম। তার মানে আজও ৪-২-৩-১ ছকে খেলতে দেখা যেতে পারে ফ্রান্সকে।

গোলপোস্টের সামনে যথারীতি উগো লরিস, তাঁর সামনে দুই সেন্টারব্যাক দায়োত উপামেকানো ও রাফায়েল ভারানে। রক্ষণের বাঁ পাশে থাকবেন থিও এরনান্দেজ, ডানে জুলস কুন্দে। মাঝমাঠে অরেলিয়াঁ চুয়ামেনি ও আদ্রিয়াঁ রাবিওর সামনে আঁতোয়ান গ্রিজমান। আক্রমণভাগের দুই পাশে কিলিয়ান এমবাপ্পে ও উসমান দেম্বেলের সামনে অলিভিয়ের জিরু।

মরক্কো অবশ্য আগের ম্যাচের মতো একই একাদশ নিয়ে খেলতে পারবে না। অধিনায়ক রোমেইন সাইস পর্তুগালের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে চোট পেয়ে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছেড়েছেন। একটা পরিবর্তন তাই নিশ্চিতই। এ ছাড়া চোটের কারণে শেষ আটের ম্যাচে মাঠেই নামতে পারেননি ফুলব্যাক নুসাইর মাজরাউয়ি ও সেন্টারব্যাক নায়েফ আগুয়ের্দ। আজ এই দুজনকে পাওয়া গেলেও শুরু থেকেই খেলানো হবে কি না, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া কোয়ার্টার ফাইনালে বদলি নামা ফরোয়ার্ড ওয়ালিদ শেদিরা লাল কার্ড দেখায় সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে গেছেন।

সেমিফাইনালের আগে অনুশীলনে ফ্রান্স দল
ছবি: রয়টার্স

মরক্কোর কোচ ওয়ালিদ রেগরাগুই আজও তাঁর পছন্দের ৪-৩-৩ ছকেই থাকবেন সম্ভবত। সে ক্ষেত্রে গোলরক্ষক ইয়াসিন বুনোর সামনে আশরাফ হাকিমি, জাওয়াল এল ইয়ামিক, ইয়াহিয়া আত্তিয়াত-আল্লাহর সঙ্গে দেখা যেতে পারে আশরাফ দারিকে। মাঝমাঠে যথারীতি সোফিয়ান আমরাবাত, আজেদিন উনাহি ও সেলিম আমাল্লাহ। আক্রমণভাগে হাকিম জিয়েশ, ইউসেফ এন-নেসরির সঙ্গে সোফিয়ান বুফাল।

মূলত এ ম্যাচে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের সঙ্গে মরক্কোর রক্ষণের লড়াই হওয়ার কথা। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একটা আত্মঘাতী গোল ছাড়া আর কোনো গোল খায়নি মরক্কো। ফ্রান্সের আক্রমণভাগ ৫ ম্যাচে করেছে ১১ গোল, যার মধ্যে এমবাপ্পে একাই করেছেন ৫টি, জিরু ৪টি। ৪-৩-৩ ছকে খেললেও বল পায়ে না থাকলে ফ্রান্স ৪-১-৪-১ ছকে চলে যায়।

আরও পড়ুন

আবার পর্তুগালের বিপক্ষে ম্যাচটার শেষ আধঘণ্টা মরক্কো ১ গোলের লিড ধরে রাখার জন্য ৫-৪-১ ছকেও খেলেছে। এই জমাট রক্ষণ স্পেনের বিপক্ষে সফল, পর্তুগালের বিপক্ষেও। তবে ফ্রান্স মরক্কোর সামনে আসবে নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

সেমিফাইনাল সামনে রেখে মরক্কোর অনুশীলন
ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের গোলের সুযোগ তৈরি করার পেছনে ওদের দুই ফুলব্যাকের বড় ভূমিকা থাকে। থিও এরনান্দেজ ও জুলস কুন্দে, দুজনকেই দেশম স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন বল পায়ে থাকলে যতটা পারা যায় এগিয়ে গিয়ে আক্রমণে যোগ দেওয়ার। এ দুজনের মধ্যে আবার এরনান্দেজ একটু বেশি আক্রমণাত্মক মনোভাবের।

আরও পড়ুন

কুন্দে যেহেতু মূলত সেন্টারব্যাক, তাঁর মাথায় রক্ষণ সামলানোর চিন্তা সব সময়ই থাকে। এরনান্দেজের সঙ্গে এমবাপ্পের বোঝাপড়া দারুণ। এ দুজনের ওঠানামা মাঠে প্রতিপক্ষের কাজ খুব কঠিন করে তোলে। মরক্কোর কোচের জন্য আজ চ্যালেঞ্জ হবে এরনান্দেজ-এমবাপ্পের যোগাযোগটা বিচ্ছিন্ন করা।

স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুকে মূলত ‘টোপ’ হিসেবে ব্যবহার করেন দেশম। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের মনোযোগ ও পজিশন দুটিই এলোমেলো করে দিতে পারেন জিরু। সুযোগটা নেন এমবাপ্পে। তবে ফ্রান্সের খেলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এখন পর্যন্ত পালন করে গেছেন গ্রিজমান। নির্দিষ্ট কোনো দায়িত্ব না দিয়ে তাঁকে ‘ফ্রি-রোলে’ খেলাচ্ছেন দেশম। ফলে গ্রিজমান হয়ে উঠেছেন ফ্রান্সের মাঝমাঠের প্রাণ। কখনো তিনি নিচে নেমে ডিফেন্ডারদের সাহায্য করছেন, কখনো এগিয়ে গিয়ে আক্রমণভাগের তিনজনের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন।

আজও কি পার্থক্য গড়ে দিতে পারবেন গ্রিজমান
ছবি: রয়টার্স

ফ্রান্সের হয়ে এই বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন গ্রিজমানই। মরক্কোর মাঝমাঠের প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে তাঁকে এত স্বাধীনভাবে ছোটাছুটি করতে না দেওয়া। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড এই কাজগুলো অনেকাংশেই খুব সফলভাবে করেছে। তারপরও চুয়ামেনি ও জিরুর গোল ঠেকাতে পারেনি।

আরও পড়ুন

এমন অপ্রতিরোধ্য ফ্রান্সের সামনে চোটে কাবু মরক্কো, আপাতদৃষ্টে তাই একটাই ফল অনুমান করা যাচ্ছে—ফ্রান্সের জয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কাতার বিশ্বকাপে যাবতীয় অনুমান, যাবতীয় হিসাব-নিকাশ ওলট–পালট করে দিয়েই এই পর্যন্ত এসেছে অ্যাটলাসের সিংহরা। আরও একবার যে করবে না, তা সাহস করে কে বলতে পারবে!