লিভারপুলের চ্যাম্পিয়নস লিগ দল থেকে বাদ সালাহ, আলিসন বললেন, ‘কৃতকর্মের দায় নিতে হবে’
মোহাম্মদ সালাহ লিভারপুল তো বটেই, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেরও সর্বকালের সেরাদের তালিকায় থাকবেন। সালাহ যোগ দেওয়ার আগের লিভারপুল ও পরের লিভারপুল একেবারেই ভিন্ন দুটি দল। দীর্ঘ শীতনিদ্রায় থাকা লিভারপুলকে ইয়ুর্গেন ক্লপের হাত ধরে যে কজন ফুটবলার জাগিয়ে তুলেছেন, সালাহ তাঁদের অন্যতম। কিন্তু সেই সালাহই এখন ভাবতে পারেন, এমন তো হওয়ার কথা ছিল না!
লিভারপুলের জার্সিতেই একের পর এক রেকর্ড ভেঙেছেন সালাহ। সাধারণ এক ফুটবলার থেকে হয়ে উঠেছেন ‘মিসরীয় রাজা’। কিন্তু সেই সালাহকে নিয়েই লিভারপুলে এখন তৈরি হয়েছে অস্বস্তিকর এক পরিবেশ, যা সালাহ ও লিভারপুলের মধ্যে আট বছরের বেশি সময়ের সম্পর্ককে নিয়ে গেছে খাদের কিনারায়। এমনকি এ তিক্ততায় সালাহ ও লিভারপুলের বিচ্ছেদের ইঙ্গিতও মিলছে।
গত মৌসুমে লিভারপুলের লিগ শিরোপা জয়ের নায়ক সালাহ এবার যেন নিজের ছায়ায় ডাকা পড়েছেন। ১৯ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৫ গোল। এ কারণে লিভারপুলের সর্বশেষ তিনটি লিগ ম্যাচে মূল একাদশে জায়গা হয়নি তাঁর। এর মধ্যে একটিতে বদলি হিসেব নামলেও অন্য দুই ম্যাচে ছিলেন দর্শক। টানা তিন ম্যাচে এভাবে উপেক্ষিত হওয়ার বিষয়টি মানতে পারেননি সালাহ। ৬ ডিসেম্বর লিডস ইউনাইটেডের বিপক্ষে ৩–৩ গোলে ড্রয়ের পর বিস্ফোরক হয়ে ওঠেন মিসরীয় ফরোয়ার্ড।
লিভারপুলের এই উইঙ্গার বলেন, দলে তাঁকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে। কেউ একজন সব দোষ তাঁর ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। এ সময় লিভারপুল কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে পড়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেন তিনি। সালাহর এ কথাই মূলত আগুন ধরিয়ে দেয়। ভেতর–বাইরে শুরু হয় নানামুখী আলোচনা। ইংলিশ ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি ওয়েইন রুনি বলেছেন, ‘সালাহ লিভারপুলে নিজের সুনামকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।’ এমনকি সালাহর এ মন্তব্যের সমালোচনা করেন তাঁর সতীর্থ লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন বেকারও।
এর মধ্যে গতকাল সোমবার রাতে সালাহকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হয় চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে লিভারপুলের স্কোয়াড। ‘বিদ্রোহী’ সালাহকে শাস্তি দিতেই মূলত তাঁকে আজ রাত ২টায় হতে যাওয়া ম্যাচটির স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইন্টার ম্যাচের আগের সংবাদ সম্মেলনে স্লট বলেন, সালাহর মন্তব্য তাঁকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। তবে লিভারপুল কোচ এটাও বলেন, ‘একজন খেলোয়াড়ের জন্য সব সময় ফিরে আসার দরজা খোলা থাকে।’
