মেসিকে ‘সাধারণ’ বানিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে আর্জেন্টিনা

বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারের একমাত্র অপ্রাপ্তি ঘুচিয়েছেন মেসিছবি : ফিফা

আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে অভিষেক থেকেই তাঁকে ‘স্পেশাল ওয়ান’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। না, জোসে মরিনিওর তকমাটা তাঁকে দিয়ে দেওয়া হয়নি, আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে লিওনেল মেসি কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝানো হয়েছে।

অমিত প্রতিভা থাকায় প্রত্যাশার বোঝা চেপেছিল মেসির কাঁধে। ২০০৬ ও ২০১০ বিশ্বকাপে সে প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিলেন। তখন প্রত্যাশা আরও বেড়েছে।

যেহেতু দলের প্রধান তারকা, মেসি বোধ হয় একাই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বানাবেন আর্জেন্টিনাকে—এমন প্রত্যাশাও করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু ব্রাজিলে সেই বিশ্বকাপেও স্বপ্নপূরণ হয়নি। চার বছর পর রাশিয়া বিশ্বকাপেও বিশ্বকাপটা অধরাই থেকে যায় মেসিদের।

বিশ্বকাপ জয়ের পর সবার আগে মেসির সঙ্গে আলিঙ্গন করেছেন পারেদেস
ছবি : ফিফা

অবশেষে গত বছরের ডিসেম্বরে কাতারে বিশ্বকাপের দেখা পেয়েছে আর্জেন্টিনা। সেই মেসি–দি মারিয়ারাই জিতিয়েছেন আর্জেন্টিনাকে। মেসি একাই ৭ গোল করে এবং ৩ গোল বানিয়ে জিতেছেন ‘গোল্ডেন বল’।

প্রশ্ন উঠতে পারে, পার্থক্যটা তাহলে কী? যে মেসি আগের চারটি বিশ্বকাপে দলের প্রধান তারকা হয়েও পারেননি, সে খেলোয়াড়ই ৩৫ বছর বয়সে কীভাবে এমন দুর্দান্ত খেলে চ্যাম্পিয়ন বানালেন আর্জেন্টিনাকে!

আরও পড়ুন

উত্তরটা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার লিয়ান্দ্রো পারেদেস। আর্জেন্টিনার সংবাদমাধ্যম ‘টিওয়াইসি স্পোর্টস’কে পারেদেস জানিয়েছেন, দলে মেসির প্রতি সবার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো হয়েছিল। সব সময় তাঁকে কেন্দ্র করেই রচিত হয়েছে আর্জেন্টিনার আক্রমণ, খেলার কৌশলেও মেসিই কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন—যেহেতু প্রধান তারকা ও আর্জেন্টিনার ‘পোস্টার বয়’।

পারেদেস জানিয়েছেন, আর্জেন্টিনার সেই ‘পোস্টার’ থেকেই মেসিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ, জাতীয় দলের আর দশজন সাধারণ খেলোয়াড়ের মর্যাদাই পেয়েছেন মেসি। তাতে প্রত্যাশার চাপ কমেছে, মেসিও ফুরফুরে মেজাজে মনের ইচ্ছেমতো খেলতে পেরেছেন। পারেদেসের বলা কথার অর্ন্তনিহিত অর্থ এটাই।

টিওয়াইসি স্পোর্টসকে পারেদেস বলেছেন, ‘আমরা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু থেকে তাকে সরিয়ে নিয়েছিলাম, অন্য সব সাধারণ খেলোয়াড়ের মতোই তাকে দেখা হয়েছে। এতে সে সহজেই মিশে যেতে পেরেছে। দলীয় সমন্বয় ভালো হওয়ার এটাই মূল কারণ। এটাই আমাদের দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ কারণেই আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাফল্য পেয়েছি। খেলোয়াড়ি যোগ্যতার বাইরে সবাই মানুষ হিসেবেও অসাধারণ।’

আরও পড়ুন

গত ১৮ ডিসেম্বর কাতার বিশ্বকাপ ফাইনালে টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। লাতিন আমেরিকার দলটির হয়ে গঞ্জালো মন্তিয়েল লক্ষ্যভেদ করার পর জয় নিশ্চিত হয় মেসিদের।

জয় নিশ্চিত হওয়ার পর মেসি হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন এবং তারপর পারেদেস তাঁকে জড়িয়ে ধরেন। সে মুহূর্ত স্মরণ করে পারেদেস বলেছেন, ‘কী সৌভাগ্য! চিৎকার করে তাকে বলেছি আমরা চ্যাম্পিয়ন। সে আমাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছে, “ভালোবাসি।”’