সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ পুরুষ দল একবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ১৯ বছর আগে। তবে সাফ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ কখনো চ্যাম্পিয়নই হতে পারেনি। দেশের নারী ফুটবল এগোলেও সেটা আসলে বয়সভিত্তিক স্তরে।
মেয়েদের জাতীয় দল এখনো নড়বড়ে। গত ৫টি সাফ নারী টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ একবারই ফাইনাল খেলেছে। সেটি ২০১৬ সালে চতুর্থ আসরে, সর্বশেষ ২০১৯ সালে নেপালে বিদায় নিয়েছে সেমিফাইনালে।
সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে এই যখন নড়বড়ে অবস্থা বাংলাদেশের, সেখানে ষষ্ঠ সাফে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখা বাড়াবাড়িই। আগের ৫বারই চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারত এবারও এগিয়ে। বাংলাদেশ বরং রানার্সআপ হওয়া চেষ্টা করে দেখতে পারে। কিন্তু রানার্সআপ হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে নেপাল, যারা গত ৫ বারের ৪ বারই রানার্সআপ।
এবারও খেলা হচ্ছে নেপালে। ৬–১৯ সেপ্টেম্বর কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠেয় টুর্নামেন্টে তাই বাংলাদেশের পক্ষে ফাইনালে খেলাও কঠিন মনে হচ্ছে। ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপের গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালে ওঠা হয়তো কঠিন নয়। তবে সেমিফাইনালেই যে দেখা হয়ে যেতে পারে স্বাগতিক নেপালের সঙ্গে। আর নেপালকে নেপালের মাঠে হারানো হারানো সহজ হবে না।
এমন বাস্তবতা জেনেই এবারের সাফ নিয়ে আশার পরিধিটা বাড়াচ্ছে না বাংলাদেশ। আগামী পরশু কাঠমান্ডু যাওয়ার আগে আজ বাফুফে ভবনে দলের লক্ষ্য নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেন বাংলাদেশ কোচ গোলাম রব্বানী ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। দুজনই অবশ্য ফাইনালে খেলার লক্ষ্য নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানালেন। যে লক্ষ্যে একটা একটা করে ম্যাচ ধরে এগোতে চান।
কোচ গোলাম রব্বানী দলের প্রস্তুতি নিয়েও বিস্তারিত জানালেন, ‘সূচি ঘোষণার পর ৬ সপ্তাহ অনুশীলন করেছি। মেয়েরা মাঠে এবং জিমে কঠিন অনুশীলনের মধ্যে ছিল। প্রতিদিন তাদের যে রুটিন ছিল, সেটা পালন করেছে। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে (গত জুনে) দুটি ম্যাচ আমরা খেলেছিলাম। আমি মনে করি, মেয়েরা এই টুর্নামেন্টের জন্য তৈরি। প্রথম ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ আগামী ৭ জুন, মালদ্বীপের বিপক্ষে। ১০ জুন দ্বিতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ১৩ জুন তৃতীয় ম্যাচ ফেবারিট ভারতের বিপক্ষে। কোচ বলছেন, ‘সেমিতে খেলতে হলে প্রথম দুই ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই ম্যাচে আমরা আপাতত মনোযোগ দিচ্ছি। সেমিফাইনাল নিয়ে তো আমাদের পরিকল্পনা আছেই, সেটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করব। আমরা ফাইনালে খেলতে চাই।’
পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টের জন্য ইউরোপভিত্তিক খেলোয়াড় নিয়ে এসেছে। এ প্রসঙ্গে কোচের কথা, ‘পাকিস্তানকে আমরা দুটি সাফে পেয়েছি, ওদের ইউরোপিয়ান খেলোয়াড় আছে। সেখানে ওদের বিপক্ষে সাবিনাদের খেলার ভালো একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে। দুই সাফেই ওদের বিপক্ষে আমরা ভালো ব্যবধানে জিতেছি। এখানে আশা করি, সাবিনারা তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে খেলবে এবং ভালো করবে।’
অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ২০১৪ সালের সাফে সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি পেয়েছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে তাঁর ২২ গোলের ১৬টিই সাফে। এবারের সাফে কোচের মতো তিনিও চোখ রাখছেন ফাইনালে, ‘সাফ আমাদের জন্য বড় টুর্নামেন্ট। আমরা আশাবাদী। যেহেতু আমরা বড় একটা টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছি, দেশবাসীর কাছে আমার চাওয়া—আমাদের জন্য দোয়া করবেন, যেন আমরা ভালো ফল নিয়ে ফিরতে পারি। আমরা ফাইনাল খেলতে চাই।’
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দলের খেলোয়াড়দের সাবিনা চেনেন। এটা তাঁর জন্য সুবিধা। সেটা মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘অন্য দলের খেলোয়াড়দের ব্যাপারে কোচদের সঙ্গে আমার কথা হয়। আমিও আমার সতীর্থদের বলতে পারব কে কেমন খেলে, অন্যদের শক্তি-দুর্বলতার জায়গা নিয়ে আলোচনা করব। স্ট্রাইকার হিসাবে সবসময় আমার গোলের ক্ষুধা থাকে। আমি চেষ্টা করব আমার জন্য এবং দেশের জন্য সর্বোচ্চটুকু দিয়ে খেলার। ভারতের বিপক্ষে শতভাগের চেয়েও বেশি দিয়ে খেলব আমরা।’