পেলের জীবনের নানা সময়, নানা ঘটনা

১৯৯৮ সালে ম্যানচেস্টারে লিভারপুল–ইউনাইটেড ম্যাচের বিরতিতে তোলা ছবিফাইল ছবি: রয়টার্স
ফিফার ‘সর্বকালের সেরা’, ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির ‘বিংশ শতাব্দীর সেরা ক্রীড়াবিদ’ আর ফুটবল সমর্থকদের ‘রাজা’ তিনি। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে অমর হয়ে ওঠা পেলে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন বৃহস্পতিবার। থেমে গেছে ৮২ বছরের বর্ণিল এক জীবনের জয়যাত্রা। কেমন ছিল পেলের পুরো জীবনের পথচলা, কীভাবে সাও পাওলোর দারিদ্র্যপীড়িত বস্তিতে জন্ম নেওয়া শিশু নিজের উপস্থিতি জানান দিলেন এই বিশ্বের প্রতিটি কোণে—সেই উল্লেখযোগ্য সময়গুলো আরেকবার স্মরণ করা যাক—

২৩ অক্টোবর, ১৯৪০
সাও পাওলোর ট্রেস কোরাকোয়েসে জন্ম। মা–বাবা নাম রাখলেন বৈদ্যুতিক বাল্বের আবিষ্কারক টমাস এডিসনের সঙ্গে মিল রেখে—এডসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। ওই সময়কার ব্রাজিলে বিখ্যাত ফুটবলার ছিলেন বিলে। ফুটবল নিয়ে কারিকুরি করা এডসনকে কেউ একজন নাম দিলেন ‘পেলে’। প্রতিবেশীদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল ‘পেলে’ নামটা।

২৯ জুলাই, ১৯৫৬
স্থানীয় কোচ ভালদেমার ডি ব্রিতো ১৫ বছর বয়সী পেলেকে নিয়ে গেলেন সাও পাওলো ক্লাবে। সাও পাওলো ডিরেক্টরকে বললেন, ‘এই ছেলেটাকে নিতে পারেন। সে একদিন “বিশ্বের সেরা ফুটবলার হবে”।’

৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৬
পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু হলো ৭ আগস্ট। সাও পাওলোর প্রতিপক্ষ ছিল করিন্থিয়ানস সান্তো আন্দ্রে। মাঠে নেমে প্রথম ম্যাচেই দলকে এনে দিলেন প্রথম গোল। শেষ পর্যন্ত সাও পাওলো ম্যাচ জেতে ৭–১ ব্যবধানে।

৭ জুলাই, ১৯৫৭
ব্রাজিলের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামেন মারাকানায়, প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। ম্যাচটি অবশ্য ২–১ ব্যবধানে হেরে যায় ব্রাজিল।

আরও পড়ুন

২৯ জুন, ১৯৫৮
সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে নামেন সুইডেনের বিপক্ষে। সেদিন তাঁর বয়স ছিল ১৭ বছর ২৪৯ দিন। ব্রাজিলের প্রথম বিশ্বকাপ জয়ের সেই ম্যাচে জোড়া গোল করেন পেলে, দল জেতে ৫–২ ব্যবধানে।

৫ মার্চ, ১৯৬১
সান্তোসের হয়ে ফ্লুমিনেজের বিপক্ষে এমন এক গোল করেন, যেটিকে অনেকে ‘ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সুন্দর’ আখ্যা দিয়েছেন। এর পরপরই ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট তাঁকে ‘জাতীয় সম্পদ’ হিসেবে ঘোষণা দেন। হয়ে ওঠেন ব্রাজিলের ‘সাম্বা ফুটবলে’র প্রতীক।

১৭ জুন, ১৯৬২
বিশ্বকাপ শুরুর সময় পেলে ছিলেন ওই সময়ের ‘বেস্ট রেটেড’ খেলোয়াড়। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে চার ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে অসাধারণ এক গোল করেন। সতীর্থকে দিয়ে করান আরেকটি গোল। ব্রাজিল জেতে ২–০ ব্যবধানে। পরের ম্যাচে চেকস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে দূরপাল্লার শট নিতে গিয়ে চোটে পড়েন। ছিটকে যান বিশ্বকাপ থেকেই।

আরও পড়ুন

৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৯
যুদ্ধের মধ্যে নাইজেরিয়ায় খেলতে গিয়েছিল সান্তোস। পেলের খেলা দেখতে  ৪৮ ঘণ্টার জন্য যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে নাইজেরিয়া ও বায়াফ্রা।

১৯ নভেম্বর, ১৯৬৯
ভাস্কো দা গামার বিপক্ষে নিজের ১ হাজারতম গোলটি করেন। সান্তোস ও ভাস্কো দা গামার সমর্থকেরা তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান।

২১ জুলাই, ১৯৭০
বিশ্বকাপ ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে ব্রাজিলকে এনে দেন প্রথম গোল। শেষ পর্যন্ত ৪–১ ব্যবধানে ম্যাচ জিতে ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে জেতেন তৃতীয় বিশ্বকাপ। যে কীর্তি এখনো কেউ ভাঙতে পারেনি।

আরও পড়ুন

১৮ জুলাই, ১৯৭১
ব্রাজিলের হয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে শেষ ম্যাচটি খেলেন ১৯৭১ সালের ১৮ জুলাই। রিও ডি জেনেরিওর ম্যাচটিতে প্রতিপক্ষ ছিল যুগোস্লোভিয়া।

১০ জুলাই, ১৯৭৫
আন্তর্জাতিক ফুটবলের পর ক্লাব ফুটবলও প্রায় ছেড়ে দিয়েছিলেন। সান্তোসের হয়ে মাঝেমধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলতেন। তবে দুই বছর পর অবসর ভেঙে যোগ দেন নর্থ আমেরিকান সকার লিগের ক্লাব নিউইয়র্ক কসমসে।

১ অক্টোবর, ১৯৭৭
আনুষ্ঠানিকভাবে বুট জোড়া তুলে রাখেন একটি প্রদর্শনী ম্যাচের মধ্য দিয়ে। নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি ছিল কসমস ও সান্তোসের মধ্যে। ম্যাচের প্রথমার্ধে কসমস, দ্বিতীয়ার্ধে সান্তোর হয়ে খেলেন তিনি।

আরও পড়ুন

১৮ মে, ১৯৭৮
খেলার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শিশুসুরক্ষায় অবদান রাখায় পেলেকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারে’ ভূষিত করে ইউনিসেফ।

৩ ডিসেম্বর, ১৯৯৭
ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ পেলেকে ‘অনারারি নাইটহুড’ উপাধি দেন।

১১ ডিসেম্বর, ২০০০
বিংশ শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি দিতে ‘প্লেয়ার অব দ্য সেঞ্চুরি’ পুরস্কারের ব্যবস্থা করে ফিফা। ২০০০ সালের ১১ ডিসেম্বর রোমে অনুষ্ঠিত ফিফা ওয়ার্ল্ড গালায় পেলে এবং ম্যারাডোনাকে যৌথভাবে পুরস্কারটি দেওয়া হয়।

২৯ ডিসেম্বর, ২০২২
৮২ বছর বয়সে সাও পাওলোর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

আরও পড়ুন