স্ত্রী কিংবা গার্লফ্রেন্ডদের মন টিকছে না, তাই প্রিমিয়ার লিগ ছাড়ছেন তারকারা

ইংল্যান্ডের জীবন নিয়ে বিরক্তির কথা জানিয়েছিলেন দি মারিয়া ও ইলকাই গুন্দোয়ানের স্ত্রী

মৌসুম শেষে খেলোয়াড়েরা দল বদলান নানা কারণে। কেউ হয়তো বড় ক্লাবে গিয়ে শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখেন, কেউ আবার অতিরিক্ত অর্থের লোভে ছোটেন, আর কেউ চান মাঠে বেশি সময় খেলার সুযোগ—ম্যাচ টাইম। কিন্তু এবার এক অদ্ভুত কারণে নাকি তারকারা ইংল্যান্ডের প্রিমিয়ার লিগ ছাড়ার কথা ভাবছেন!

আইরিশ সংবাদমাধ্যম সানডে মিরর জানাচ্ছে, ইংল্যান্ডের জীবনযাপন নাকি বিদেশি ফুটবলারদের স্ত্রী বা প্রেমিকাদের দিন দিন বেশি কঠিন মনে হচ্ছে! আর এই কারণেই তাঁরা তাঁদের সঙ্গীদের অন্য কোনো দেশে গিয়ে খেলার জন্য উৎসাহিত করছেন।

এই বিশেষ পরিস্থিতি সামলাতে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো এখন বিশেষ ‘কেয়ার টিম’ বা সহায়তা–দল নিয়োগ দিচ্ছে। এদের কাজ হলো খেলোয়াড়দের স্ত্রী বা প্রেমিকাদের যুক্তরাজ্যের পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করা।

আরও পড়ুন

খেলোয়াড়দের ‘কেয়ার এক্সপার্ট’ ইংল্যান্ডের হুগো শেকটার সানডে মিররকে বলেছেন, ‘নতুন দেশে মানিয়ে নেওয়া এমনিতেই কঠিন হতে পারে। কিন্তু আমরা এখন এটাকে একটা বড় সমস্যা হিসেবে দেখছি। খেলোয়াড়েরা হয়তো সুখে আছেন, কিন্তু তাঁদের স্ত্রী বা সঙ্গীরা সুখে নেই। আর এ কারণেই খেলোয়াড়েরা হয়তো ইংল্যান্ড ছেড়ে যেতে চাইছেন, নয়তো অন্তত সেই চিন্তা শুরু করেছেন। এটা ক্লাবগুলোর জন্য বড় ধরনের বিপর্যয় নিয়ে আসবে।’

স্ত্রী হর্হেলিনা কারদাসোর সঙ্গে দি মারিয়া
এএফপি

ইংল্যান্ডের জীবনযাপন অপছন্দ হওয়ার বিষয়টি এর আগেও বেশ কিছু ফুটবলার ও তাঁদের সঙ্গিনীদের আলোচনায় এনেছিল। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম হলেন হর্হেলিনা কারদাসো, যিনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক উইঙ্গার আনহেল দি মারিয়ার স্ত্রী। কারদাসো এক সাক্ষাৎকারে ইংল্যান্ডে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রকাশ্যে তীব্র অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলেন।

দি মারিয়া ২০১৪ সালের আগস্টে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে ৫ কোটি ৯৭ লাখ পাউন্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন। তখনকার সময়ে এটি ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দামি ট্রান্সফারগুলোর মধ্যে একটি। কিন্তু ইংল্যান্ডে অত্যন্ত হতাশাজনক একটি মৌসুম কাটিয়ে মাত্র ১১ মাসের মাথায় ক্লাব তাঁকে কম দামে বিক্রি করে দেয়।

আরও পড়ুন

২০২২ সালের আগস্টে আর্জেন্টিনার টেলিভিশন চ্যানেল এলএএম-এর সঙ্গে কথা বলার সময় দি মারিয়ার স্ত্রী কারদাসো ইংল্যান্ডে কাটানো সময়ের কথা বলেন। তিনি জানান, ইংলিশ খাবার ‘বীভৎস’, আর সেখানে থাকার সময় তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে তাঁর ‘নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছা করত’। কারণ, তাঁর মনে হতো সেখানে ‘বেলা ২টাতেই রাত নেমে গেছে’!

তিনি আরও যোগ করেন, ‘একদিন আনহেল আমাকে এসে বলল, ‘‘দেখো, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অফার।’’ আমি যেতে চাইনি, বলেছিলাম—তুমি একাই যাও। সে বলল, ‘‘চলো দুজনই যাই।’’ অফারটা ছিল অনেক বড়, স্প্যানিশ ক্লাবগুলোর চেয়ে অনেক বেশি টাকা। তাই আমরা গেলাম।’

স্ত্রী–সন্তানের সঙ্গে ইলকাই গুন্দোয়ান
ইনস্টাগ্রাম/গুন্দোয়ান

ইংল্যান্ডে যাওয়ার পর কেমন লেগেছিল, তা ব্যাখ্যা করে কারদাসো বলেন, ‘আমি ইংল্যান্ডকে একদমই পছন্দ করতাম না। মানুষজন অদ্ভুত! রাস্তায় হাঁটলেও বোঝা যায় না কে কী করবে! খাবার ভয়ানক খারাপ।’

এরপর ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ম্যানচেস্টার সিটির তখনকার মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ানের স্ত্রী সারা আরফাউইও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিলেন। তিনি শহরের খাবার নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন, যা প্রায় কারদাসোর অভিযোগের মতোই।

এখন প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলো আশঙ্কা করছে, এমন পরিস্থিতিতে অন্য অনেক খেলোয়াড়দের স্ত্রী ও সঙ্গীরাও পড়তে পারেন। তাই এই ঝামেলা মেটাতে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে তারা ‘কেয়ার টিম’ নিয়োগের পথে হাঁটছে। এখন এই কেয়ার টিম ফুটবলারদের সংসার সামলে তাদের মনকে মাঠে রাখতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা!