১০৩ কোটি টাকার হেলিকপ্টারে করে অনুশীলনে নেইমার
ব্রাজিলে ফেরার উৎসব ও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছে। সময় এখন অনুশীলন করে মাঠে ফেরার। সেই লক্ষ্যে গতকাল প্রথমবারের মতো সান্তোসের অনুশীলনে গিয়েছিলেন নেইমার। তবে খবর এটা নয়। অনুশীলনে তো তিনি যাবেনই। কীভাবে গিয়েছিলেন, সেটা হলো আলোচনার বিষয়। এমনিতে মনে হতে পারে, হয়তো বিলাসবহুল কোনো গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। না, সেটাও নয়। নিজ হেলিকপ্টারে করে সান্তোসের অনুশীলন গ্রাউন্ড সিটি রেই পেলেতে গিয়েছিলেন ৩২ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
আল হিলালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে শৈশবের ক্লাব সান্তোসে ফিরেছেন নেইমার। চুক্তি করেছেন ছয় মাসের জন্য। রিও ডি জেনিরোর মানগারাতিবায় নিজের বাসায় অবস্থান করছেন নেইমার। সেখানে ছুটির দিন কাটিয়ে জিমে ঘাম ঝরিয়ে তারপর অনুশীলনে যেতে হেলিকপ্টার নিয়ে বের হন। ২০১৯ সালে কেনা এই হেলিকপ্টারের দাম ব্রাজিলিয়ান মুদ্রায় ৫ কোটি রিয়াল (প্রায় ১০৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা)।
নেইমারের নিজ প্রতিষ্ঠানের নাম নেইমার স্পোর্ট ই মার্কেটিং লিমিটেড। ২০১৯ সালের মে মাসে তাঁর এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে পিপি–এনজেডআর নিবন্ধনে হেলিকপ্টারটি কেনা হয়। হেলিপ্টারের মডেল এয়ারবাস বিকে ১১৮ ডি–২। দুটি টার্বোশ্যাফট ইঞ্জিনের এই হেলিকপ্টারের ওজন ৩ দশমিক ৭ টন। রাতে ও খারাপ আবহাওয়াতেও চলাচল করা যায় এই হেলিকপ্টারে, যা পাইলটসহ মোট ১০ জন যাত্রী পরিবহনে সক্ষম।
সান্তোসে প্রায় সাড়ে ১১ বছর পর ফিরলেন নেইমার। ২০১৩ সালে ক্লাবটি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। চার বছর পর কাতালান ক্লাবটি ছেড়ে যোগ দেন ফ্রান্সের ক্লাব পিএসজিতে। ২০২৩ সালে পিএসজি ছেড়ে যোগ দেন সৌদি প্রো লিগের দল আল হিলালে; অর্থাৎ পিএসজিতে থাকতে হেলিকপ্টারটি কেনেন নেইমার, আর এটা কাস্টমাইজড করাও হয়েছে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে।
‘ও গ্লোবো’ জানিয়েছে, হেলিকপ্টারের চামড়ার সিটের ওপর কমিকের সুপারহিরো ব্যাটম্যানের লোগো রয়েছে। ব্যাটম্যান নেইমারের পছন্দের সুপারহিরো। এই হেলিকপ্টার কেনার আগে নেইমারের বহরে আকাশপথে যাতায়াতের আরও দুটি বাহন ছিল। সাতজন যাত্রী ধারণে সক্ষম ২০১২ সালে বানানো একটি হেলিকপ্টার এবং ২০০৮ সালে কেনা সেসনা সি প্লেন। পাইলট ও সহপাইলট নিয়ে মোট ১২ জন এই বিমানে যাতায়াত করতে পারেন।
