ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ জুভেন্টাস

দুঃসময়ের বৃত্তে জুভেন্টাসছভি: রয়টার্স

জুভেন্টাসের দুঃসময় যেন শেষই হচ্ছে না। গত মৌসুমে দলবদলের চুক্তি ও অর্থ নিয়ে মিথ্যাচার করায় ১০ পয়েন্ট কেটে নেওয়া হয় তাদের, যা সিরি ‘আ’র শীর্ষ চার থেকে ছিটকে দিয়ে জুভদের নামিয়ে দেয় ৭ নম্বরে। শেষ পর্যন্ত সেই সাতে থেকেই মৌসুম শেষ করে তারা। এর ফলে চ্যাম্পিয়নস লিগ তো বটেই, ইউরোপা লিগ থেকেও বেরিয়ে গিয়ে ক্লাবটির ঠাঁই হয় ইউরোপা কনফারেন্স লিগে। এখন নতুন খবর হচ্ছে সেই ইউরোপা কনফারেন্স লিগেও খেলা হবে না জুভেন্টাসের।

ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) নীতি ভঙ্গ করায় জুভেন্টাসকে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে উয়েফা। এখন তাই আগামী মৌসুমে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় দর্শক হয়েই থাকতে হবে তুরিনের বুড়িদের। একই সঙ্গে ক্লাবটিকে ১ কোটি ৭১ লাখ পাউন্ডের মতো জরিমানাও করা হয়েছে। জুভেন্টাসের পাশাপাশি শাস্তির মুখে পড়েছে চেলসিও।

আরও পড়ুন

‘অসম্পূর্ণ আর্থিক তথ্য’ জমা দেওয়ায় ইংলিশ ক্লাবটিকে জরিমানা করেছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। চেলসিকে জরিমানা করা হয়েছে ৮০ লাখ ৫৭ হাজার পাউন্ড। উয়েফা জানিয়েছে, রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচের মালিকানায় থাকার সময় ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ঘটনাটি ঘটেছে। চেলসিও উয়েফার সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘চেলসি উয়েফার সঙ্গে তাদের সম্পর্ককে অনেক গুরুত্ব দেয়। আর সামনের দিনগুলোতেও আর ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।’

এদিকে ইতালিয়ান ক্লাবটি যদি আগামী তিন বছর আর্থিক নিয়মগুলো ঠিকঠাক মেনে চলে, তবে তাদের নির্ধারিত জরিমানার অর্ধেক দিতে হবে। অন্যদিকে চেলসি এরই মধ্যে নির্ধারিত জরিমানা দিতে রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে। জুভেন্টাস না থাকায় ইউরোপা কনফারেন্স লিগে এখন দেখা যাবে ফিওরেন্তিনাকে। আর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে জুভেন্টাস।

ইউরোপে আগামী মৌসুমে জুভেন্টাসের এমন উদ্‌যাপন দেখা যাবে না
ছবি: টুইটার

নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নিয়ে এক বিবৃতিতে জুভেন্টাস সভাপতি গিয়ানলুকা ফেরেরো বলেছেন, ‘আমরা উয়েফার আর্থিক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করছি। নিজেদের সপক্ষে আমরা যে ব্যাখ্যা দিয়েছি, তা নিয়ে জানাচ্ছি না। আমরা আমাদের কাজের বৈধতা ও যুক্তির বৈধতা সম্পর্কে দৃঢ়ভাবেই সুনিশ্চিত। যাহোক, আমরা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এই বেদনাদায়ক সিদ্ধান্তের পরও আমরা নতুন মৌসুমে কোর্টে নয়, মাঠের খেলার মনোযোগী হব।’ উয়েফা গত ডিসেম্বরে জুভেন্টাসের এফএফপি নীতি ভাঙার বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। সেই তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতেই মূলত এখন এসে শাস্তির মুখে পড়তে হলো তাদের।

আরও পড়ুন

জুভেন্টাসের দুর্যোগের শুরুটা হয় গত জানুয়ারিতে আর্থিক অনিয়মের কারণে ১৫ পয়েন্ট কেটে নেওয়ার পর। সে সময় পয়েন্ট টেবিলের ৩ নম্বর থেকে ১০ নম্বরে নেমে যায় তারা। শুধু এটুকুই নয়, অতীত ও বর্তমান মিলিয়ে ১১ জন পরিচালকের ওপর বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছিলেন আদালত। এর আগেই অবশ্য গত বছরের নভেম্বরে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছিলেন ক্লাবের সভাপতি আন্দ্রে আগনেল্লি ও সহসভাপতি পাভেল নেদভেদ। দুজনই যথাক্রমে ২৪ মাস ও ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন। মাঠের বাইরের এসব সমস্যার প্রভাব অবশ্য মাঠের খেলাতেও পড়েছিল। পুরো মৌসুমেই বেশ ধুঁকেছে তারা।

আরও পড়ুন

জুভেন্টাসের এমন দুঃসময় অবশ্য এবারই প্রথম নয়; এর আগেও দুর্নীতিতে জড়িয়ে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছিল জুভরা। পরে অবশ্য সেই ঝড় সামলে দারুণভাবে ফিরেও আসে তারা। এখন নতুন এই শাস্তির ধাক্কা কাটিয়ে জুভেন্টাস আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরতে পারে কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।