বিশ্বকাপের পর যে কোচদের চাকরি নেই

কাতার বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বিদায়ের পর পদত্যাগ করেন তিতেরয়টার্স

২০১৪ বিশ্বকাপ থেকে শুরু, এরপর ২০১৮ হয়ে ২০২২ বিশ্বকাপেও ফ্রান্সের ডাগআউটে দাঁড়িয়েছেন দিদিয়ের দেশম। সব ঠিকঠাকমতো এগোলে ২০২৬ বিশ্বকাপেও ফরাসিদের কোচের দায়িত্বে থাকবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা ও মেক্সিকোয় হতে যাওয়া সেই বিশ্বকাপে পুরোনো কোচ নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে আর্জেন্টিনাও। কাতারে লিওনেল মেসিদের সামলানো লিওনেল স্কালোনির ওপর ২০২৬ পর্যন্ত ভরসা রাখছে আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ)।

স্কালোনি আর দেশমের বড় মিল—দুজনই বিশ্বকাপ জেতানো কোচ। দুজনই ২০২২ বিশ্বকাপে দলকে তুলেছেন ফাইনালে। সাফল্যই তাঁদের প্রতি কর্তৃপক্ষের আস্থা বাড়ার মূল কারণ। তবে ফলনির্ভর পেশাদারি জগতে বাকিদের অনেকেই অনাস্থার ছুরিতে কাটা পড়েছেন। কাউকে কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ নিজ থেকেই সরে গেছেন। কাতার বিশ্বকাপের পর পদ শূন্য হওয়া এমন কোচের সংখ্যা ১১।

আরও পড়ুন

এর মধ্যে সবচেয়ে বড় নাম তিতে। ব্রাজিলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। ছয় বছর ধরে গোছানো দল নিয়ে কাতারে গিয়েছিলেন শিরোপার স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় কোয়ার্টার ফাইনালেই। ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই পদত্যাগের কথা জানান তিতে। ব্রাজিল এখনো তাঁর জায়গায় কাউকে নিয়োগ দেয়নি।

আরও পড়ুন

বিশ্বকাপের পর কোচিং-অধ্যায়ে ইতি ঘটেছে লুই ফন গালেরও। ৭১ বছর বয়সী এই কোচ আগেও নেদারল্যান্ডস দলের কোচ ছিলেন। মাঝে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কোচিংয়ের বাইরেও ছিলেন। ২০২১ সালে তৃতীয়বার নেদারল্যান্ডস দলের দায়িত্ব নিয়ে কাতারে এসেছিলেন অন্যতম ফেবারিট হিসেবে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হয়।

আরও পড়ুন

ডাচ ফুটবল ফেডারেশন কিছু বলার আগে নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই সাবেক কোচ। অনেকে ধারণা করেছিলেন বয়সের কারণে হয়তো কোচিংই আর করাবেন না। কিন্তু কিছুদিন আগে পর্তুগাল দলের কোচ হতে আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি। বলেছেন পর্তুগাল চাইলে তাদের প্রস্তাব ভেবে দেখবেন। নেদারল্যান্ডস অবশ্য আগের কোচ রোনাল্ড কোমানকে দিয়ে কোচের পদ পূর্ণ করে নিয়েছে।

তিতে আর ফন গালরা তাও দলকে শেষ আট পর্যন্ত নিতে পেরেছেন, শিরোপাপ্রত্যাশী হিসেবে কাতারে যাওয়া কোচদের মধ্যে রবার্তো মার্তিনেজ গ্রুপের গণ্ডিই পার হতে পারেননি। ছয় বছর আগে বেলজিয়ামের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মার্তিনেজ। এডেন হ্যাজার্ড, কেভিন ডি ব্রুইনাদের দলটিকে বলা হচ্ছিল ‘সোনালী প্রজন্ম’।

আরও পড়ুন

এই ‘সোনালী প্রজন্ম’ নিয়ে প্রথম বড় টুর্নামেন্ট ২০১৮ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিলেন মার্তিনেজ। তবে ২০২০ ইউরোয় কোয়ার্টার ফাইনালেই ছিটকে যেতে হয়। এরপর কাতারে আসে মহাবিপর্যয়। গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে মাত্র ১ গোল করে বেলজিয়াম, ৪ পয়েন্ট নিয়ে আটকে যায় প্রথম রাউন্ডেই। এমন বিপর্যয়ের পর নিজ থেকে চাকরি না ছাড়লেই কর্তৃপক্ষই হয়তো মার্তিনেজকে ছেড়ে দিত।

