২০২৬ বিশ্বকাপে কি মৃত্যুকূপ বলে কিছু আছে

ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত হয় গতকাল রাতেএএফপি।

যেকোনো বড় টুর্নামেন্টের পরই প্রশ্নটি ওঠে। বিশ্বকাপ ফুটবল হলে তো কথাই নেই। গতকাল যেমন ওয়াশিংটন ডিসিতে ড্রয়ের পরপরই শুরু হয় হিসাব-নিকাশ আর চুলচেরা বিশ্লেষণ। এবার বিশ্বকাপে কোনটি ‘মৃত্যুকূপ’?

মোট ১২টি গ্রুপ ভালোভাবে খেয়াল করলে আসলে সরাসরি কোনো গ্রুপকেই ‘মৃত্যুকূপ’ বলা যায় না। প্রতিটি গ্রুপে আছে চারটি করে দল। এর মধ্যে কোনো গ্রুপেই চারটি দলকে প্রায় সমান শক্তিশালী বলার উপায় নেই। তবে শক্তিতে একটু কম-বেশি হলেও দুটি গ্রুপে অন্তত তিনটি করে দল আছে, যারা যে কাউকে হারানোর সামর্থ্য রাখে। সেই গ্রুপ দুটি হলো ‘আই’ এবং ‘এল’।

তবে এটাও মনে করিয়ে দিতে হয়, প্রতিটি গ্রুপ থেকে পরবর্তী ধাপে উঠবে শীর্ষ দুই দল। তৃতীয় স্থানীয় দলেরও আশা থাকবে। ৪৮ দলের এই বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থানে থাকা সেরা ৮টি দল যোগ দেবে শেষ ৩২ দলের রাউন্ডে। সে কারণে একটি গ্রুপে তিনটি দল সমান শক্তিশালী হলেও সরাসরি সেটাকে মৃত্যুকূপ বলা যাচ্ছে না।

তাতে অবশ্য গ্রুপ পর্বে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে ভাটা পড়বে না। কারণ, টুর্নামেন্টটি বিশ্বকাপ—যেখানে সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই এবং সামান্যতম ভুলেও যে কেউ বাদ পড়তে পারেন।

ইংল্যান্ডের কোচ টমাস টুখেল। গতকাল বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানে
এএফপি

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের চোখে অন্তত কাগজে-কলমে ‘এল’ গ্রুপ ‘মৃত্যুকূপ’—এই গ্রুপের চারটি দল ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, ঘানা ও পানামা। তার মধ্যে গ্রুপের শীর্ষ দুটি স্থান দখলের লড়াইটা হবে মূলত প্রথম তিনটি দলের মধ্যে—ইংল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও ঘানা। বর্তমানে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ঘানা ৭২তম দল বলে তাদের ছোট করে দেখাটা বড় ভুল হতে পারে।

চারবার আফ্রিকান কাপ অব নেশনসজয়ী ঘানার বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই ইউরোপকেন্দ্রিক ফুটবল খেলেন। আর বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব পেরোনোর অভিজ্ঞতাও আছে দলটির। ২০১০ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলেছে। এর আগে একবারই বিশ্বকাপ (২০১৮) খেলা পানামা এই গ্রুপে সবচেয়ে দুর্বল দল। যদিও ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে তারা ঘানার ওপরে (৩০তম)।

আরও পড়ুন

ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়াকে নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা আছে। হ্যারি কেইন ও জুড বেলিংহামদের নিয়ে কোচ টমাস টুখেলের বর্তমান দলটিও তারকাখচিত। ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১০তম ক্রোয়েশিয়া ২০১৮ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলেছে। সে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করেছিল ক্রোয়েশিয়া। দলে আছেন লুকা মদরিচের মতো চিরসবুজ কিংবদন্তি এবং ইভান পেরিসিচ, ইওস্কো গাভারদিওল ও আন্দ্রে ক্রামারিকের মতো খেলোয়াড়েরা।

ইংল্যান্ড এবারের বিশ্বকাপ শুরুও করবে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয়ে—যেটা পছন্দ হয়নি ইংল্যান্ড কোচ টুখেলের। ড্রয়ের পর ক্রোয়েশিয়ার কোচ জ্লাতকো দালিচ বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ হওয়ায় (ইংল্যান্ড কোচ টমাস টুখেল) খুশি হতে পারেননি। তিনি আমাকে বলেছেন, আমাদের প্রথম ম্যাচ নয় কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা উচিত। কিন্তু এটাই বাস্তবতা—যেটা তাঁর কিংবা আমার জন্য আনন্দদায়ক নয়। সবাই আমাদের এড়াতে চায় কারণ সর্বশেষ দুই বিশ্বকাপে আমরা অলৌকিক কিছু করেছি।’

ড্রয়ের পর ইংল্যান্ড কোচ টুখেল বলেন, ‘খুব জটিল একটা গ্রুপ, কঠিন গ্রুপ।’ তবে টুখেল এ কথাও বলেছেন, ‘আমরা দুশ্চিন্তা করছি না। প্রতিপক্ষ কিংবা কী ঘটতে পারে, সেসব নিয়েও ভাবছি না। আমরা যা করতে পারি মনোযোগ শুধু সেদিকেই।’

আরও পড়ুন

‘আই’ গ্রুপের চারটি দল—ফ্রান্স, সেনেগাল, নরওয়ে ও ফিফা প্লে–অফ ২–জয়ী দল (ইরাক/বলিভিয়া/সুরিনাম)। প্লে–অফজয়ী দলকে হিসাবের বাইরে রাখতে পারেন, তবে ভুলে গেলে চলবে না, বিশ্বকাপে যেকোনো কিছুই ঘটতে পারে।

তবু কাগজে-কলমে এই গ্রুপে ফ্রান্স, সেনেগাল ও নরওয়েই বেশি শক্তিশালী। তার মধ্যে দুবার বিশ্বকাপজয়ী ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় ফ্রান্সই বেশি শক্তিশালী। কিলিয়ান এমবাপ্পে ও উসমান দেম্বেলেদের নিয়ে দিদিয়ের দেশমের দল তারকাখচিতও। একবার আফ্রিকান কাপ অব নেশনসজয়ী সেনেগাল গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সকে বিদায় করে ২০০২ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেও খেলেছে। সেনেগাল ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ১৯তম।

লড়াই হবে হলান্ড ও এমবাপ্পের মধ্যে
প্রথম আলো গ্রাফিকস

তবে এই গ্রুপের মূল আকর্ষণ হবে ফ্রান্স-নরওয়ে ম্যাচ—সেটা আসলে বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা দুই ফুটবলার এমবাপ্পে ও আর্লিং হলান্ডের লড়াই। নরওয়ে ফিফা র‍্যাঙ্কিংয়ে ২৯তম দল আর ইউরোপের বাছাইপর্বে ‘আই’ গ্রুপ থেকে শীর্ষ স্থানসহ ৮ ম্যাচে ৩৭ গোল করেছে দলটি। নরওয়ের কোচ স্টেল সোলবাক্কেন ড্রয়ের পর বলেন, ‘আমরা জানি, ফ্রান্স ও সেনেগাল খুবই ভালো দল। এখানে অনেক ভালো দল আছে এবং আমরা সম্ভবত আরেকটু ভাগ্যের পরশ পেতে পারতাম।’