বিশ্বকাপের ম্যাচ এখন ১০০ মিনিটের!

ওয়েলস অধিনায়ক গ্যারেথ বেলছবি: এএফপি

একটা করে মিনিট পার হয়, আর গ্যারেথ বেলের বিরক্তি বাড়ে। তাঁর মনে হয় খেলা শেষ। কিন্তু রেফারির শেষ বাঁশি তো বাজে না। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ শেষের লম্বা বাঁশি যখন বেজে ওঠে, ততক্ষণে পার হয়ে যায় ৯ মিনিট।

মাঠ ছাড়ার পরও এ নিয়ে বিরক্তি কমে না ওয়েলস অধিনায়কের। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকার কথায় একই সঙ্গে বিস্ময় ও প্রশ্ন, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যোগ করা সময় ৯ মিনিট। বুঝতে পারছি না এত সময় কোথা থেকে এল?’

দ্বিতীয়ার্ধে ৯ মিনিটের আগে প্রথমার্ধেও ছিল বাড়তি ৫ মিনিট। শুধু ওয়েলস-যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাচটিতেই নয়, কাতার বিশ্বকাপে প্রথম তিন দিনে হওয়া প্রতিটি ম্যাচেই ‘অ্যাডেড টাইম’ ছিল ১০ মিনিটের বেশি। নব্বই মিনিটের ম্যাচ গিয়ে ঠেকেছে কমপক্ষে ১০০ মিনিটে। মঙ্গলবার পর্যন্ত হওয়া ৯ ম্যাচে মোট যোগ করা সময় ছিল ১২৫ মিনিট, যা প্রায় দেড় ম্যাচের সমান।

দুই অর্ধ মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি ২৭ মিনিট অতিরিক্ত খেলা হয়েছে ইরান-ইংল্যান্ড ম্যাচে। সৌদি আরবের কাছে অঘটনের শিকার হওয়া আর্জেন্টিনার ম্যাচে খেলা হয়েছে ২১ মিনিট। এ ছাড়া ১৫ মিনিট করে বাড়তি খেলেছে ফ্রান্স-অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েলস। যে ম্যাচে সবচেয়ে কম সময় লেগেছে, কাতার-ইকুয়েডরের সেই ম্যাচও চলেছে ১০০ মিনিট ১৮ সেকেন্ড পর্যন্ত।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপের আগের আসরগুলো তো বটেই, টানা ১০ মিনিটের বেশি যোগ করা সময়ের ম্যাচ আন্তর্জাতিক ফুটবলেও নজিরবিহীন। গ্যারেথ বেলের মতো দর্শকদেরও প্রশ্ন, এবার যোগ করা সময় এত বেশি কেন?

ম্যাচগুলোর দিকে তাকালে অবশ্য আংশিক উত্তর পাওয়া যাবে। প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই বারবার একাধিক মিনিটের জন্য খেলা বন্ধ থেকেছে। ইরান-ইংল্যান্ড ম্যাচে যেমন প্রথমার্ধে আলীরেজা বেইরানভন্দ আর দ্বিতীয়ার্ধে হ্যারি ম্যাগুয়ারের চোটের কারণে খেলা বন্ধ ছিল বেশ কিছুটা সময়। অন্য ম্যাচগুলোতেও গোল উদ্‌যাপন, খেলোয়াড় বদলি, ভিএআর সিদ্ধান্তসহ বিভিন্ন কারণে একাধিকবার খেলা বন্ধের ঘটনা ঘটেছে।

সব মিলিয়ে খেলা বন্ধ বেশি থাকায় সেটি পুষিয়ে দিতেই শেষের দিকে ‘অ্যাডেড টাইম’ বেড়ে গেছে। পাল্টা প্রশ্ন হচ্ছে, এমন বিলম্বের ঘটনা তো আগেও ঘটেছে। তখন তো পোষানোর জন্য এত বেশ মিনিট লাগেনি। এখানেই চলে আসছে ‘সম্পূরক উত্তর’।

আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার সময়-নষ্টের পরিমাণ ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে আনায় মনোযোগ দিয়েছে ফিফা। ফিফার রেফারিজ কমিটির চেয়ারম্যান পিয়েরলুইজি কোলিনা যার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে, ‘আমরা যেহেতু ম্যাচের ভেতর সময় নষ্ট হওয়ার কথা বলি, আমাদের খেলার সময়, নষ্ট হওয়া সময় এবং খেলোয়াড়দের ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করা সময় আলাদা করা উচিত।’

আরও পড়ুন

মূলত ঠিক কতটুকু সময় খেলা হয়েছে, সেটি হিসাব করে অ্যাডেড টাইম নির্ণয় করা হচ্ছে এবার। ২০১৮ বিশ্বকাপে এ ধারা কার্যকর ছিল জানিয়ে সাবেক এই বিশ্বকাপ রেফারি যোগ করেন, ‘আপনাদের মনে থাকতে পারে, রাশিয়াতেও আমরা প্রতিটি অর্ধের শেষে সময়ের ক্ষতিপূরণ নিখুঁতভাবে করার চেষ্টা করেছি। সবাইকে সেটি বলেছিও, চতুর্থ রেফারি ইলেকট্রনিক বোর্ডে ছয়, সাত, আটের মতো বড় সংখ্যা দেখালে অবাক হবেন না।’

৬২ বছর বয়সী কলিনা জানান, খেলোয়াড়েরা থ্রো-ইন বা গোল কিক নেওয়ার আগে ইচ্ছাকৃত যে বিলম্বটুকু করেন, সেটিও এখন সময় নষ্টের কাতারে ফেলা হয়।

ম্যাচের প্রয়োজনীয় অ্যাকটিভ টাইম পূরণ করতে দুই অর্ধের শেষে নষ্ট হওয়া সময় অ্যাডেড টাইম হিসেবে যুক্ত হয়, ‘যে ম্যাচের একটি অর্ধে ৩টি গোল হয়, সেখানে কী পরিমাণ সময় নষ্ট হয় ভেবে দেখুন। একটা উদ্‌যাপনে সাধারণত এক, দেড় মিনিট সময় লাগে। তিনটা গোল হওয়া মানে ৫ থেকে ৬ মিনিট নষ্ট। এই নষ্ট সময়গুলোরই যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে চাই আমরা।’

আরও পড়ুন

অ্যাডেড টাইম কত হবে, সেটি চতুর্থ রেফারি প্রস্তাব করলে প্রধান রেফারি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান কলিনা।