অজয় দেবগন কতটা ‘আবদুল রহিম’ হতে পারলেন
১৯৫২ সালে হেলসিংকি অলিম্পিকে ১০-১ গোলে হেরে বিদায় নেয় ভারতীয় ফুটবল দল। সব দোষ এসে পড়ে কোচ সৈয়দ আবদুল রহিমের ঘাড়ে। তাঁকে সরানোর জন্য বেশ তোড়জোড়ও শুরু হয়। তবে নিজের সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা রহিম হার মানার মতো মানুষ ছিলেন না। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য নতুন করে দল গড়ার অনুমতি চান তিনি।
বোর্ড কর্তাদের আপত্তির মুখেও সেদিন আরেকবার তাঁকে সুযোগ দিতে রাজি হন ফেডারেশন সভাপতি অঞ্জন। এরপর শুরু হয় রহিমের অন্য রকম এক যাত্রা। কিংবদন্তি কোচ আবদুল রহিমের এই যাত্রা উঠে এসেছে পরিচালক অমিত শর্মার ‘ময়দান’ সিনেমায়। পর্দায় বাস্তবের রহিমের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বলিউড তারকা অজয় দেবগন।
দ্বিতীয়বার সুযোগ পেয়ে খেলোয়াড় সংগ্রহের গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় সংগ্রহে জোর দেন রহিম। এরপর পথে-প্রান্তরে ঘুরে মাঠে মাঠে গিয়ে জহুরির দক্ষতায় খেলোয়াড় সংগ্রহ করেন রহিম। আর এভাবে তিনি তৈরি করেন ভারতের ফুটবলের ইতিহাসের অনবদ্য একটি দলকে।
যে দলে একসঙ্গে খেলেছেন পি কে ব্যানার্জি, নেভিল ডি’সুজা এবং চুনি গোস্বামীর মতো তারকারা। যাঁরা এখনো ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের সেরা রত্ন বিবেচিত হন। আর এই ফুটবলারদের গড়ে তোলার কারিগর ছিলেন রহিম। তবে দল নিয়ে আবদুল রহিমের যাত্রাটা মোটেই সহজ ছিল না।
বোর্ড কর্তা শুভংকর এবং সাংবাদিক রয় চৌধুরীর অনাস্থা ও শত্রুতা পদে পদে তাঁকে আটকে দিয়েছে। যার ফলে ১৯৬০ সালের রোম অলিম্পিকে ব্যর্থতার কারণে জায়গা হারাতে হয় রহিমকে। অথচ চার বছর আগে সেই রহিমই মেলবোর্ন অলিম্পিকে দলকে চতুর্থ স্থান পাইয়ে দিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই ফলও তাঁর কোচের পদে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। তবে বিপদ যে শুধু মাঠের লড়াইয়ে এসেছিল, তা নয়, বিপদ এসেছিল ক্যানসারের রূপ নিয়েও। সারাক্ষণ ধূমপান করার অভ্যাসই মূলত মৃত্যুরোগকে ডেকে নিয়ে আসে রহিমের জীবনে।
এরপর শুরু হয় আরেক লড়াই। তবে রহিম হার মানেননি। ক্যানসারের যন্ত্রণা ও হতাশা ভুলতে তিনি আবার ফিরে আসেন ফুটবলের কাছে। কিন্তু সেই ফেরা কি এত সহজ? প্রতিপক্ষ সর্বোচ্চ চেষ্টা করল তাঁর ফেরা ঠেকাতে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পারেনি। অদম্য রহিম আবারও ফিরলেন। সঙ্গে অবশ্য এটাও প্রতিজ্ঞা করলেন যে দলকে যদি সোনার পদক এনে দিতে না পারেন, তবে আর কখনো কোনো দলকে তিনি কোচিং করাবেন না।
নিজেকে প্রমাণের চ্যালেঞ্জ এবং ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়েই দলকে প্রস্তুত করেন রহিম। কিন্তু এরপরও পদে পদে কত বাধা। অর্থ স্বল্পতার কারণে প্রথমে বাতিল করা হয় জাকার্তায় ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে দলের অংশগ্রহণ। এমন পরিস্থিতিতে রহিম নিজে কথা বলেন অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। ঠিক হয় শুধু প্রয়োজনীয় ১৬ জনকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন রহিম। এ জন্য দলে থাকা নিজের ছেলেকেও বাদ দিতে হয় তাঁকে।
জাকার্তায় গিয়েও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে রহিম ও তাঁর দলকে। প্রথম ম্যাচের আগেই চোটের কারণে ছিটকে যান গোলরক্ষক প্রদ্যুত বর্মণ। কিন্তু হার মানেননি রহিম। তারপর আমরা দেখি, কীভাবে রহিম সব প্রতিকূলতা জয় করে ভারতীয় ফুটবল দলকে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে চ্যাম্পিয়ন বানান। শিরোপা জেতার আনন্দ নিয়ে অবশ্য বেশি বাঁচতে পারেননি রহিম। ১৯৬৩ সালের ১১ জুন অন্যলোকে পড়ি জমান ভারতের ইতিহাসসেরা এই কোচ।
কিংবদন্তি এই কোচ রহিমের ভূমিকায় অজয় দারুণ অভিনয় করেছেন। অজয়ের পাশাপাশি সাংবাদিকের ভূমিকায় গজরাজ রাও এবং শুভংকরের ভূমিকায় রুদ্রনীল ঘোষও বেশ ভালো। রহিমের স্ত্রীর ভূমিকায় প্রিয়ামনিকে সপ্রতিভ লেগেছে। অত্যাধুনিক সিজিআই ও ভিএফএক্স বড় পর্দায় ফুটবল ম্যাচ দেখার অভিজ্ঞতাই দেবে। দেশাত্মবোধক সিনেমায় এ আর রাহমানের সুর বরাবরই অন্যমাত্রা যোগ করে, ‘ময়দান’-ও তার ব্যতিক্রম নয়। ছবির আবহসংগীত এবং গান দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে।
২০২৪ সালের ১১ এপ্রিল মুক্তি পাওয়া এই ছবি অবশ্য মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল আরও আগে। করোনা মহামারিসহ নানা কারণে একাধিকবার পিছিয়েছে এই ছবির মুক্তি। বক্স অফিসে খুব ভালো করতে না পারলেও সমালোচকদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে ছবিটি।
একনজরে
ময়দান
পরিচালক: অমিত শর্মা
অভিনয়: অজয় দেবগন, প্রিয়ামনি, গজরাজ রাও, রুদ্রনীল ঘোষ
মুক্তি: ১১ জুলাই ২০২৪
রানটাইম: ৩ ঘণ্টা ১ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৯