নবাগত কাইরাত বনাম মহারথী রিয়াল: ম্যাচের আগে আলোচনায় ভূগোল
চ্যাম্পিয়নস লিগে লিগ পর্বের ড্রয়ের আগেই বড় চমক হয়ে আসে দলটি। অলিম্পিয়া, কুপিএস ও স্লোভান ব্রাতিস্লাভাকে হারানোর পর কাইরাত আলমাতি যা করেছে, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য।
চ্যাম্পিয়নস লিগে লিগ পর্বের ড্রয়ের আগেই সবচেয়ে বড় চমক হয়ে আসে দলটি। স্লোভেনিয়ার অলিম্পিয়া লিউব্লিয়ানা, ফিনল্যান্ডের কুপিএস ও স্লোভাকিয়ার স্লোভান ব্রাতিস্লাভাকে হারানোর পর কাজাখস্তানের কাইরাত আলমাতি যা করেছে, তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। এমন কিছু যা সম্ভবত দলটির অন্ধ ভক্তরাও ভাবতে পারেননি।
বাছাইয়ের প্লে-অফে তারা চমক দেখিয়ে হারিয়ে দেয় সেল্টিকের মতো সাবেক ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নকে। সেই ম্যাচের পর থেকেই মূলত আলোচনায় দ্বিতীয় কাজাখ ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের মূল পর্বে উঠে আসা কাইরাত। এর আগে ২০১৫-১৬ মৌসুমে কাজাখ ক্লাব আস্তানা প্রথমবারের মতো খেলেছিল ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ এই প্রতিযোগিতায়।
সেল্টিককে হারানোর পর কাইরাত দ্বিতীয়বার আলোচনায় এসেছে পরশু রাতে লিগ পর্বের ড্রয়ের পর। লিগ পর্বে কাইরাত ঘরের মাঠে আতিথ্য দেবে চারটি ক্লাবকে। যেখানে ক্লাব ব্রুগা, অলিম্পিয়াকোস ও পাফোসের পাশাপাশি আছে রিয়াল মাদ্রিদ।
স্বাভাবিকভাবেই রিয়ালের বিপক্ষে খেলা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত চ্যাম্পিয়নস লিগের নবাগত ক্লাবটি। তবে এই ম্যাচ নিয়ে যে বিষয়টি বেশি আলোচনায়, সেটি হলো মাদ্রিদ থেকে কাইরাতের মাঠের দূরত্ব।
কাইরাতের মাঠ আলমাতি সেন্ট্রাল স্টেডিয়াম চীনের সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাশাপাশি কাজাখস্তানের ৮৫ শতাংশ অংশ পড়েছে এশিয়ায়। ফলে এই কাজাখ শহর আলমাতি যে মাদ্রিদ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত, তা বলাই বাহুল্য।
তবে কাগজে–কলমে দূরত্ব বিবেচনায় নিলে চোখ নিশ্চিতভাবেই কপালে উঠবে। সরাসরি ফ্লাইট ধরলেও রিয়ালকে পাড়ি দিতে হবে ৬ হাজার ৪০০ কিলোমিটার পথ। সরাসরি ফ্লাইট নেই। ট্রানজিটসহ মাদ্রিদ থেকে যেতে লাগে প্রায় ১২ ঘণ্টা।
শুধু দূরত্ব নয়, ভিনিসিয়ুস-এমবাপ্পেদের ভোগাতে পারে শহরটির আবহাওয়াও। আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩১ ডিগ্রি পৌঁছাতে পারে আর ডিসেম্বর মাসে তা শূন্যের নিচে সাত ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে আসে। উদাহরণস্বরূপ আজ শুক্রবার ২৯ আগস্ট আলমাতির তাপমাত্রা যেখানে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে মাদ্রিদের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে তাপমাত্রার এই পার্থক্যও রিয়ালের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।
এরপর আসে সময়ের পার্থক্য। ইউরোপের প্রায় সব প্রধান রাজধানী শহরের মধ্যে সময়ের পার্থক্য এক ঘণ্টার বেশি নয়। তবে আলমাতি প্রায় সব ইউরোপিয়ান শহরের চেয়ে তিন ঘণ্টা এগিয়ে। মাদ্রিদের সঙ্গেও আলমাতির সময়ের পার্থক্য তিন ঘণ্টা। এর ফলে খেলোয়াড়দের ভ্রমণক্লান্তির শিকার হওয়ার আশঙ্কাও আছে।
আবহাওয়া, দূরত্ব ও সময়ের দিক থেকে আলমাতি নিশ্চিতভাবে সুবিধা পাবে। তবে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও পরিসংখ্যানে রিয়ালের সঙ্গে তাদের তুলনা করার কোনো সুযোগই নেই। বরং রিয়ালের বিপক্ষে খেলতে পারাটাই তাদের জন্য বিশাল এক অভিজ্ঞতার ব্যাপার হতে যাচ্ছে।
স্থানীয়ভাবে কাইরাত বেশ জনপ্রিয় দল। ভক্ত-সমর্থকদের কাছে তাদের ডাকনাম ‘নারোদনায়া কমান্ডা’ যার অর্থ হচ্ছে জনগণের দল। কারণ, ১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের আগপর্যন্ত তারা একমাত্র দল হিসেবে কাজাখ জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছিল।
বর্তমান দলে কাজাখ খেলোয়াড়দের পাশাপাশি একজন ইসরায়েলি (ড্যান গ্লেজার), দুজন পর্তুগিজ (লুইস মাতা ও জর্জিনিও) এবং চারজন ব্রাজিলিয়ানও (এদমিলসন, এলদের সান্তানা, রিকার্দিনিও ভিয়ানা ও জোয়াও পাওলো) আছেন।
দূরত্ব নিয়ে ঝামেলায় পড়ার বিষয়টি রিয়ালের জন্য যেমন সত্য, তেমনি কাইরাতের জন্যও। কাইরাতকে সব মিলিয়ে ভ্রমণ করতে হবে চারবার। ইন্টার মিলান, আর্সেনাল, স্পোর্তিং লিসবন ও কোপেনহেগেনের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলতে যেতে হবে ইতালি, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল ও ডেনমার্কে। ফলে একই রকম দূরত্ব পাড়ি দিয়েই খেলতে যেতে হবে তাদের।
এর মধ্যে অবশ্য পর্তুগালের লিসবনে যেতে তাদের পাড়ি দিতে হবে সাত হাজার কিলোমিটার পথ, যা চ্যাম্পিয়নস লিগে নতুন রেকর্ডও বটে। অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নস লিগ নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাটা দূরত্বের দিক থেকেও কাইরাতের জন্য স্মরণীয় হতে যাচ্ছে।