স্পেনের লুইস এনরিকেও হারের দায় নিয়ে চাকরি ছেড়েছেন। এবারের বিশ্বকাপে স্পেন বিদায় নিয়েছে অনেকটা ২০১৮ বিশ্বকাপের আদলে। সে বার রাশিয়ার বিপক্ষে পাসের পসরা সাজালেও ম্যাচ চলে গিয়েছিল টাইব্রেকারে, যেখানে হেরে বিদায় নিতে হয় দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। এবার একই দশা হয়েছে কাতারেও, প্রতিপক্ষ ছিল মরক্কো।

আরও পড়ুন

স্পেনকে দ্বিতীয় রাউন্ডে হারানো মরক্কো কোয়ার্টারে আটকে দেয় পর্তুগালকে। এই দলের কোচ ছিলেন ফার্নান্দো সান্তোস। ২০১৬ ইউরোজয়ী এই কোচ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে বেঞ্চে বসিয়ে বিশ্বকাপে বেশ আলোচিত চরিত্র হয়ে ওঠেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ও কোয়ার্টার ফাইনালে মরক্কোর বিপক্ষে রোনালদোকে শুরুর একাদশে নামাননি।

আরও পড়ুন

প্রতিভাবান তরুণ খেলোয়াড়ে সমৃদ্ধ পর্তুগাল বেশি দূর এগোতে না পারার জন্য সান্তোসকেই দায়ী করেন অনেকে। বিশ্বকাপের পর এমন বদনাম নিয়ে আর দায়িত্বে থাকতে চাননি তিনি।

মেক্সিকোর কোচ জেরার্দো মার্তিনোও ব্যর্থতার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। তাঁর অধীন খেলে গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়ে মেক্সিকো। পোল্যান্ড, আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের গ্রুপে ৪ পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠতে পারেনি দলটি। ১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ায় আর্জেন্টাইন মার্তিনোকে সরিয়ে দেয় মেক্সিকান ফুটবল ফেডারেশন।

দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল ফেডারেশন অবশ্য পল বেন্তোর ওপর খুশিই ছিল। গ্রুপ পর্বে পর্তুগালকে হারিয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে জায়গা করে এশিয়ান জায়ান্টরা। নকআউটে ব্রাজিলের কাছে হেরে বিদায় নিলেও বেন্তোকে দায়িত্বে রাখতে চেয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। তবে ৪ বছর এক দলের সঙ্গে থেকে আর সময় বাড়াতে চাননি এই পর্তুগিজ কোচ।

আরও পড়ুন

পোল্যান্ডকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নেওয়া সেসওয়াফ মিখনিয়েভিৎস অবশ্য নীরবেই দায়িত্ব ছেড়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের কাছে হেরে যাওয়ার পর রক্ষণাত্মক কৌশলের জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। এ দিকে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় পোলিশ ফুটবল ফেডারেশন তাঁর মেয়াদ বাড়ায়নি।

বিশ্বকাপের দশ মাস আগে ঘানার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ওতো আদো। তাঁর অধীন গ্রুপ পর্বে দক্ষিণ কোরিয়াকে হারায় ঘানা। তবে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় রাউন্ডে আর জায়গা করতে পারেনি। বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পর নিজেই দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

আরও পড়ুন

প্রায় একই ঘটনা ঘটেছে ইরানেও। বিশ্বকাপের মাত্র তিন মাস আগে দায়িত্ব নিয়েছিলেন আগেও একই কাজ করে যাওয়া কার্লোস কুইরোজ। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রুপ থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার পর দায়িত্ব চালিয়ে যেতে চাননি তিনি।

কাতারের কোচ ফেলিক্স সানচেজও দায়িত্ব ছাড়েন পারস্পরিক সমঝোতায়। বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে ভালো কিছু করার তাড়না ছিল কাতারের। কাতার অনূর্ধ্ব-১৯ ও অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে কোচিং করানো ফেলিক্সকে দেওয়া হয়েছিল বিশ্বকাপে দল পরিচালনার দায়িত্ব। কিন্তু গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই হেরে যায় কাতার, করে মাত্র একটি গোল।

আরও পড়ুন