যে ৫টি বিষয় চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফল নির্ধারণ করতে পারে

চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে আজ মুখোমুখি পিএসজি–ইন্টার
চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে আজ রাতে মুখোমুখি হবে ইন্টার মিলান ও পিএসজি। রিয়াল মাদ্রিদ–বার্সেলোনা–আর্সেনালের মতো ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের পেছনে ফেলেই শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে পৌঁছেছে এ দুই দল। ফাইনাল পর্যন্ত আসার পথে দুই দলই উপহার দিয়েছে দারুণ কিছু মুহূর্ত। এখন অপেক্ষা শেষ ধাপ পেরোনোর এবং ইউরোপসেরার মুকুট মাথায় পরার। মিউনিখে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বেশ কিছু বিষয়। যার ৫টি নিয়ে এই আয়োজন।

ইন্টারের রক্ষণ, পিএসজির আক্রমণ

ফাইনালে ভাগ্য নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পিএসজির রক্ষণ ও ইন্টারের আক্রমণ। পিএসজি পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত অসাধারণ ফুটবল খেলেছে। ফাইনালে ওঠার পথে ফল বের করে আনার পাশাপাশি তাদের খেলায় নান্দনিকতার ছোঁয়াও ছিল। আক্রমণে ওঠার সময় পিএসজির আক্রমণভাগকে বরাবরই ত্রাস ছড়াতে দেখা গেছে। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৬ ম্যাচে ৩৩ গোল করেছে তারা। ১৪ ম্যাচে ৪৩ গোল করে শীর্ষে থাকা বার্সার ঠিক পরেই পিএসজির অবস্থান।

আরও পড়ুন

অন্য দিকে ইন্টার ১৪ ম্যাচে গোল করেছে ২৬টি। গোল দেওয়ায় পিছিয়ে থাকলেও গোল বাঁচানোয় পিএসজির চেয়ে এগিয়ে ইন্টার। ইতালিয়ান ক্লাবটির ১১ গোল হজম করার বিপরীতে পিএসজি গোল হজম করেছে ১৫টি। ইন্টারের ‘ক্লিন শিট’ ৮ ম্যাচে ও পিএসজির ৬ ম্যাচে।

দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পিএসজি ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে। কিন্তু ইন্টারের নজর ছিল রক্ষণ ঠিক রেখে প্রতি–আক্রমণে জোর দেওয়ায়। নিজ নিজ কৌশলে দুই দলই এখন পর্যন্ত সাফল্য পেয়েছে। এখন ফাইনালে কে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে শ্রেষ্ঠত্বের পতাকা ওড়াতে পারে, সেটাই দেখার অপেক্ষা।  

গোলপোস্টে পিএসজির ত্রাতা দোন্নারুম্মা
রয়টার্স

দুই গোলরক্ষক

ভাগ্য নির্ধারণে বড় নির্ণায়ক হয়ে উঠতে পারে দুই দলের গোলরক্ষকের পারফরম্যান্স। দুই গোলরক্ষকই এবারের আসরে অবিশ্বাস্য কিছু সেভ করেছেন। বার্সেলোনার বিপক্ষে ইন্টারের সেমিফাইনালে তাকালেই গোলরক্ষকের প্রভাবটা স্পষ্ট বোঝা যায়। দুই লেগ মিলিয়ে ইন্টার গোলরক্ষক ইয়ান সমার হজম করেছিলেন ৬ গোল। এরপরও সেমিফাইনালের অন্যতম নায়ক ছিলেন সমারই।

আরও পড়ুন

বার্সার পরাক্রমশালী আক্রমণভাগের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে একের পর এক গোল বাঁচিয়েছেন সমার। দুই লেগ মিলিয়ে এই সুইস গোলরক্ষকের সেভ ১৪টি! একইভাবে ‘সুপারম্যান’–এর ভূমিকায় দেখা গেছে জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মাকেও। সেমিফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে দুই লেগ মিলিয়ে করেছেন মোট ৮টি সেভ, হজম করেছেন মাত্র ১ গোল। আর সব মিলিয়ে হিসাব করলে সমার গোল বাঁচিয়েছেন ৫১টি, দোন্নারুম্মা ৩৭টি। সংখ্যায় তারতম্য থাকলেও দুজনই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অসাধারণ কিছু সেভ উপহার দিয়েছেন।

