দিয়াবাতের সুপ্ত বাসনা বাংলাদেশের হয়ে খেলা

দিয়াবাতের গোল উদ্‌যাপনছবি: শামসুল হক

মোহামেডানের তারকা বিদেশি ফুটবলারদের তালিকা করলে অনেকের নামই আসবে। সেই ১৯৮৭, ১৯৮৮–৮৯ মৌসুমে খেলে যাওয়া ইরানের রেজা নালজেগারকে এখনো মাথার তাজ বানিয়ে রেখেছেন সমর্থকেরা। ইরানের আরেক স্ট্রাইকার ভিজেন তাহিরি ১৯৮৮–৮৯ মৌসুমে মোহামেডানের জার্সিতে ঢাকার ফুটবলে গোলের বন্যা বইয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। করেছিলেন ২৪ গোল।

নাইজেরিয়ার সেই দীর্ঘদেহী এমেকা ইজিউগোকে কোন সমর্থক ভুলে যাবেন! ১৯৮৭ সালে প্রথম খেলতে এসেছিলেন তিনি। দুই মৌসুম খেলেই তিনি জায়গা করে নিয়েছেন মোহামেডানের ‘হল অব ফেমে’। এমেকার নামটি আরও মহিমান্বিত এই কারণে তিনি নাইজেরিয়ার জার্সি গায়ে ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের একটি ম্যাচও খেলেছিলেন।

আরও পড়ুন

১৯৮৭ সালে মোহামেডানের কোচ হয়ে আসা ইরানের কিংবদন্তি নাসের হেজাজি কিন্তু সেই মৌসুমে মোহামেডানের কোচ ও খেলোয়াড় দুই–ই ছিলেন। ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ইরানের হয়ে খেলা হেজাজি পুরো মৌসুমে শুধু আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচেই মাত্র ২১ মিনিট খেলেছিলেন। ’৮৭ সালেই খেলেছিলেন আরেক ইরানি স্ট্রাইকার মোর্তজা। বেশি ম্যাচ খেলেননি, কিন্তু একের পর এক গোল করে তিনি নিজের জাত চিনিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন

মোহামেডানের তারকা বিদেশির তালিকাটা আরও লম্বা। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর দারুণ কিছু খেলোয়াড় খেলে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলে। ’৯২–তে মোহামেডানে এসেছিলেন উজবেকিস্তানের আজামত আবদু রহিমভ ও রাশিয়ার বরিস কুজনেৎসভ। রহিমভ সেই মৌসুমে ১১ ম্যাচ খেলে ১৭ গোল করেছিলেন। পরের মৌসুমে এসেছিলেন ‘হ্যাটট্রিকম্যান’ ওলেগ জিভৎনিকভ। ঢাকার মাঠে প্রথম খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন। হ্যাটট্রিক করেছিলেন একাধিক।

গোল্ডেন বুট হাতে দিয়াবাতে
ছবি: শামসুল হক

আরেক রুশ আন্দ্রে কাজাকভও ছিলেন মোহামেডানের তারকা বিদেশি। নব্বইয়ের দশকে নাইজেরিয়ার লাডি বাবালোলা, বোডে বাবালোলা, জিডে, ম্যাকিনো—এঁদেরও মনে রেখেছেন মোহামেডান সমর্থকেরা।

তাঁরা সবাই খেলে গিয়েছিলেন মোহামেডানের রমরমা সময়ে। তবে মোহামেডানের তারকা বিদেশি ফুটবলারদের তালিকা করলে যে নামটা অবশ্যই নিতে হবে, তিনি মোহামেডানের উজ্জ্বল সময়ের নন। তিনি মোহামেডানকে বাংলাদেশের ফুটবলে শক্তিশালী দল হিসেবেও পাননি। তিনি এমন এক মোহামেডানকে পেয়েছেন, যে মোহামেডান নিজের অতীতের ছায়ামাত্র।

আরও পড়ুন

এই মোহামেডান শিরোপা জেতার জন্য নয়, প্রিমিয়ার লিগে বা যেকোনো ঘরোয়া টুর্নামেন্টে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখতে লড়ে। তিনি মালির সুলেমান দিয়াবাতে। তিন মৌসুম ধরে মোহামেডানের ত্রাণকর্তা তিনি। তিনি ‘মোহামেডানের দিয়াবাতে’ নন, মোহামেডানকেই বরং ‘দিয়াবাতের মোহামেডান’ বললে খুব ভুল হয় না। মোহামেডানের ১০ নম্বর জার্সি পরে তিনি দলকে একাই টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

মোহামেডানের আনন্দ–বেদনার সঙ্গী এখন তিনি। নালজেগার, ভিজেন তাহিরি, এমেকা, রহিমভ, কুজনেৎসভ, জিভৎনিকভ, কাজাকভদের নিয়ে গড়া বিদেশিদের সেই ‘হল অব ফেমে’ সুলেমান দিয়াবাতে নামটি এখন সোনার হরফে খোদাই করা। ফেডারেশন কাপ ফাইনালে তিনি হ্যাটট্রিকসহ করলেন একাই চার গোল। ম্যাচটিকে বানিয়ে ফেললেন দিয়াবাতে বনাম আবাহনী। ১৪ বছর পর একাই জেতালেন ফেডারেশন কাপ। এমনটা আর কোনো বিদেশি করতে পেরেছেন কি না, এ বিতর্ক হতেই পারে।

আরও পড়ুন

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে ১৯৯১ সালে জন্ম দিয়াবাতের। আফ্রিকান ফুটবলে মালির একটা অবস্থান আছে। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ের অবস্থানটা মন্দ নয়—৪৫। মোহামেডানে খেলতে আসার আগে ভিয়েতনামে একাধিক ক্লাবে খেলেছেন দিয়াবাতে। দীর্ঘদিন। ২০১৮ সালে মোহামেডানে খেলতে আসেন। এ দেশের ফুটবলে তিনি যখন পা রাখেন, তখন ক্যাসিনো–কাণ্ডে জর্জরিত সাদাকালো শিবির। ঘরোয়া ফুটবলে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে তারা। মোহামেডানের হয়ে গত চার মৌসুমে ৭০–এর ওপর ম্যাচ খেলেছেন মালির এই ফুটবলার। গোলের পর গোল করেছেন। গোলের সংখ্যা ৫৬। গত মৌসুমে তিনি হয়েছিলেন লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা।

ক্যারিয়ারের সেরা সময়ই কাটাচ্ছেন তিনি মোহামেডানে। ফাইনালে ৪ গোল করে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। কাল ফাইনাল শেষে এক ফাঁকে নিজের একটা সুপ্ত বাসনাও জানিয়ে রেখেছেন—বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান তিনি। মোহামেডানের দিয়াবাতে হতে চান ‘বাংলাদেশের দিয়াবাতে’।

আরও পড়ুন

দিয়াবাতে তৈরি বাংলাদেশের জার্সিতে খেলার জন্য, ‘যদি তারা (বাফুফে) চায়, আমার কোনো আপত্তি নেই। তারা চাইলে আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি। আমি সব সময় তৈরি।’

মোহামেডানের ইতিহাসে ঠাঁই পেয়ে যাওয়া দিয়াবাতে লাল–সবুজ জার্সিটা পরলে কিন্তু দারুণ হয়!