মদরিচের দীর্ঘশ্বাস বাড়িয়ে স্পেন কোচ বললেন, আরও শিরোপা আসবে

উয়েফা নেশনস লিগ ট্রফি নিয়ে স্প্যানিশদের উচ্ছ্বাসছবি : এএফপি

রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে জিতেছেন সম্ভাব্য সব শিরোপা, পেয়েছেন বর্ষসেরা ফুটবলারের খেতাব ব্যালন ডি’অরও। লুকা মদরিচের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অপ্রাপ্তি বলতে যদি কিছু থাকে, সেটা জাতীয় দল ক্রোয়েশিয়ার হয়ে শিরোপা জিততে না পারা।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে খুব কাছে গিয়েও পারেননি। গত বছর কাতার বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়া হয়েছিল তৃতীয়। বছর ঘুরতেই ক্রোয়েশিয়াকে আরেকটি ফাইনালে তোলার স্বাদ পাইয়ে দিয়েছেন মদরিচ। কিন্তু এবারও হতাশ হয়ে ফিরতে হলো।

মদরিচের দীর্ঘশ্বাস বাড়িয়ে উয়েফা নেশনস লিগ শিরোপা জিতে নিয়েছে স্পেন। রটারডামের ডি কুইপ স্টেডিয়ামে গত রাতের ফাইনালে মদরিচের ক্রোয়েশিয়াকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়েছে আলবা-গাভি-আসেনসিওদের স্পেন।

নির্ধারিত ৯০ মিনিট পেরিয়ে ফাইনাল গড়িয়েছিল অতিরিক্ত সময়ে। তবু গোল পায়নি কোনো দল। শেষ পর্যন্ত পেনাল্টি শুট আউটের ‘সাডেন ডেথে’ গোলরক্ষক উনাই সিমনের নৈপুণ্যে চ্যাম্পিয়ন হয় স্পেন। ১১ বছর পর স্প্যানিশরা মেতে ওঠে শিরোপা জয়ের উল্লাসে। সর্বশেষ ২০১২ সালে ইউরো জিতেছিল দলটি।

ট্রফির পাশ দিয়ে গেলেন, কিন্তু ছুঁয়ে দেখতে পারলেন না মদরিচ
ছবি : এএফপি

২০২০-২১ সালে নেশনস লিগের সর্বশেষ আসরেরও ফাইনালে উঠেছিল স্পেন। কিন্তু ফ্রান্সের কাছে ২-১ ব্যবধানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় লুইস এনরিকের দলের। এরপর কাতার বিশ্বকাপে মরক্কোর কাছে টাইব্রেকারে হেরে শেষ ষোলো থেকে ছিটকে পড়ে স্পেন। দায়ভার কাঁধে নিয়ে চাকরি ছাড়েন এনরিকে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় লুইস দে লা ফুয়েন্তেকে। স্পেনের দুটি বয়সভিত্তিক দলকে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়ন বানানো এই কোচ জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার ৭ মাসের মাথায় ঘোচালেন শিরোপা-খরা, সেটাও ‘টাইব্রেকার ভীতি’ কাটিয়ে।

টাইব্রেকারকে স্পেনের ভীতি বলার কারণ শুধু কাতার বিশ্বকাপ নয়; ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ ও ২০২০ ইউরো থেকেও তারা ছিটকে পড়েছিল পেনাল্টি শুটআউটে। সেই ভীতি কাটিয়ে ওঠা জয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত কোচ ফুয়েন্তে। শিরোপা-খরা ঘোচানোর কৃতিত্বটাও তিনি শিষ্যদেরই দিয়েছেন, ‘খেলোয়াড়েরা ধীরে ধীরে নিজেদের শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে। জিততে জিততে ওরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। আমার মনে হয় ওদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারা ফিরে এসেছে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে আমরা আরও শিরোপা জিততে পারি।’

স্পেনের কোচ হিসেবে ফুয়েন্তের শুরুটা হয়েছিল জয় দিয়েই; মার্চে ইউরো বাছাইয়ের ম্যাচে নরওয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে। একই মাসে মুদ্রার অন্য পিঠও দেখে ফেলেন ফুয়েন্তে। দ্বিতীয়বার ডাগআউটে দাঁড়িয়ে যে দেখতে হয়েছিল স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানের হার। ওই হারের পর খেলার ধরন নিয়ে সমালোচিতও হয়েছিলেন ফুয়েন্তে। তবে এরপর বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁর দল। খেলোয়াড়দের ওপর কখনোই বিশ্বাস হারাননি বলেই সাফল্য এসে বলে মনে করেন ৬১ বছর বয়সী এই কোচ, ‘এই প্রজন্মের খেলোয়াড়েরা দুর্দান্ত। জানতাম, ওরা আমাকে হতাশ করবে না। আমরা পুরো সপ্তাহ খুব নির্ভার ছিলাম। অনুশীলন সেশনগুলোও উপভোগ করেছি।’

আরও পড়ুন

ফাইনালজুড়ে গোলের অনেক সুযোগ পেয়েছিল স্পেন। শিরোপা-উৎসব করতে পারত নির্ধারিত ৯০ মিনিট পরেই। কিন্তু আনসু ফাতি-ফাবিয়ান রুইজরা একাধিক সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন। নিজেদের ভুলেই টাইব্রেকারের স্নায়ুচাপ সামলাতে হয়। তবে ফুয়েন্তের মতে, দল যা করেছে তাতেই তিনি খুশি, ‘আমরা ম্যাচটা আগেই জিততে পারতাম। তবে এটা (টাইব্রেকারে জয়) আরও বেশি মহাকাব্যিক। টাইব্রেকারের আগে ছেলেদের শান্ত থাকতে বলেছিলাম। কারণ, ওরা দুর্দান্ত খেলেছে। আজ (কাল) শিরোপা জিততে না পারলেও আমি সন্তুষ্ট থাকতাম। জিততে পেরে দলের সবাই খুব খুশি।’