রিয়ালের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের পুষ্টিবিদের

রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক পুষ্টিবিদ ইতসিয়ার গনসালেসইনস্টাগ্রাম/ইতসিয়ার গনসালেস

মাঠের বাইরের এক ঘটনায় বিব্রতকর ও জটিল পরিস্থিতিতে পড়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ঘটনার কেন্দ্রীয় চরিত্র ক্লাবটির সাবেক পুষ্টিবিদ ইতসিয়ার গনসালেস, যাঁকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে বরখাস্ত করে ক্লাবটি। তবে এখন এসে রিয়ালের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে হয়রানির অভিযোগে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রিয়ালের চিকিৎসা ও ফিজিওথেরাপি বিভাগের কাজকর্ম নিয়েও কড়া সমালোচনা করেছেন এই স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ। নিজের প্রতি হওয়া অন্যায়ের কারণে রিয়ালকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন তিনি।

রিয়ালের আগে ইতসিয়ার বিশ্বকাপজয়ী চার আর্জেন্টাইন ফুটবলারের পুষ্টিবিদ হিসেবে কাজ করেছিলেন। তাঁর অধীনে চিকিৎসা নেওয়া সেই চার ফুটবলার ছিলেন গিদো রদ্রিগেস, হেরমান পেসেলা, পাপু গোমেজ ও মার্কোস আকুনিয়া। অনেকের মতে, কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের শিরোপা জয়ে ইতসিয়ারও অবদান ছিল। বিশেষ করে রিভার প্লেট লেফটব্যাক আকুনিয়ার সঙ্গে তাঁর কাজের কারণে।

এই সফলতার কারণেই পরবর্তী সময়ে ইতসিয়ারকে দায়িত্ব দেয় রিয়াল। কিন্তু স্নাতকোত্তরসহ মোট আটটি বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রিধারী এই পুষ্টিবিদের জন্য রিয়ালে কাজ করার অভিজ্ঞতা একেবারেই ভালো ছিল না। সম্প্রতি রিয়ালে কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার কথা জানান তিনি। ক্লাব বিশ্বকাপের পর তাঁকে বরখাস্ত করার ঘটনার থেকেই মূলত এই বিতর্কের সূচনা। ইতসিয়ার অভিযোগ, ক্লাবের সঙ্গে এই বিরোধ হঠাৎ তৈরি হয়নি, সমস্যা চলছিল অনেক দিন ধরেই।

আরও পড়ুন

স্পেনের দৈনিক ‘মার্কা’কে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ইতসিয়ার জানান, তাঁর অভিযোগের লক্ষ্য ক্লাবের শীর্ষ কর্তারা নন। বরং ১৫ বারের চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী ক্লাবটির সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের প্রতি তাঁর ‘গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা’ রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে ক্লাবের চিকিৎসা বিভাগের কথা বলতে গিয়ে রাগ ও ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।

দানি কারভাহাল ও রদ্রিগোর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে এই চিকিৎসক জানান, শুরু থেকেই ক্লাবের মেডিকেল স্টাফরা তাঁর জন্য ‘শত্রুতাপূর্ণ পরিবেশ’ তৈরি করে রেখেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, রিয়ালের অনেক কর্মী তাঁকে নিয়ে উপহাস করেছেন এবং খেলোয়াড়দের তাঁর দেওয়া নির্দেশনা না মানতে উসকানি দিয়েছেন। তবে স্টাফদের সঙ্গে টানাপোড়েন থাকলেও খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

অনেক খেলোয়াড় তাঁকে বার্তা পাঠিয়ে বলেছেন, ‘আপনাকে এখানে পেয়ে দারুণ লাগছে।’ যদিও কাজের জায়গায় তাঁকে শুনতে ভিন্ন কথা। যেমন ‘কিছুই বদলাবেন না, নইলে আপনাকে বরখাস্ত করা হবে’ কিংবা ‘আপনি সবকিছুই ভুল করছেন’। এমনকি সভাপতির কাছে তাঁকে ‘পাগল’ প্রমাণ করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে, যেন তাঁকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

সবচেয়ে গুরুতর ঘটনা ছিল মেডিকেল সার্ভিসের পক্ষ থেকে আনা একটি মিথ্যা অভিযোগ, যেখানে বলা হয়েছে তিনি নাকি ‘সাপ্লিমেন্টের পুরো একটি চালান চুরি করেছেন’।

এই অভিযোগের কারণে সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজের সামনে তিনি অত্যন্ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন, কারণ সভাপতি প্রথমে সেই গুজব বিশ্বাস করেছিলেন। ইতসিয়ার জানান, ওই ঘটনার ধাক্কায় তিনি এতটাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে এর পর থেকে শুধু লিখিতভাবে যোগাযোগ শুরু করেন। তাঁর ভাষায়, ‘এখনো প্রতি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি।’

ইতসিয়ার বলেন, ‘আমি এ অধ্যায়টা চিরতরে ভুলে যেতে চাই। আর যতক্ষণ না নিজের গল্পটা বলছি, ততক্ষণ সেটা সম্ভব নয়। এটা জয়–পরাজয়ের ব্যাপার নয়। আমি শুধু চাই সভাপতি, খেলোয়াড়েরা এবং যাদের আমি গুরুত্ব দিই, তারা সত্যটা জানুক।’ স্থানীয় অন্যান্য গণমাধ্যমেও কথা বলা এই চিকিৎসক জোর দিয়ে বলেন, তিনি টাকার দাবি করছেন না। তিনি চান সংশ্লিষ্টরা যেন তাঁর কাছ থেকে ক্ষমা চায়।