মেহেদী-পারভেজদের বাদ পড়া, নাজমুলের দলে আসার ‘কারণ’

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি মেহেদী (বাঁয়ে) ও পারভেজের (ডানে), ফিরেছেন নাজমুলফাইল ছবি

মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়ার খবরে আড়ালে চলে গেছে বাকি সব। নইলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ঘোষিত বাংলাদেশ দলে চমক ছিল আরও। মাহমুদউল্লাহ দলে থাকলে হয়তো সেসব নিয়েই বেশি আলোচনা হতো। যেমন মেহেদী হাসান, পারভেজ হোসেন, এনামুল হক, মোহাম্মদ নাঈমদের বাদ পড়া কিংবা নাজমুল হোসেনের দলে আসা।

এক বছরের মধ্যে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ যাচ্ছে সাতটি পরিবর্তন নিয়ে। সর্বশেষ এশিয়া কাপের দলেও এসেছে ছয়টি পরিবর্তন। লিটন দাস, ইয়াসির আলী, নুরুল হাসান ও হাসান মাহমুদ—চারজনই দলে ফিরেছেন চোট কাটিয়ে। মুশফিকুর রহিম অবসর নিয়েছেন, আর মাহমুদউল্লাহর বাদ পড়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে অন্য জায়গায়

বাকিরা কেন ও কীভাবে বাদ পড়লেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দুই নির্বাচক—মিনহাজুল আবেদীন ও হাবিবুল বাশার এবং টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামের সংবাদ সম্মেলনে যার কিছু উত্তর পাওয়া গেছে, কিছু যায়নি।

এনামুল হক

সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর দিয়ে জাতীয় দলে ফেরেন এই ওপেনার। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের রেকর্ড গড়া এক মৌসুমের পরই জাতীয় দলে ডাক পান, যে লিগ ছিল লিস্ট ‘এ’ সংস্করণে। তবে প্রথমে তাঁকে খেলানো হয় টেস্টে, এরপর খেলেন টি-টোয়েন্টিতে। ওয়ানডে খেলানো হয় জিম্বাবুয়ে সফরে এসে, সেখানে আবার টি-টোয়েন্টি খেলেননি।

এশিয়া কাপে প্রাথমিকভাবে ঘোষিত দলে ছিলেন দুই স্বীকৃত ওপেনারের একজন হিসেবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে নেমে ১৪ বল খেলে করেন ৫ রান। দ্বিতীয় ম্যাচে বাদ পড়েন, এবার বাদ পড়লেন বিশ্বকাপের দল থেকেও।

৭৬ রান করে আউট হন এনামুল
ছবি: টুইটার

মোহাম্মদ নাঈম

এশিয়া কাপের দলে ছিলেন না শুরুতে। নুরুল হাসান খেলতে পারবেন না নিশ্চিত হওয়ার পর ডেকে পাঠানো হয় এশিয়া কাপের আগে গত মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ খেলা নাঈমকে। এশিয়া কাপের আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ‘এ’ দলের সফরে এক দিনের ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন এ বাঁহাতি—তাঁকে ডেকে পাঠানোর পেছনে কারণ ছিল মূলত সেটিই।

এনামুলের মতো নাঈমও অবশ্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে ভালো করতে পারেননি, ৮ বলে ৬ রান করেই আউট হন। লিটন দাস ফেরার পর নাঈমের বাদ পড়াটাও তাই অনুমিতই ছিল। অবশ্য মাঝে কেন অন্য এক সংস্করণে রান পাওয়ার পর টি-টোয়েন্টিতে ফেরানো হয়েছিল, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

সর্বশেষ দুটি সিরিজে টি-টোয়েন্টি দলে ছিলেন না নাঈম
শামসুল হক

পারভেজ হোসেন

জিম্বাবুয়ে সফরের শেষ টি-টোয়েন্টিতে মুনিম শাহরিয়ারকে বাদ দিয়ে অভিষেক করানো হয়েছিল পারভেজ হোসেনকে। এই বাঁহাতি সেদিন ৬ বল খেলে করেছিলেন ২ রান।

এরপর এশিয়া কাপের দলেও জায়গা ধরে রেখেছিলেন ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য এই ব্যাটসম্যান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওপেনিংয়ে নামানো হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাব্বির রহমানকে, তবে খেলানো হয়নি পারভেজকে। যার অর্থ, কোনো ম্যাচ না খেলিয়েই বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেওয়া হলো তাঁকে।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ৭৬তম ক্রিকেটার হচ্ছেন পারভেজ হোসেন
বিসিবি

পারভেজকে নিয়ে দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামের বিশ্লেষণ, ‘আমার তার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা হয়েছে। সে দারুণ সম্ভাবনাময় একজন। লেগ সাইডে আধিপত্য বিস্তার করে খেলতে পারে। আমরা আসলে একটা জিনিস খুব ভালো করেছি, যাদের দলে নেওয়া হয়েছে বা বাদ দেওয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এটি গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজটি ভালোভাবে করেছি আমরা।’

