বায়ার্নে মনটাই মরে গেছে লেভানডফস্কির

বায়ার্নের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেভানডফস্কিফাইল ছবি

ভুবন ভ্রমণ শেষ রবার্ট লেভানডফস্কির। সুযোগ পেলেই পোলিশ স্ট্রাইকার মুখ খুলছেন, আকুতি জানাচ্ছেন বার্সেলোনা পানে, ‘আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ...’ কিন্তু দ্বার যে রুদ্ধ!

বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়তে চান পোলিশ স্ট্রাইকার। আট বছর ধরে জার্মানদের গোলের পর গোল উপহার দিয়ে মনে ক্লান্তি ধরে গেছে। মনের গহিনে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। মনে হচ্ছে, তাঁর ভেতর কিছু একটা মরে গেছে। লেভা এই শূন্যতা পূরণ করতে চান। জীবনে পেতে চান নতুন কিছুর স্বাদ। সে কারণে আরও একবার বায়ার্ন মিউনিখকে বলেছেন, ‘আমাকে “ছেড়ে দাও।”’

আরও পড়ুন
দুই সাংবাদিকের সঙ্গে লেভানডফস্কি
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

এবারের দলবদলের বাজারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকার কথা ছিল কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে। জুন মাস শেষ হলেই পিএসজির সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যেত, তখন নতুন কোনো ক্লাবে যোগ দিতে পারতেন সময়ের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত এই খেলোয়াড়। কিন্তু মে মাসেই চুক্তি নবায়ন করে দলবদলের বাজারের উত্তাপে পানি ঢেলে দিয়েছেন এমবাপ্পে। কিন্তু নতুন চমক হয়ে হাজির লেভানডফস্কি। মৌসুম শেষ হতেই বারবার জানাচ্ছেন, অনেক হয়েছে, এবার বায়ার্ন মিউনিখ ছাড়তে চান।

গত ৩০ মে লেভানডফস্কি বলে দিয়েছেন, বায়ার্নে তাঁর গল্পটা শেষ। কিছুদিন ধরে যা চলছে, তাতে আর ক্লাবে থাকার কোনো সম্ভাবনা দেখেন না।’ এর প্রেক্ষিতে বায়ার্নের পক্ষ থেকে ক্লাব সভাপতি হার্বার্ট হেইনার এর কড়া জবাব দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কাল ও’নেট অনলাইনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লেভানডফস্কি।

আরও পড়ুন
লেভানডফস্কি
ফাইল ছবি: রয়টার্স

স্বদেশি দুই সাংবাদিক কুবা ভোয়েভোস্কি ও পিওতর কেদজিয়েরস্কির সঙ্গে কথোপকথনে বলেছেন, ‘আমার ভেতর কিছু একটা মরে গেছে এবং এটা আর ঠিক হবে না। জীবনে আমার আরও আবেগ দরকার। আমি আমার বন্ধুদের ছেড়ে যাচ্ছি, যাঁদের অনেকের সঙ্গেই গত আট বছর কাটিয়েছি, প্রতিদিন দেখা হয়েছে, সময় কাটিয়েছি। এগুলো সত্যিকারের বন্ধুত্ব।’

বায়ার্নে নিজের চুক্তি নিয়ে সন্তুষ্ট নন লেভানডফস্কি। ৩৪ বছর বয়সী লেভানডফস্কি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি চাইছেন। টানা তিন মৌসুম ইউরোপের সর্বোচ্চ স্কোরার চাইছিলেন সম্ভাব্য শেষ চুক্তিতে বেতন বাড়িয়ে নিতে, চুক্তির মেয়াদও তিন বছর চাইছিলেন। কিন্তু হিসাবি বায়ার্ন মাত্র এক বছরের চুক্তি বাড়াতে চায়। বেতনও স্ট্রাইকারের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দিতে রাজি নয় তারা। ওদিকে বার্সেলোনা লেভানডফস্কির ইচ্ছা পূরণ করতে চায়।

আরও পড়ুন
লেভানডফস্কি
ফাইল ছবি: এএফপি

বায়ার্নে দুর্দান্ত এক ক্যারিয়ার কাটিয়েও ব্যালন ডি’ অরের দেখা না পেয়ে লেভানডফস্কির ধারণা হয়েছে, এই পুরস্কার পেতে রিয়াল মাদ্রিদ বা বার্সেলোনার মতো ক্লাবে খেলতে হবে তাঁকে। একসময় রিয়ালে যেতে আগ্রহী হলেও এখন আর সেটা সম্ভব হচ্ছে না জেনে বার্সেলোনার দিকেই ঝুঁকেছেন। কিন্তু মৌসুমে ৫০ গোলের নিশ্চয়তা ছাড়তে রাজি নয় বায়ার্ন। অন্তত বার্সেলোনা দলবদলের জন্য যে অর্থ দিতে চাচ্ছে, সে অর্থে নয়।

এ কারণে বায়ার্ন মিউনিখ বার্সেলোনার সঙ্গে জোর দর-কষাকষি করছে। ক্লাবের এ আচরণ ভালো লাগছে না লেভানডফস্কির, ‘আপনি যখন একটি ক্লাবে এত বছর থাকেন, যাদের জন্য সব সময় প্রস্তুত ছিলেন, চোট ও ব্যথা সহ্য করে সেরাটাই দিয়েছেন; তখন দুই পক্ষ মিলে সেরা সমাধান বের করাই ভালো। এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। এটার কোনো মানে হয় না। এত বছর পর তো নয়ই। দুই বা চার বছর ধরে এখানে খেললেও বুঝতাম, কিন্তু দীর্ঘ সাফল্যমণ্ডিত যাত্রার পর এবং আমার দিক থেকে সব ধরনের সহযোগিতার পর (এটা মানা যায় না)। ব্যবসায়ীর চেয়ে আনুগত্য ও সম্মান সম্ভবত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

আরও পড়ুন
বায়ার্ন তারকা লেভানডফস্কি
ফাইল ছবি:: রয়টার্স

বায়ার্ন অবশ্য নতজানু হতে চায় না। দরকার হলে লেভানডফস্কিকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে চুক্তির বাকি এক বছর ক্লাবে খেলতে বাধ্য করবে, এমন কথাও বলা হচ্ছে জার্মান পরাশক্তিদের পক্ষ থেকে। লেভানডফস্কি এর কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না, ‘কেন করবে? এমন কিছু হতে পারে জানলে কোন ধরনের খেলোয়াড় বায়ার্নে আসতে চাইবেন? তাহলে আর সম্মান আর আনুগত্য রইল কোথায়? আমি সব সময় প্রস্তুত ছিলাম, আটটি দুর্দান্ত বছর কাটিয়েছি, দারুণ সব মানুষের সঙ্গে মিশেছি এবং সেভাবেই তাদের মনে রাখতে চাই।’

বায়ার্ন ছেড়ে কোথায় যেতে চান, সে ব্যাপারে পরিষ্কার করে কিছু আর বলেননি। কিন্তু সাংবাদিক ভোয়েভোস্কি নিজের পোস্টে বার্সেলোনাকে ট্যাগ করে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন সম্ভাব্য গন্তব্যের কথা। ওই যে মনপ্রাণ এখন দিয়েছেন বার্সেলোনায়, কিন্তু দ্বার কি খুলবে?

আরও পড়ুন