কানাডার আইস হকি কিংবদন্তি ওয়েন গ্রেটৎজকির হাতে হাইতির নাম উঠতেই ক্যামেরা ধরা হলো অতিথিদের সারিতে। হাইতির অফিশিয়ালরা মুচকি হাসছিলেন। তাঁদের হয়তো মনে হয়েছে, কপাল বটে! ৫২ বছর আগে লড়তে হয়েছে আর্জেন্টিনার সঙ্গে, আর এবার ব্রাজিল!
নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে এবার দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে খেলবে হাইতি। প্রথম অভিজ্ঞতা ১৯৭৪ বিশ্বকাপে। সেবার প্রথম গ্রুপ পর্বের ‘গ্রুপ ফোরে’ হাইতির প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল পোল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও ইতালির মতো দল। হাইতি কত দূর এগোতে পেরেছিল, তা নিশ্চয়ই না বললেও চলে। তিন ম্যাচের সব কটি হারের পথে ২ গোল করেছিল হাইতি। কিন্তু হজম করতে হয়েছিল ওই গ্রুপে সর্বোচ্চ ১৪ গোল। মিউনিখে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে হেরেছিল ৪-১ গোলে।
অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় পর এবার আবার বিশ্বকাপে খেলার টিকিট কেটেছে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশটি। যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল রাতের ড্র অনুষ্ঠানে তারা পড়েছে সি গ্রুপে। যেখানে তাঁদের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী দল—মরক্কো, স্কটল্যান্ড ও ব্রাজিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, ধারে-ভারে, সাফল্য ও ঐতিহ্যে এই তিন দলের ধারেকাছেও নেই হাইতি। তবে আশা করতে তো দোষ নেই।
গত মাসে নিকারাগুয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে কনক্যাকাফ বাছাইয়ে সি গ্রুপের শীর্ষস্থান নিয়ে বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত করে ফরাসি কোচ সেবাস্তিয়ান মিগনের দল। প্রায় ১৯ মাস আগে হাইতির দায়িত্ব নেওয়া এ কোচ অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে দেশটিতে গত নভেম্বর পর্যন্ত পা রাখতে পারেননি। হাইতি তাদের ঘরের ম্যাচগুলো খেলেছে ৫০০ মাইল দূরের দেশ কুরাসাওয়ে।
তবে হাইতির সমর্থকদের মধ্যে কয়জন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে দলের খেলা দেখতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার হাইতির নাগরিকদের দেশে প্রবেশ অনুমোদন দিচ্ছে না। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশে যে ১২টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, হাইতি তার মধ্যে একটি।
গতকাল রাতে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র শেষে হাইতি কোচ মিগনের কাছে ‘দ্য অ্যাথলেটিক’ জানতে চেয়েছিল, বিশ্বকাপ শুরুর আগে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা আছে কি না? ৫৩ বছর বয়সী মিগনে বলেন, ‘এটা মিস্টার ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করছে।’
মিগনেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, ট্রাম্প তো এখন ফিফা শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। এর প্রতিক্রিয়ায় হাইতি কোচ বলেন, ‘হ্যাঁ, হয়তো তাঁর এই সদিচ্ছা টিকে থাকবে এবং ভক্তদের তিনি এখানে (যুক্তরাষ্ট্র) আসার সুযোগ করে দেবেন।’
সি গ্রুপের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো নিয়ে মিগনে বলেন, ‘ব্রাজিলের মতো শীর্ষ দলের বিপক্ষে খেলাটা হাইতির মানুষদের জন্য এটি চমৎকার সুযোগ। আমার খেলোয়াড়দের জন্য শুধু এখন নয় ভবিষ্যতের জন্য এটি দারুণ ব্যাপার। বিশ্বকাপে বড় দলের বিপক্ষে এর চেয়ে বেশি নজর কাড়ার সুযোগ পাওয়া সম্ভব না।’