বিশ্বকাপের মায়েরা যেভাবে মাতৃত্ব আর ফুটবল সামলাচ্ছেন

মেয়ে শার্লিকে কোলে নিয়ে হাস্যোজ্জ্বল যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দলের স্ট্রাইকার অ্যালেক্স মরগানছবি: ইনস্টাগ্রাম

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বকাপ দলের বহরটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্যের বয়স কত? উত্তর যদি হয় মাত্র ৩ বছর, একটু কি অবাক হবেন! অবাক হলেও এটা সত্যি। এই বহরে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রাইকার অ্যালেক্স মরগানের ৩ বছর বয়সী মেয়ে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে এসেছেন। লম্বা সময় দেশের বাইরে থাকতে হবে। তাই ৩ বছরের মেয়েকে বাড়িতে রেখে এসে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে চাননি মরগান!

এবারের নারী বিশ্বকাপে আরও মা আছেন, যাঁরা নিজেদের শিশুসন্তানকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। অনেকের পক্ষে আবার সেটা সম্ভব হয়নি। তাই বিশ্বকাপ খেলতে খেলতেই কখনো কখনো উদাস হয়ে যান তাঁরা, কখনো চোখ ভেসে যায় জলে। শত শত মাইল দূরে বাড়িতে সন্তান কেমন আছে, কী করছে—এসব যখন মনে পড়ে, মনটা এমনিতেই ভারী হয়ে যায় তাঁদের।

জ্যামাইকার খেলোয়াড় চেইনা ম্যাথুসের কথাই ধরা যাক। তিন ছেলের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির কথা মনে পড়তেই গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি ঝরল তাঁর। ছেলে যে তাঁকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমরা সব সময় এত দূরে কেন যাও?’

আরও পড়ুন
১ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন ফ্রান্স দলের মিডফিল্ডার আমেল মাজরি
ছবি: টুইটার

এই কষ্টটা পেতে চান না বলেই কেউ কেউ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে চলমান টুর্নামেন্টে শিশুসন্তানকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। জার্মানির মিডফিল্ডার মেলানি লিউপোলৎস যেমন সঙ্গে নিয়ে এসেছেন ছোট্ট ছেলে আর তার আয়াকে। কিন্তু তাঁর দল যখন মেলবোর্নে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি খেলতে গিয়েছিল, তখন দলের বেস ক্যাম্প সিডনিতে ছেলে আর আয়াকে রেখে গিয়েছিলেন।

মরক্কোকে সেই ম্যাচে ৬-০ গোলে হারানোর পর তিনি একই সঙ্গে মাতৃত্ব আর খেলোয়াড়-সত্তা সামলানো নিয়ে বলেছেন, ‘এটা একটা চ্যালেঞ্জ। আমি নারীদের দেখাতে চাই, আপনারা দুটিই করতে পারেন।’ ২৯ বছর বয়সী লিউপোলৎস এরপর যোগ করেছেন, ‘আমি ফুটবল খেলাটি চালিয়ে যেতে চাই একটা কারণে। আমি আমার সন্তানদের দেখাতে চাই—আমি শক্ত মনের মানুষ।’

আরও পড়ুন
এবারের নারী বিশ্বকাপে ভালো খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রাইকার অ্যালেক্স মরগান
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ বছর বয়সী স্ট্রাইকার মরগানের ৩ বছরের মেয়ের নাম শার্লি। এমনিতে শার্লির দেখাশোনা আয়াই করেন। কিন্তু অনুশীলন আর ম্যাচের ব্যস্ততার মাঝেও প্রায় প্রতিদিনই মেয়েকে কিছু সময় দেওয়ার চেষ্টা করেন মরগান। বিশ্বকাপ এবং মাতৃত্ব সামলানো কঠিন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, ‘এটা কঠিন। কারণ, আমি প্রতিদিনই তাকে খুব মিস করি। সে এখানে থাকায় আমি একই সঙ্গে দুটি ভূমিকা পালন করি। একটা মায়ের, আরেকটা ফুটবল খেলোয়াড়ের। তাই আমি এটাকে দেওয়া-নেওয়া বলব।’ মরগান এরপর যোগ করেন, ‘পরিবার থাকা পেশাদার অ্যাথলেটদের এটাই জীবন।’

ফ্রান্স দলের মিডফিল্ডার আমেল মাজরিও ১ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে এসেছেন। তাঁর কাছে ক্যাম্পে একজন শিশু থাকাটা প্রেরণার, ‘একটি শিশু থাকলে দলে আনন্দ আর মজা থাকে।’ ৩০ বছর বয়সী মাজরি এরপর যোগ করেন, ‘কখনো কখনো আপনি অনুশীলন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন না, কিছুটা ক্লান্ত থাকবেন। কিন্তু যখন আমি মেয়ের সান্নিধ্যে যাই, শক্তি পাই।’

জার্মানির ফরোয়ার্ড লরা ফ্রাইগাংও মাজরির সঙ্গে একমত, ‘আপনি খাওয়ার সময় গুরুগম্ভীর কোনো ঘোষণা শোনাটা একটু কেমন যেন। সেই সময় যদি কোনো শিশু আধো আধো বোলে কথা বলা শুরু করে, সেটা মজাই লাগে।’

আরও পড়ুন