আনচেলত্তির যে কীর্তি নেই অন্য কোনো কোচের

এই প্রথম লা লিগা জিতলেন কার্লো আনচেলত্তিরয়টার্স

এটাই আসলে বাকি ছিল তাঁর। প্রথম দফা যখন রিয়াল মাদ্রিদের কোচ ছিলেন, কার্লো আনচেলত্তির হাত ধরেই এসেছিল ক্লাবের অনেক আরাধ্য দশম চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফি—লা দেসিমা। জিতেছিলেন কোপা দেল রে, উয়েফা সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপও। কিন্তু লা লিগা না জিততে পারার খেসারত দিয়ে ২০১৩ সালে রিয়ালের কোচের দায়িত্ব পাওয়া আনচেলত্তি বরখাস্ত হন ২০১৫ সালে।

লা লিগার ট্রফি হাতে আনচেলত্তি
টুইটার

তারপর গত বছর জুনে আবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ডাগ আউটে ফেরা। আগেরবার যেটা পারেননি, সেটাই করে দেখালেন এবার। চার ম্যাচ হাতে রেখে এই মৌসুমে রিয়াল মাদ্রিদ জিতল লা লিগার ট্রফি। আর তাতেই কোচ হিসেবে এক অনন্য কীর্তিও হয়ে গেল আনচেলত্তির। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ ফুটবল লিগের সবগুলোতে কোচিং করিয়েছেন তিনি, সবগুলোতেই জিতেছেন লিগের ট্রফি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই পাঁচ দেশেই মাত্র একবার করে লিগ জিতেছেন ইতালিয়ান এই কোচ। কোথাও দ্বিতীয়বার জেতা হয়নি।

বিখ্যাত কোচদের মধ্যে ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতাই আসলে নেই কারও। এর মধ্যে তিনটি দেশে কোচিং করিয়ে সবগুলোতে জেতার অভিজ্ঞতা আছে পেপ গার্দিওলা ও জোসে মরিনিওর। গার্দিওলা লা লিগা, বুন্দেসলিগার পর জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগও। মরিনিও জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ, সিরি আ ও লা লিগা। এর আগে অবশ্য পোর্তোকে পর্তুগিজ লিগও জিতিয়েছেন মরিনিও। তবে পর্তুগালের লিগকে ঠিক এখন আর ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের মধ্যে ধরা হয় না।

বর্ণাঢ্য কোচিং ক্যারিয়ারের প্রথম লিগ ট্রফিটা আনচেলত্তি জিতেছিলেন ইতালিতে, এসি মিলানের হয়ে। খেলোয়াড়ি জীবনেও মিলানের হয়ে দুবার লিগ জেতার অভিজ্ঞতা ছিল তাঁর। কোচ হয়ে নিজের ক্লাবে ফেরার পর তাঁকে ২০০৩-০৪ মৌসুমে আবার সেই স্বাদ দিয়েছেন আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোরা।

২০০৯ সালে মিলান ছেড়ে চলে গেলেন ইংল্যান্ডে, দায়িত্ব নিলেন চেলসির। প্রথম মৌসুমেই ক্লাবটিকে এনে দিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি। সেটাও কী দারুণভাবে! ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১ পয়েন্টে হারিয়ে, লিগে ১০৩ গোল করে। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে আনচেলত্তির চেলসিই ছিল মৌসুমে ১০০ গোল করা প্রথম দল।

কিন্তু চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে না পারায় ২০১১ সালে চেলসি থেকেও বরখাস্ত হলেন আনচেলত্তি। ওই বছরই ডিসেম্বরে দায়িত্ব পেলেন পিএসজির। সেই মৌসুমে আর কিছু করতে পারেননি। তবে পরের মৌসুমেই (২০১২-১৩) তাঁর হাত ধরে পিএসজি পেল ফরাসি লিগ আ-র ট্রফি।

পিএসজির দায়িত্বটা নিজেই ছেড়েছিলেন আনচেলত্তি। কারণ রিয়াল মাদ্রিদ থেকে আসা প্রস্তাব। ২০১৩ সালের জুনে পাড়ি জমালেন মাদ্রিদে। তারপর তো সেই লা দেসিমার গল্প। কিন্তু লিগ জিততে না পারায় সেই ২০১৫ সালের মে মাসে রিয়াল সভাপতি ঘোষণা দিলেন, ‘আনচেলত্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমাকে।’

ওদিকে বায়ার্ন মিউনিখে তখন পেপ গার্দিওলার সময় চলছে। কিন্তু টানা তিনটি লিগ জিতলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে ব্যর্থতায় বায়ার্ন সিদ্ধান্ত নেয় গার্দিওলাকে বিদায় দেওয়ার, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় আনচেলত্তিকে। চ্যাম্পিয়নস লিগ বায়ার্নকে আনচেলত্তিও এনে দিতে পারেননি, তবে নিয়ম মেনে লিগ ঠিকই জিতেছেন। কিন্তু তাতে বায়ার্নে তাঁর স্থায়ীত্ব বাড়ল না। ২০১৭ সালেই বরখাস্ত হয়ে আনচেলত্তি ফিরে গেলেন ইতালিতে, নাপোলির দায়িত্ব নিয়ে।

রিয়ালের শিরোপা উৎসবের মধ্যমণি আনচেলত্তি
টুইটার

নাপোলি থেকে এভারটন—এই দুই ক্লাবে অবশ্য কিছু জেতা হয়নি আনচেলত্তির। গত বছর জুনে আবার ডাক পেলেন মাদ্রিদ থেকে। বিলবাওকে হারিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতেছিলেন জানুয়ারিতেই, এবার পেয়ে গেলেন লা লিগার ট্রফিও। সামনে আরও একটা চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার হাতছানি। তাঁর দল ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগ খেলার অপেক্ষায়। বার্নাব্যুও নিশ্চয়ই অপেক্ষায় আনচেলত্তিকে ঘিরে আরেকটি শিরোপা-উৎসবের।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন