সাকিব হোসেন যেভাবে ‘সাকিব আল হাসান’

সাকিব আল হাসান খেলেন মোহামেডানের হয়েসংগৃহীত

মোহামেডানের খেলোয়াড় তালিকা দেখলে চমকে যেতে পারেন যে কেউই। মোহামেডানের ফুটবল দলে সাকিব আল হাসান! ক্রিকেট ছেড়ে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ফুটবল খেলা শুরু করলেন নাকি!

না, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ক্রিকেটেই আছেন। তবে মোহামেডানে খেলছেন দেশের খেলার জগতের আরেক ‘সাকিব আল হাসান’, গোলকিপার সাকিব। দুজনের মধ্যে একটা জায়গায় দারুণ মিল, ক্রিকেটার সাকিবের মতো ফুটবলার সাকিবও বিকেএসপির সাবেক ছাত্র।

কিংস অ্যারেনায় সেদিন প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে মোহামেডান হারিয়ে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংসকে। ম্যাচে মোহামেডানের নিয়মিত গোলকিপার সুজন হোসেন মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ থেকে উঠে যান। প্রায় শেষ দিকে বদলি হিসেবে নামেন গোলকিপার সাকিব।

মিনহাজুর রহমান রাকিবের অবিস্মরণীয় এক গোলে মোহামেডান তখন ১-০ গোলে এগিয়ে। ম্যাচে ফিরতে মরিয়া কিংস। রবসন দা সিলভা, দরিয়েলতন গোমেজ, মিগুয়েল ফেরেইরারা ঝাঁপাচ্ছেন আক্রমণে।

এমন চাপের মধ্যেও তরুণ গোলকিপার সাকিব ভেঙে পড়লেন না। উল্টো চারটি নিশ্চিত গোল ঠেকিয়ে মোহামেডানের জয়ে রাখলেন দারুণ অবদান। রবসন হয়তো বিস্মিতই হয়েছেন, তাঁর একটি দুর্দান্ত শট সাকিব কীভাবে ফিস্ট করে ফেরালেন! ৮৮ মিনিটের মাথায় মাঠে নেমেছিলেন সাকিব। যোগ করা ১৬ মিনিটের সঙ্গে অতিরিক্ত আরও ২ মিনিট মিলিয়ে মোট ১৮ মিনিট খেলেছেন কিংসের বিপক্ষে। তবে সবার সব আগ্রহ তাঁর ‘সাকিব আল হাসান’ নামটা নিয়েই।

আরও পড়ুন

মোহামেডান ক্লাবে বসে নিজের নামের ‘ইতিহাস’ বলছিলেন গোলকিপার সাকিব। তাঁর কাছেই জানা গেল, নামটা তাঁর বাবা-মায়ের দেওয়া নয়। দিয়েছেন তাঁর এক শিক্ষক। নওগাঁতে নিজের এলাকার স্কুলের সেই শিক্ষক ‘সাকিব হোসেন’কে দেখলেই ‘সাকিব আল হাসান’ বলে ডাকতেন।

‘আমাদের স্কুলের ওই স্যার, কেন যেন আমাকে সাকিব আল হাসান বলে ডাকতেন। আমার আসল নাম সাকিব হোসেন। ২০১৩ সালে পিএসসি পরীক্ষার ফর্ম পূরণের সময় স্যার কী মনে করে যেন নামের জায়গায় লিখে দিলেন, “সাকিব আল হাসান।” এর পর থেকে ওটাই আমার অফিশিয়াল নাম হয়ে গেল।’

সাকিব আল হাসান উঠে এসেছেন নওগাঁ থেকে
সংগৃহীত

নওগাঁ থেকে এসে বিকেএসপিতেও সাকিব ভর্তি হয়েছিলেন ‘সাকিব আল হাসান’ নামেই। পিএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনেও সে নাম পরিবর্তন করেননি। ফুটবলার সাকিবের বাবা আবুল কালাম অবশ্য এটিকে সহজভাবেই নিয়েছেন, ‘বাবা কিছু বলেনি। তিনি শুধু হেসেছেন। বলেছেন, “তোর স্যার মনে হয় চান তুই সাকিব আল হাসানের মতো বিখ্যাত হবি।”’

বিকেএসপিতে ভর্তির সময় খুব লজ্জায় পড়েছিলেন নাম নিয়ে। সবাই নাকি তাঁর নাম দেখে হাসত। সাকিব বলছিলেন, ‘ক্রিকেটার সাকিব ভাই বিকেএসপির সবচেয়ে বিখ্যাত ছাত্রদের একজন। স্বাভাবিকভাবেই আমি যখন সাকিব আল হাসান নামে সেখানে ভর্তি হই, সবাই অবাক হয়েছে। বন্ধুবান্ধবেরা এ নিয়ে খ্যাপাত আমাকে।’

ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের সঙ্গে কখনো দেখা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মোহামেডানের এই ফুটবলার বলেন, ‘বেশ কয়েকবার দূর থেকে দেখেছি। বন্ধুবান্ধবেরা জোর করে তাঁর সামনে নিয়ে যেতে চেয়েছে। লজ্জায় যাইনি। কীভাবে যাই বলেন! বাবা-মায়ের দেওয়া নাম হলে না হয়, তাঁকে বলা যেত। নামটা যে আমার হয়েছে ঘটনাচক্রে!’

মোহামেডানের সাবেক ইংলিশ কোচ শন লেনের সঙ্গে সাকিব আল হাসান
সংগৃহীত

মোহামেডানের সাবেক ইংলিশ কোচ শন লেনের আবিষ্কার সাকিব। ২০২০ সালে বিকেএসপিকতে ক্যাম্প করেছিল মোহামেডান। সেবার বিকেএসপির ছাত্রদের সঙ্গে কয়েকটি ম্যাচও খেলে সাদা-কালোরা। একটি ম্যাচে গোলকিপার হিসেবে দারুণ খেলেছিলেন সাকিব। তাঁর খেলা খুবই পছন্দ হয় লেনের। এর পর থেকে তিনি মোহামেডানের সঙ্গেই আছেন। তবে তাঁর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তিটা হয়েছে এই মৌসুমেই।

আরও পড়ুন

দলের দ্বিতীয় গোলকিপার বলে খুব বেশি খেলার সুযোগ হয় না সাকিবের। এবারের মৌসুমে ফেডারেশন কাপে খেলেছেন একটি ম্যাচ, আরেকটি স্বাধীনতা কাপে। সুজন ভালো খেলছেন বলে ভবিষ্যতে যে সাকিবের খুব বেশি খেলার সুযোগ হবে, এটাও বলা যায় না। তবে তিনি সুযোগের অপেক্ষায় আছেন, ‘মোহামেডানের গোলকিপার কোচ ছাঈদ হাছান কানন ভাই আমাকে সব সময় উৎসাহিত করেন। তিনি নিজের উদাহরণই দেন আমাকে। বলেন, সুযোগ আসবেই। আমি যেন সেটা কাজে লাগাই।’

১৯৮৬ সালে নিয়মিত গোলকিপার মোহাম্মদ মহসিনের চোটজনিত অনুপস্থিতি দারুণ কাজে লাগিয়েছিলেন কানন। সুযোগ পেয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন গোলবারের নিচে আস্থার প্রতীক হিসেবে। সাকিবও তেমন কিছুই করতে চান। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের মতোই এরই মধ্যে জাতীয় অনূর্ধ্ব-২৩ দলে জায়গা করে নেওয়া সাকিব প্রতিষ্ঠিত হতে চান নিজের খেলোয়াড়ি সত্তা দিয়েই।

আরও পড়ুন