সালাহকে স্কোয়াডের বাইরে রাখা প্রসঙ্গে লিভারপুল কোচ বলেন, ‘আমি আগামীকালের (ইন্টারের বিপক্ষে) ম্যাচের জন্য আমার দলকে সবচেয়ে ভালোভাবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করেছি। আমার বেশির ভাগ ভাবনাই আগামীকালের ম্যাচ ঘিরে। এরই মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাকে (সালাহ) এ ম্যাচে আমাদের সঙ্গে না নেওয়ার, আর আগামীকালকের পর আমরা পরিস্থিতি আবার দেখব।’
সালাহকে বাদ দিয়েই ঘোষণা করা হয় চ্যাম্পিয়নস লিগে ইন্টার মিলানের বিপক্ষে লিভারপুলের স্কোয়াড।
সালাহর বিস্ফোরক মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্লট বলেন, ‘এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে একমাত্র মো (সালাহ) নিজেই। আমি অনুমান করতে পারি, কিন্তু আমার মনে হয়, সেটি করা ঠিক হবে না। সে কাদের কথা বোঝাতে চেয়েছে, সেটি আমার জন্য বলা কঠিন। আমরা তাকে জানিয়ে দিয়েছি যে সে আমাদের সঙ্গে (সান সিরোয়) ভ্রমণ করছে না। এটাই ছিল তার সঙ্গে আমার একমাত্র যোগাযোগ। অবশ্য শনিবারের আগে আমরা দুজন অনেক কথা বলেছি—কখনো বেশি সময়, কখনো কম সময়।’
সালাহর মন্তব্যে বিস্মিত স্লট আরও যোগ করেন, ‘যেমনটা সে অনুভব করছে, সেটা করার অধিকার তার আছে, কিন্তু সেটা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে ভাগ করার অধিকার তার নেই।’
সালাহ আবার ক্লাবের হয়ে খেলবেন কি না, এই প্রশ্নের জবাবে স্লট বলেন, ‘আমার কোনো ধারণাই নেই। এই মুহূর্তে আমি প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারছি না।’
সূত্রের বরাত দিয়ে ইএসপিএন জানিয়েছে, স্লটের সঙ্গে আলোচনা করেই সালাহকে স্কোয়াডের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লিভারপুল এবং এতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন ছিল। সালাহর মন্তব্যের ধরন ও সময় বিবেচনায় নিয়ে লিভারপুল মনে করছে, কিছু সময়ের জন্য তাঁকে দল থেকে দূরে রাখা সব পক্ষের জন্যই ভালো। তবে লিভারপুল সালাহর বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না বলেও জানা গেছে।
সালাহর মন্তব্য নিয়ে সমালোচনা করেছেন তাঁরই দীর্ঘদিনের সতীর্থ আলিসন, ‘একটা দলের জন্য বিষয়টা সহজ নয়। তার সঙ্গে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে। আমি দীর্ঘদিন সালাহর সঙ্গে খেলেছি। সে একজন ভালো মানুষ, লিভারপুলের কিংবদন্তি এবং প্রতীকও। বিষয়টা এমন কিছু নয়, যা আমাকে আনন্দিত করে। কিন্তু ফুটবলে এসব নিয়ে কাঁদার মতো সময় খুব একটা নেই। আমাদের উচিত ম্যাচের দিকে মনোযোগ দেওয়া।’
এ সময় সালাহর দল থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে আলিসন বলেন, ‘সালাহ যে দলে নেই, সেটি তার নিজের কাজের ফল। এ পরিস্থিতি নিয়ে আমি এখনো তার সঙ্গে কথা বলিনি, তবে আমি চাই কথা বলতে। সে শুধু আমার সতীর্থ নয়, সে আমার ভালো বন্ধুও। আমি তার ও ক্লাব—দুজনের জন্যই সবচেয়ে ভালোটা চাই। আমি বিশ্বাস করি, তার উদ্দেশ্য অসম্মানজনক ছিল না। সে নিজেকে স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারে, কিন্তু তাকে কৃতকর্মের দায়ও নিতে হবে।’