খেলাধুলার আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে বিশ্লেষণী প্রতিষ্ঠান স্পোর্টিকোর মতে, নেইমারের মোট সম্পদের আর্থিক মূল্য ১০১ কোটি ডলার। ফোর্বসের মতে, শুধু গত বছরই ১১ কোটি ডলার আয় করেছেন নেইমার। তৃতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় হিসেবে বছরটি তিনি শেষ করেন। ফোর্বসের জরিপে ইতিহাসের সবচেয়ে ধনী ২০ অ্যাথলেটের মধ্যে ব্রাজিল থেকে আছেন শুধু নেইমার।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, মানগারাতিবা থেকে সান্তোসের অনুশীলনে যাওয়ার অসুবিধা চিন্তা করে নেইমার সেখানে থাকবেন না। সান্তোস শহরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। তবে তার আগপর্যন্ত মানগারাতিবা থেকে নেইমারের যাতায়াতে বড় অঙ্কই খরচ হবে। তিন হেলিকপ্টার পাইলটের সঙ্গে কথা বলে গ্লোবো জানিয়েছে, মানগারাতিবা থেকে সান্তোসে যেতে নেইমারের প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগবে। কী পরিমাণ তেল খরচ হবে, সেটা নির্ভর করবে হেলিকপ্টারের ওজনে, মানে যাত্রী বেশি হলে তেলও লাগবে বেশি। মানগারাতিবা থেকে সান্তোসে যাতায়াত করতে নেইমারের হেলিকপ্টারের ২৪০ থেকে ৩৫০ লিটার তেল খরচ হবে বলে জানিয়েছে গ্লোবো। তেলের দাম ব্রাজিলিয়ান মুদ্রায় প্রতি লিটার ৮ থেকে ১০ রিয়াল (১৬৫ থেকে ২০৬ টাকা)।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, মানগারাতিবা থেকে সান্তোসে যেতে হেলিকপ্টারে নেইমারের শুধু তেলই খরচ হবে ২ হাজার ৪০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ রিয়াল (৪৯ হাজার–৭২ হাজার টাকা)। কিন্তু শুধু তো যাবেনই না, অনুশীলন থেকে মানগারাতিবায় তাঁকে ফিরতেও হবে; অর্থাৎ এই আসা–যাওয়ায় সব মিলিয়ে শুধু হেলিকপ্টারের তেল বাবদই নেইমারের খরচ হবে সর্বোচ্চ ৭ হাজার রিয়াল (প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা)। তবে এর পাশাপাশি হেলিকপ্টারের ক্রু ও মেইনটেইন্যান্স খরচও আছে। নির্দিষ্ট ঘণ্টা ওড়ার পর হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। এতে আনুমানিক বার্ষিক খরচ হয় ৪ থেকে ৫ লাখ ডলার (৬ কোটি ৯ লাখ ৫৬ হাজার টাকা প্রায়)।
মানগারাতিবা থেকে সান্তোসের মোরো দে সান্তা তেরেজিনহায় ম্যানশন কেনার পরিকল্পনা করছেন নেইমার। আগামী সপ্তাহেই বাবা–মাকে নিয়ে সেখানে উঠতে পারেন তিনি। তবে নেইমারের স্ত্রী ব্রুনা বিয়ানকার্দি মেয়ে মাভিকে নিয়ে মানগারাতিবায়ই থাকবেন। সেখানে দুটি বাড়ি আছে নেইমারের। একটির দাম ২ কোটি ৮০ লাখ রিয়াল, যেখানে ৫০০ জীবজন্তু নিয়ে সাফারির ব্যবস্থাও আছে।
সান্তোসের সঙ্গে ছয় মাসের চুক্তি করলেও এর মেয়াদ নেইমারের সম্মতিতে আরও এক বছর বাড়ানোর সুযোগ আছে। চোট কাটিয়ে ওঠা নেইমার এখন অবশ্য বেশি বেশি ম্যাচ খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ, মার্চে বিশ্বকাপ বাছাই সামনে রেখে তাঁকে ব্রাজিল দলে ফিরতে হবে।