ম্যাচই খেলেননি, তাহলে পারভেজকে কোথায় দেখলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রীরাম বলেছেন, ‘আমরা নেটে যথেষ্ট (ব্যাটিং) দেখেছি তাঁর। আমার চোখ ভালো। সম্ভবত আমি তাদের (ক্রিকেটারদের) পড়তে পারি।’

বাইরে বসে থেকে, নেটে ব্যাটিং করেই তাই বাদ পড়েছেন পারভেজ—এমন বলাই যায়।

আরও পড়ুন

নাজমুল হোসেন

পারভেজকে না খেলিয়ে যেমন বাদ দেওয়া হয়েছে, তেমনি ফর্মের কারণে মাঝে এশিয়া কাপে বাদ পড়া নাজমুল আবার ফিরেছেন দলে। অথচ এর মাঝে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচই খেলেননি তিনি।

নাজমুলকে দলে নেওয়ার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেছেন, তাঁকে ব্যাকআপ ওপেনার হিসেবে ভাবা হচ্ছে। যদিও নাজমুল সর্বশেষ তিন ম্যাচেই খেলেছেন তিন বা এর নিচে। নাজমুলকে নেওয়ার ব্যাপারে ‘কেউ দ্বিমত করেনি’ বলেও জানিয়েছেন মিনহাজুল। নাজমুলের বিপিএলে পারফরম্যান্সও দেখতে বলেছেন তিনি। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ হওয়া বিপিএলের সর্বশেষ আসরে নিষ্প্রভই ছিলেন নাজমুল। ১১ ম্যাচে ২০.৮৮ গড় ও ৯১.৭০ স্ট্রাইক রেট তো সেটাই বলে।

দলে ফিরেছেন নাজমুল হোসেন
প্রথম আলো

পরে শ্রীরাম নাজমুলকে দলে নেওয়া প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘সে খুব ভালো খেলোয়াড়। আমি যতটুকু দেখেছি বা কথা বলেছি, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার মতো টেম্পারামেন্ট আছে তার। বাউন্সি উইকেটে খেলার সামর্থ্য আছে। আমরা যে “ইমপ্যাক্ট” খুঁজছি, সেটির অস্ত্র আছে তার কাছে।’

সেই ‘ইমপ্যাক্ট’ বলতে কী বুঝিয়েছেন, সেটিরও একটা ‘অদ্ভুত’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন শ্রীরাম, ‘অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে মাঝেমধ্যে নতুন বলে প্রথম দুই ওভার খেলে দেওয়াটাও ইমপ্যাক্ট। যদি (ওই সময়ে) আমরা ১৫ রানে উইকেট না হারাই, তাহলে আপনি পাওয়ারপ্লেতে ভালো শুরু পেলেন। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে “আর্লি সামার’-এ কন্ডিশন চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।’

আরও পড়ুন

মেহেদী হাসান

২০১৮ সালে অভিষেকের পর বিরতি পড়েছিল, ফিরেছিলেন ২০২০ সালের শুরুতে। সেই থেকে সর্বশেষ এশিয়া কাপ পর্যন্ত বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত মুখ ছিলেন এই অলরাউন্ডার। এই সময়ের মধ্যে আফিফ হোসেনের ৪০ ম্যাচের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৭টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এ সময়ে বাংলাদেশের হয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটও তাঁর।

এরপরও বিশ্বকাপের দলে জায়গা হয়নি মেহেদীর। তাঁর বদলে আস্থা রাখা হয়েছে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদের ওপর, যিনি এশিয়া কাপে কোনো ম্যাচই খেলেননি।

মেহেদী হাসানের উইকেট উদ্‌যাপনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ
ছবি: এএফপি

মেহেদীকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে শ্রীরাম বলেছেন, ‘আমাদের ১৫ জনকে বেছে নিতে হবে। মেহেদীকে আমার ভালো লাগে, দলে দারুণ এক চরিত্র, প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। তবে আমরা স্পিন সহায়ক কন্ডিশনে খেলব না। আমাদের বাড়তি একজন পেসার নিতে হতো। মেহেদী ও নাসুম খুব কাছাকাছি অবস্থানে ছিল। নাসুমকে নিয়েছি। কারণ, ভারত ও পাকিস্তানের শীর্ষ তিন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে তার ম্যাচ-আপ ভালো। আমাদের আরও অফ স্পিনার ছিল, তাই বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে (নাসুম) এগিয়ে গেছে। মেহেদীর বাদ পড়া দুর্ভাগ্যজনক। এশিয়াতে খেলা হলে প্রতিটি দলেই থাকবে সে।’

আরও পড়ুন