বার্সাকে খুব মিস করেন মেসি, ইউরোপিয়ান ক্যারিয়ারটা কাটাতে চেয়েছিলেন বার্সাতেই
গত রোববার গভীর রাতে পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ যখন ঘুমিয়ে, লিওনেল মেসির পা পড়েছিল আলোঝলমলে ক্যাম্প ন্যুর ঘাসে। এটি এমন মুহূর্ত, যার জন্য মেসি অপেক্ষায় ছিলেন চার বছর। সেই মুহূর্ত মেসিকে মনে করিয়ে দিয়েছে অসংখ্য পুরোনো স্মৃতি, অর্জন ও বেদনার গল্প।
মেসির ক্যাম্প ন্যু ভ্রমণের সময় সংবাদমাধ্যমের কোনো ক্যামেরা ছিল না, ছিল না আনুষ্ঠানিক আয়োজনও। কিন্তু সেই ফেরায় ছিল গভীর আবেগ, যা শুধু মেসিকেই নয়, স্পর্শ করেছে বার্সেলোনার কোটি কোটি সমর্থককেও। ক্যাম্প ন্যু থেকে ফিরে আবেগঘন এক বার্তাও দেন মেসি। যেখানে প্রকাশ পেয়েছে ক্যাম্প ন্যুতে তাঁর ফেরার আকাঙ্ক্ষাও।
মেসি সেই একই আকাঙ্ক্ষার কথা আরও খোলাসা করে বলেছেন স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম স্পোর্তকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে। বার্সেলোনা এখনো তাঁর হৃদয়ে—সে কথা বলেছেন এই আলাপচারিতায়। এর পাশাপাশি মেসি জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর পরিবার স্পেনের এ শহর নিয়ে নিয়মিতই কথা বলেন।
বার্সেলোনাকে কতটা মিস করেন তা জানাতে গিয়ে মেসি বলেছেন, ‘আমরা বার্সেলোনাকে খুব মিস করি। আমার সন্তানেরা, আমার স্ত্রী আর আমি সব সময়ই আবার সেখানে বসবাস করার কথা বলি। আমাদের সেখানে বাড়ি আছে, সবকিছু আছে। তাই ঠিক এটাই আমরা চাই।’
একই সাক্ষাৎকারে ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে যাওয়ার দিন কী অনুভব করবেন, তা মেসি কল্পনা করেছিলেন এভাবে, ‘(সংস্কার করা) নতুন স্টেডিয়ামে ফিরে যাওয়া অদ্ভুত লাগবে…এ জায়গার সব স্মৃতি মনে পড়ে খুব আবেগপ্রবণ অনুভূতি হবে।’ মজার ব্যাপার হচ্ছে, মেসি জানতেন না যে সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হওয়ার আগেই তাঁর সংস্কার করা ক্যাম্প ন্যু দেখার অভিজ্ঞতা হবে।
তবে সাক্ষাৎকারে বলা কথাগুলোর মতো সত্যিকার অর্থেই আবেগময় হয়ে পড়েন ইন্টার মায়ামির এই তারকা। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা বার্তার প্রথম লাইনেই ছিল সেই আবেগের প্রকাশ, ‘গত রাতে আমি ফিরে গিয়েছিলাম এমন এক জায়গায়, যেটাকে আমি মনপ্রাণ দিয়ে মিস করি। এমন এক জায়গা, যেখানে আমি অসম্ভব সুখে ছিলাম।’
মেসি সাক্ষাৎকারে বার্সা থেকে বিদায়ের কথাও উল্লেখ করেছেন। প্রত্যাশিত বিদায় যে পাননি সে কথাও বলেছেন। করোনা মহামারি, শূন্য স্টেডিয়ামে খেলা এবং চুক্তি নবায়নের সিদ্ধান্ত হঠাৎ বদলে যাওয়া—এমন এক সমাপ্তি টেনে দিয়েছিল বার্সায়, যা ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আইকনটির জন্য বেমানান ছিল। এমন বিদায় বেদনাহত করেছিল মেসিকেও, ‘এর ফলে আমার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি জন্মেছিল, এটা সেই বিদায় ছিল না যার স্বপ্ন আমি দেখেছি।’
মেসি জানিয়েছেন, তিনি ইউরোপিয়ান ক্যারিয়ারের শেষটা বার্সার জার্সিতেই করতে চেয়েছিলেন, ‘ভেবেছিলাম, ইউরোপে পুরো ক্যারিয়ারটাই বার্সেলোনার জার্সিতে কাটাব। তারপর এখানে (মায়ামিতে) আসব, যেটা আমি করেছি। এটাই ছিল আমার পরিকল্পনা।’ কিন্তু বাস্তবতা মেসির সামনে ধরা দেয় একেবারে ভিন্নভাবে, চোখের জলে অভিমান ও হতাশা নিয়েই ২০২১ সালে বার্সা ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।
এরপর পিএসজি ঘুরে ২০২৩ সালে মেসি যোগ দেন এমএলএসের দল ইন্টার মায়ামিতে। মেসির কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, বার্সেলোনায় ২১ বছরের অভিজ্ঞতা থেকে কী মনে রাখবেন? কিংবদন্তি নির্দিষ্ট কিছু বেছে নিতে পারেননি, ‘পেপ গার্দিওলার সঙ্গে প্রথম সেক্সটাপল (২০০৯ সালে এক মৌসুমে ছয় ট্রফি জিতেছিল বার্সা) জেতা ছিল অসাধারণ। লুইস এনরিকের সঙ্গে শেষ চ্যাম্পিয়নস লিগও অনন্য। আমি জানি না, কোনো একটি মুহূর্তের কথা বলা কঠিন।’
বার্সেলোনায় খেলার জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান মেসি, ‘আমি সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে শৈশবেই সেই জায়গায় নিয়ে গেছেন।’ বার্সেলোনা মেসির কাছে মূলত সেই শহর যেখানে তিনি বড় হয়েছেন এবং সাধারণ মেসি থেকে কিংবদন্তি মেসি হয়েছেন। পাশাপাশি তাঁর তিন সন্তান জন্মেছে এই শহরে এবং এখনো একটি বাড়ি এই শহরে তাঁর পথ চেয়ে আছে। বার্সেলোনা তাই মেসির জন্য অতীতের অংশ নয়, বরং এটি কল্পিত ভবিষ্যতেরও অংশ।