৬০ লাখের খেলোয়াড় এবার ১০–১৫ লাখে, কেন কমছে দেশের ফুটবলারদের দাম
বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবল গভীর অর্থসংকটে ভুগছে, যা আবারও জাতীয় দলের ডিফেন্ডার তারিক কাজীর সিদ্ধান্তে সামনে এসেছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত বেতন না পাওয়ার অভিযোগ জানিয়ে বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছেন তিনি। বাংলাদেশে ক্লাব ফুটবলে এমন ঘটনা বিরলই।
গত বছর সরকার বদলের পর শেখ জামাল ও শেখ রাসেলের মতো দুটি বড় ক্লাব ফুটবলে থেকে সরে যাওয়ায় পরিস্থিতির হঠাৎ অবনমন হয়েছে। বাংলাদেশ লিগ থেকে অবনমনের পর গত মৌসুম শেষে ফুটবল থেকে বিদায় নিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনীও। টিকে থাকা ক্লাবগুলো কমবেশি ভুগছে অর্থসংকটে, যার প্রভাব পড়েছে খেলোয়াড়দের ওপর।
এ বছর ৯০ ভাগ খেলোয়াড় নীরবে নাম লিখিয়েছে ক্লাবে। ধরতে গেলে কোনো পেমেন্ট নেই। যে খেলোয়াড় আগে ৬০ লাখ পেয়েছে, এবার পেয়েছে ১০-১৫ লাখ। এবার মাত্র তিনজন খেলোয়াড় একটু ডিমান্ড করে দলবদল করতে পেরেছে। তিনজনকেই নিয়েছে কিংস।
বসুন্ধরা কিংস কয়েক বছর ধরে দেশের সবচেয়ে ধনাঢ্য ক্লাব। ২০১৮ সালে শীর্ষ লিগে আসার পর ক্লাবটির আর্থিক কোনো সমস্যার কথা শোনা যায়নি। বরং দেশের সেরা খেলোয়াড়দের দলে ভিড়িয়ে তারা ঘরোয়া ফুটবলে দাপট দেখিয়েছে। তবে দেশের পরিবর্তিত অবস্থা সমস্যায় ফেলেছে কিংসকেও। কিংসের এই সংকট প্রথম আলোচনায় আসে গত আগস্টে, যখন ক্লাবটির সাবেক রোমানিয়ান কোচ এবং একজন ট্রেনার বেতন–ভাতা বকেয়ার অভিযোগ তুলে ফিফা দরবারে যান।
দেশের ক্লাব ফুটবলে এমন আর্থিক দুরবস্থা আগে দেখেননি জানিয়ে মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ বলছেন, ‘এ বছর ৯০ ভাগ খেলোয়াড় নীরবে নাম লিখিয়েছে ক্লাবে। ধরতে গেলে কোনো পেমেন্ট নেই। যে খেলোয়াড় আগে ৬০ লাখ পেয়েছে, এবার পেয়েছে ১০-১৫ লাখ। এবার মাত্র তিনজন খেলোয়াড় একটু ডিমান্ড করে দলবদল করতে পেরেছে। তিনজনকেই নিয়েছে কিংস। আবাহনী থেকে শাহরিয়ার ইমন, মোহাম্মদ হৃদয় ও রহমতগঞ্জ থেকে তাজউদ্দিন। এর বাইরে অন্য কোনো খেলোয়াড় আহামারি চুক্তি পায়নি। এ বছর আমার দৃষ্টিতে দেশের ঘরোয়া ফুটবল ইতিহাসে খেলোয়াড়দের জন্য সবচেয়ে বাজে আর্থিক অবস্থা চলছে।’
কিংসের মতো পেশাদার ক্লাবই এখন সংকটে। এটা দেশের ফুটবলের জন্য অশনিসংকেত। আসলে গত বছরের ৫ আগস্টের পর সব ক্লাবেরই অবস্থা খারাপ।জাহিদ হাসান এমিলি, শুভকামনা জানাই।’ জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার
মাঝারি ক্লাব ফর্টিস এফসি বড় চুক্তি করে না। নিয়মিত তারা বেতন-ভাতা দেয় খেলোয়াড়দের। ফর্টিসকে ব্যতিক্রমের খাতায় রাখা যায়। অন্য ক্লাবগুলো ধুঁকছে। অবশ্য অতীতে খেলোয়াড়েরা চুক্তির পুরো টাকা না পাওয়ার অনেক উদাহরণই আছে। জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া সাইফ স্পোর্টিং ক্লাব থেকে চুক্তির পুরো টাক না পাওয়ার অভিযোগ তুলে বাফুফের কাছে নালিশ করেছেন। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম চট্টগ্রাম আবাহনীর কাছ থেকে পুরো টাকা পাননি বলে অভিযোগ তুলেছেন একাধিকবার। জাতীয় দলের বর্তমান সহকারী কোচ হাসান আল মামুন শেখ রাসেল ক্লাব থেকে কয়েক লাখ টাকা বকেয়া পাবেন বলে বাফুফের কাছ অভিযোগ করেন কয়েক বছর আগে। শেখ রাসেল ক্লাব টাকা পরিশোধ করবে বলেও আর করেনি।
কারও ৫ লাখ, কারও ১০ লাখ বা কারও ২০ লাখ বা আরও বেশি বকেয়া থেকেছে ক্লাবের কাছে। তবে বিদেশি খেলোয়াড়-কোচরা ঠিকই ফিফার কাছে অভিযোগ করে বকেয়া টাকা আদায় করে নিয়েছেন। সম্প্রতি ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব তাদের গত মৌসুমের উজবেক খেলোয়াড় সারদর জাখোনভের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, ফিফায় অভিযোগ করেছিলেন ওই খেলোয়াড়।
দেশি খেলোয়াড়েরা অভিযোগ করেন বাফুফের প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটির কাছে। কমিটি ক্লাবকে বকেয়া পরিশোধ করতে বলে। কিন্তু ক্লাব গুরুত্ব দেয় না। খেলোয়াড়কল্যাণ সমিতিও খেলোয়াড়দের স্বার্থ আদায়ে কোনো ভূমিকা রাখছে না। তারিক কাজীর অভিযোগের ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ। শোনা যাচ্ছে তারিক ফিনল্যান্ডের কোনো ক্লাবে যেতে পারেন। কিংসের সঙ্গে এভাবে মৌসুমের শুরুতেই সম্পর্কচ্ছেদ নিয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। প্রথম আলোকে শুধু বলছেন, ‘সময়মতো সবকিছু জানাব।’
কিংস এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে বেতন বকেয়ার ব্যাপারে কিছু বলেনি। তারিককে তারা শুভকামনা জানিয়ে বলেছে, ‘সিদ্ধান্তটি এসেছে তারিকের পক্ষ থেকে এবং আমরা তার সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা করি। ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানাই।’ জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি পুরো বিষয়টা জেনে অবাক, ‘কিংসের মতো পেশাদার ক্লাবই এখন সংকটে। এটা দেশের ফুটবলের জন্য অশনিসংকেত। আসলে গত বছরের ৫ আগস্টের পর সব ক্লাবেরই অবস্থা খারাপ।’