গোল বাঁচাচ্ছেন সমার
রয়টার্স

অভিজ্ঞতা

বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে অভিজ্ঞতা বরাবরই বড় বিষয়। সেই অভিজ্ঞতা ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে উঠতে পারে। ইন্টারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে। তারা এর আগে তিনবার ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্বের ট্রফি জিতেছে। ১৯৬৩–৬৪ এবং ১৯৬৪–৬৫–এরপর জিতেছে ২০০৯–১০ মৌসুমে।

সর্বশেষ শিরোপা জেতার অবশ্য ১৫ বছর হয়ে গেছে। এরপরও এবারের ফাইনালের আগে এই তিন শিরোপা জয় থেকে অনুপ্ররেণা নিতে পারে তারা। এই দিক থেকে অবশ্য পিএসজি পিছিয়ে। অনেক চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি তারা।

২০১৯–২০ মৌসুমে ফাইনালে খেলাই এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগে পিএসজির সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে অন্য একটি দিকে এগিয়ে তারা। পিএসজি কোচ লুইস এনরিকের খেলোয়াড় এবং কোচ দুই ভূমিকাতেই চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে। ২০১৪–১৫ মৌসুমে বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

ডাগআউটে দুই কোচের লড়াই

এই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন ডাগআউটে দাঁড়ানো দুই কোচ সিমোনে ইনজাগি ও এনরিকে। কৌশলগতভাবে দুজনই ক্ষুরধার কোচ। দলকে কীভাবে বড় ম্যাচে জেতাতে হয় সে অভিজ্ঞতাও ভরপুর আছে তাঁদের। সে সঙ্গে আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে ডাগআউটে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতাও।

সাফল্যে অবশ্য এনরিকে এগিয়ে তবে ইনজাঘিকেও পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। নিজের শক্তিকে দারুণভাবে ব্যবহার করতে পারেন এই ইতালিয়ান। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে স্নায়ুচাপ সামলে কে কীভাবে ম্যাচের গতিপথ দিতে পারবেন, তার ওপরই নির্ভর করছে এই ম্যাচের ভাগ্য।

লুইস এনরিকে এবারই পিএসজিকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতাতে চান
এএফপি

সাম্প্রতিক ছন্দ

সাম্প্রতিক ছন্দও ফাইনালকে প্রভাবিত করতে পারে। এ বিবেচনায় ইন্টারের চেয়ে পিএসজি সুবিধাজনক অবস্থানে। ইন্টার সম্প্রতি বড় দুটি ধাক্কা খেয়েছে। ইতালিয়ান কাপের সেমিফাইনালে হেরেছে এসি মিলানের কাছে। ইতালিয়ান লিগ সিরি ‘আ’তে শেষ দিনে শিরোপা হাতছাড়া করেছে নাপোলির কাছে। এ দুই ব্যর্থতা ফাইনালে কিছুটা হলেও মানসিকভাবে পিছিয়ে রাখবে সান সিরোর দলটিকে। অন্য দিকে পিএসজি লিগ নিশ্চিত করেছে বেশ আগেই। সর্বশেষ ম্যাচে তারা জিতেছে ফরাসি কাপের শিরোপা। এখন তারা ‘ট্রেবল’ জয়ের জন্য উজ্জীবিত হয়েই মাঠে নামবে। ফলে সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তাদের ইন্টারের কিছুটা এগিয়ে রাখবে।

ইন্টার কোচ সিমোন ইনজাঘি
এক্স

তবে ফল নির্ধারক যত কারণই থাকুক, চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের মতো ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয় মুহূর্তের পারফরম্যান্স। একটি দুর্দান্ত মুহূর্তই বদলে দিতে পারে সব সমীকরণ। এবারের ফাইনালেও সব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠতে পারে তেমন কোনো জাদুকরি মুহূর্ত।